বর্তমানে কাঁচা বাজারে সব থেকে দামি পণ্য কাঁচামরিচ। রান্নার কাজে ব্যবহৃত এই নিত্যপণ্যটি পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া গেলেও খুচরা বাজারে চলছে লঙ্কাকাণ্ড।
১ জুলাই, শনিবার খুলনার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার সোনাডাঙ্গা ট্রাক স্ট্যান্ড পাইকারি বাজার, খুচরা নিরালা বাজার এবং গল্লামারী বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়।
একই দিন দেশের অন্যতম কাঁচা মরিচ উৎপাদনকারী এলাকা ঝিনাইদহের শৈলকুপা হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় এক হাজার টাকা দরে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, জন্মের পর থেকে তারা কোনদিন কাঁচামরিচের এত দাম দেখেননি।
শৈলকুপা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইউনুস আলী জানান, তিনি প্রতিদিন ২ থেকে ৩ মণ কাঁচামরিচ বিক্রি করেন। শনিবার তিনি ১০ কেজিও মরিচ কিনতে পারেননি। যা পেয়েছেন, তা এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
ক্রেতাদের দাবি, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে সান্ত্বনা হিসেবে ক্রেতাদের ‘খোঁড়া’ যুক্তি দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এটা সব সময়ের পুরনো যুক্তি ‘জোগান কম’। এবার তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন অতিবৃষ্টি।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, বর্ষা মৌসুমে পানির কারণে মরিচের গাছ মরে গেছে। ফলে প্রতি বছর এই সময়ে কাঁচা মরিচের দাম একটু বৃদ্ধি পায়। তবে এত বেশি দাম এর আগে কখনো দেখেননি ক্রেতারা।
গল্লামারী বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মামুন বলেন, ১৩ দিন আগেও যে মরিচের দাম ছিল ১২৯ থেকে ১৬০ টাকা, তা এখন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অতি বৃষ্টির কারণে মরিচের জোগান কম, সরবরাহও কমে গেছে। তাই দামও বেড়েছে।
মরিচ ভেদে দামে কিছুটা হেরফের আছে জানিয়ে মো. মামুন বলেন, ঝাল বেশি হওয়ায় কারেন্ট মরিচের চাহিদা বেশি। তাই দামও বেশি। এই মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আর সবচেয়ে ঝাল এবং দাম বেশি হচ্ছে বড়জের মরিচ, বড়জের মরিচ প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি করছি।
গল্লামারী বাজারে নিয়মিত ক্রেতা আরাফাত বলেন, দাম শুনে কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনা মরিচ কিনে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যান্য সবজির দামও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে নানান অজুহাতে কাঁচা মরিচেরও দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। নিয়মিত বাজার মনিটরিং থাকলে লাফিয়ে দাম বৃদ্ধি হতো না।
গল্লামারি বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন গৃহিণী আফসানা বেগম। কাঁচা মরিচের এমন লাগাম ছাড়া দামে ভীষণ ক্ষুব্ধ তিনি। তার মতে- অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে কাঁচা মরিচ। এমন অস্বাভাবিক দাম কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
খুচরা বিক্রেতা মজিবর রহমান প্রতি কেজি এক হাজার টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে গেছে। এজন্য খুচরা বাজারেও দাম বেড়ে গেছে।
ক্রেতা আজিজুর রহমান বলেন, শনিবার সকালে কাঁচামরিচ কিনতে এসে তো আকাশ থেকে পড়া অবস্থা। এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম এক হাজার টাকা। বাধ্য হয়ে শুকনো মরিচ কিনে বাড়ি যাচ্ছি।
আরেক ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, কাঁচামরিচের এতো দাম জীবনে দেখিলি। এক হাজার টাকার এক পয়সা কমেও কাঁচামরিচ পাওয়া যাচ্ছে না। এক কেজি কাঁচামরিচে এখন এক কেজি খাসির মাংস পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এক হাজার ৭৩৭ হেক্টরে মরিচ চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলি বলেন, আগে তাপ প্রবাহের কারণে মরিচের উৎপাদন কম হয়। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে ফুল ও ফল নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদন কম হচ্ছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]