ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাসুলিয়ায় আড্ডায় মেতেছেন শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:৪৪
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাসুলিয়ায় আড্ডায় মেতেছেন শিক্ষার্থীরা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের বাসাইলের বিনোদনের স্থান বাসুলিয়া। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অবসর সময় কাটান, নিশ্বাস নেন মুক্ত বাতাসে। এই বাসুলিয়া ঘিরে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অবাধ ঘোরাফেরার চিত্র উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বাসুলিয়ার বিনোদন স্পটে আসাদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। ক্লাসে না গিয়ে ওই স্পটে শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মগ্ন হচ্ছে। প্রকাশ্যে ধূমপান ছাড়াও জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন আপত্তিকর ঘটনায়। যা দেখে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।


বাসুলিয়ায় ঘুরে দেখা যায়, এখানে আগত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুল ও কলেজ চলাকালীন সময়ে ইউনিফর্ম পরেই ঘুরছেন তারা। মেতে উঠছে অবাঞ্চিত আড্ডায়। আবার কেউ কেউ ইউনিফর্ম পরিবর্তন করে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাসুলিয়ায়। এতে অভিভাবকরা কোনো ভাবেই বুঝতে পারছে না তাদের সন্তান স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিচ্ছে।


শিক্ষার্থীদের এই অবাধ মেলামেশায় সামাজিক অবক্ষয় বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতির জন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দায়ী করছেন বিভিন্ন মহল। এমনকি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এ অবস্থা নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক ও প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।


সরেজমিনে দেখা যায়, বাসুলিয়ায় ক্লাস চলাকালে ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের অবাধ মেলামেশার চিত্র দেখে বিব্রত পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে দর্শনার্থীরা। এমনকি অনেক ইঞ্জিন চালিত নৌকার মালিকরা এই আপত্তিকর মেলামেশার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


রবিবার বেলা ১১ টা ও দুপুর ১২ টার দিকে ক্লাস চলাকালীন সময়ে বাসুলিয়ায় দেখা মেলে দুটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীকে। চোখে পড়ে ওই শিক্ষার্থীদের অবাধ মেলামেশার চিত্র। জানা যায়, তাদের দু'জনেরই বাড়ি বাসাইল উপজেলায়।


শুধু ওই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নয়, দেখা গেছে মহিলা কলেজের ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন ছাত্রীকেও। এছাড়া আরও কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে।


বাসুলিয়ায় ঘুরে এসে একাধিক ব্যক্তি জানান, সকালের দিকটায় যখন স্কুল-কলেজ খোলা থাকে তখন এ জায়গাগুলোতে ইউনিফর্ম পরা উঠতি বয়সের অসংখ্য ছেলে-মেয়ে ঘোরাফেরা করে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে একান্ত সময় কাটাতে নিরাপদ স্থান হিসেবে তারা এই স্থান বেছে নেয়। অনেক সময় তাদেরকে অশালীন অবস্থায়ও দেখা যায়।


বাসুলিয়ায় ঘুরতে আসা সাদেক মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, অভিভাবকদের নিয়মিত খোঁজ রাখা, বাসুলিয়ায় স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়লে এসব স্থানে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কমে আসবে।


উপজেলার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নতুন পানি আসায় বাসুলিয়া এসেছি, তাই কলেজের ফাঁকে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে এসেছি।


এ বিষয়ে সচেতন মহল মনে করেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের খোঁজ-খবর নেওয়া। সন্তানরা প্রতিদিন স্কুল-কলেজে যাচ্ছে কি না? বা সবগুলো ক্লাসে অংশ নিচ্ছে কি না প্রতিদিন খোঁজ নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ক্লাস চলাকালে বিনোদন ও ভ্রমণের স্থানগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা।


নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষক জানান, প্রত্যেক অভিভাবককে খোঁজ রাখতে হবে, তাদের ছেলে-মেয়ে, স্কুল-কলেজে গেল কি না? এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে শিক্ষার্থীদের উপর নজরদারির জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে।


তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিত হলে বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে নোটিশ করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের কিছু করণীয় আছে বলে আমি মনে করি। যেমন প্রশাসন মাইকিং করতে পারে, কোনো শিক্ষার্থী ইউনিফর্ম পরে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ওইসব স্থানে অবস্থান করতে পারবে না। করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তাহলে এ অবস্থা কিছুটা কমতে পারে।


শিক্ষার্থীদের বাসুলিয়া ঘুরতে আসা বিষয়ে শিক্ষাবিদরা বলেন, তাদের নৈতিকার অবক্ষয় হচ্ছে, পড়ালেখায় গুরুত্ব দিচ্ছে না, এটি সামাজিক অবক্ষয়ের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। লেখাপড়ার মূলস্রোত থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে। যার ফলে মাদকাসক্ত হচ্ছে। এমনকি তারা সন্ত্রাসের পথও বেছে নিতে পারে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকেও তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।


এ বিষয়ে সচেতন মহলের দাবি, প্রশাসনের তদারকিতে স্কুল-কলেজের ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা যেন ওইসব স্থানে গিয়ে বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করতে না পারে, লেখাপড়া বাদ দিয়ে যেন বাজে পথে না যেতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্বসহকারে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ।


এ ব্যাপারে সোমবার বাসাইল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি আজও বাসুলিয়াতে গিয়েছিলাম নৌকাতে কোন মানুষ নেই। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিন মোটামোটি একটু ভিড় হয়। স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে বাসুলিয়া ঘুরতে এসেছে ইউনিফর্ম পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা এরকম দৃশ্য আমার চোখে পড়ে নাই। দু’একজন আসলেও তাদের তো আমরা না করতে পারি না। আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। ওখানে অনৈতিক কোন কাজ করছে আমাদের চোখে পড়ে নাই। অপ্রীতিকর কোন ঘটনাও ঘটে নাই। ওখানে আমাদের পুলিশ প্রতিদিন সাদা পোশাকেও আছে, পোশাক পড়া অবস্থায় টহলের দায়িত্বেও আছে।


স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীরা বাসুলিয়ায় আড্ডায় মেতেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার বলেন, এরকম যদি কিছু থাকে তাহলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্কুল খোলা হয়েছে ৯ তারিখে আপনি যেহেতু বিষয়টি জানিয়েছেন অবশ্যই দেখবো।


বিবার্তা/বাবু /মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com