২৫ মার্চকে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৮
২৫ মার্চকে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২৫ মার্চ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও একাত্তরে গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।


শনিবার, ২৫ মার্চ শনিবার বিকাল ৩টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।


সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কানিজ ফাতেমা, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. এইউজেড প্রিন্স, শহিদ পরিবারের সন্তান নাজনীনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।


মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচারের দাবিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বরাবর এবং ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচারের দাবিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।


সংগঠনের পক্ষে স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি শাহীন মাতুব্বর ও সহ-সম্পাদক মাহবুবুল আল জুবায়ের। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি গ্রহণ করেন গুলশান ডিপ্লোমেটিক জোনের পুলিশের এডিসি ইয়াসমিন সাইকা পাশা।


সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "আজ ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অন্যায়ভাবে নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নৃশংস গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়েছিল। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও পর্যন্ত ৩০ লক্ষ বাঙালিকে গণহত্যা ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হানি করার অপরাধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোন বিচার হয়নি যা কখনোই বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিবে না। জাতিসংঘের নিকট দাবি, অবিলম্বে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। একাত্তরে নৃশংস গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।"


সভাপতির বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "বাঙালির ইতিহাসের কালরাত ভয়াল ২৫ মার্চ। নিরীহ বাঙালির ওপর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো বর্বর গণহত্যার ভয়াবহ স্মৃতিজড়িত ইতিহাসের এক অধ্যায়। ১৯৭১ সালে চীনের সরবরাহকৃত চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করে পাকিস্তান আমাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্র চীন ও পাকিস্তান এখনো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। একাত্তরে গণহত্যা ও গণধর্ষণের অপরাধে পাকিস্তান ও চীনকে বাংলাদেশের নিকট রাষ্ট্রীয় ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা এদেশের মানুষ কখনোই ভুলবে না।"


বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, "স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য অপারেশন সার্চলাইট নামক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। অভিযান শুরু করার পূর্বে সকল বিদেশি সাংবাদিকদের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।বাঙালিদের ওপর আক্রমণের পর গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। জাতিসংঘের নিকট দাবি, একাত্তরের নৃশংস গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তান ও চীনকে জবাবদিহি করে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাষ্ট্র চীন ও পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের নিকট ক্ষমা না চায় তাহলে এদের সঙ্গে সকল ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে।"


ভাস্কর্য শিল্পী রাশা বলেন, "২৫ মার্চের বর্বরতাকে স্মরণ তথা প্রকৃতার্থে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি জাতির চিরন্তন শ্রদ্ধার স্মারক এবং সাক্ষ্য হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আজও পর্যন্ত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অবিলম্বে ২৫ মার্চকে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এজন্য বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনে সরকারকে কাজ করতে হবে।"


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, "জাতিসংঘের প্রতি আহবান, একাত্তরে নৃশংস গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আরোও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায় ও গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিচারের দাবিতে আজ জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আমরা প্রত্যাশা করি আগামী ২৫ মার্চ যেনো আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করতে পারি।"



বিবার্তা/রাসেল/নয়ন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com