গৌরীপুরে ক্যান্সার প্রতিরোধক ব্ল্যাক রাইস উৎপাদন
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৩, ০১:২৪
গৌরীপুরে ক্যান্সার প্রতিরোধক ব্ল্যাক রাইস উৎপাদন
গৌরীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল ( উফশী) জাতের ধানের ফলনের চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলো ভিয়েতনামী ক্যান্সার প্রতিরোধক ব্ল্যাক রাইস! কালো রঙের এ ধান উৎপাদন করেছে  হলো ময়মনসিংহের গৌরীপুরের এক কৃষক। 


কালো রঙের এ ধান চাষে নেই কোন পোকামাড়ক, রোগবালাইয়ের আক্রমণ। 


এতে ব্যবহার করতে হয় না কোন কীটনাশক। এ ধান উৎপাদন করেছেন উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কড়মরিয়া গ্রামের কৃষক শেখ সাদী। তিনি কড়মরিয়া গ্রামের হোমিও ডাক্তার আতাউর রহমানের ছেলে।


কৃষক শেখ সাদী জানান, ক্যান্সার প্রতিরোধক কালো রঙের চাল দেখে এ ধান চাষে আমার আগ্রহ বাড়ে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ১ কেজি ধান বীজ ৪০০ টাকায় কিনেছিলাম। কুরিয়ার সার্ভিসের বিল দিয়েছি ১৬০ টাকা। এছাড়া ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ, পরিচর্যা ও ধান কাটায় খরচ হয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ টাকা।


শুক্রবার ধান কাটা শেষে উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম ধানের ওজন দেন। ধান উৎপাদন হয়েছে ২০ শতক  জমিতে ২৫ মণ। তিনি জানান, ধানের উৎপাদনে সত্যিই আমি অবাক। কেননা স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল ধানের চেয়েও ভিয়েতনামী ব্ল্যাক রাইসের উৎপাদন বেশি হয়েছে। 


কৃষক লাল মিয়া জানান, শেখ সাদীর পাশের জমিতে তিনি ব্রিধান ২৮, ২৯ ও ৮১ আবাদ করেছেন। প্রতি ১০ শতাংশে ৭-৮ মণ ধান হয়েছে। 


কৃষক আবুল ফজল, আবুল বাশার ও ইদ্রিছ আলী জানান, শেখ সাদী জমিতে কীটনাশক দেয় না। শাক-সবজিতেও সে প্রাকৃতিক ও কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আমরা আমাদের ফসল রক্ষায়ও শেখ সাদীর পরামর্শ নিয়ে থাকি।
 
সফল কৃষক শেখ সাদী  জানান, এ ধরনের ধান চাষে তেমন কোনো রোগবালাই না থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। খরচও কম। ধানের দামও অনেক। সারা দেশে ধানের বীজ সরবরাহ করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, শখের বসে প্রথমবার পরীক্ষামূলক আবাদ করেছি। সফল হয়েছি। এলাকার কৃষকরাও এখন এই ধান চাষে আগ্রহী প্রকাশ করছেন।  উপজেলায় প্রথমবারের মতো এ ধান চাষ করায় কিছুটা ভয় ছিল, আজকে ভয়কে জয় করেছি। 


উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার জানান, ভিয়েতনামী ব্ল্যাক রাইস এন্টি অক্সিজেন সমৃদ্ধ। এ উপজেলার শ্যামগঞ্জেও একজন কৃষক ২ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন। আর মাওহা ইউনিয়নের এই কৃষক করেছেন ২০ শতক জমিতে। কৃষি বিভাগ শুরু থেকেই তাদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছিল। 


কৃষি বিভাগ জানায়, এ ধান থেকে পাওয়া চালে প্রচলিত অন্য চালের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেশি পুষ্টি থাকায় ধীরে ধীরে এটির চাহিদা বাড়ছে। এই চালের ভাত আঠালো ও সুগন্ধি। পায়েস, খিচুড়ি, ঘি-ভাত, পাস্তা, পাঁপড়, নুডলস করেও খাওয়া যায়।  


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও ধান গবেষক ড. মেহেদি মাসুদ বলছেন, এই ধানগাছের পাতা ও কান্ডের রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। কালো চালে অ্যান্থসায়ানিন বেশি থাকে; যা ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।


অপরদিকে শেখ সাদী আরও ২৫ শতাংশ জমিতে ইন্দোনেশিয়ার ব্ল্যাক রাইস করেছেন। তিনি পরিত্যক্ত জমিতে আলু ও সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন। কৃষি বিভাগের প্রযুক্তির নিয়মিত ব্যবহারকারী এই কৃষক হল্যান্ডের আলু উৎপাদনে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি আলুর ওজন হয়েছে ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম; যা এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ওজনের উৎপাদিত আলু।


বিবার্তা/হুমায়ুন/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com