কুষ্টিয়ায় ৩ দিনের লালন স্মরণোৎসব শুরু
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:০২
কুষ্টিয়ায় ৩ দিনের লালন স্মরণোৎসব শুরু
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সাধু, লালন ভক্ত ও অনুসারী পদভারে পূর্ণ ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি। সাঁইজির ধামে একত্রিত হতে পেরে তারা এখন ভাবতত্বে মত্ত। একতারা, দোতারা, ঢোল, খমক, খঞ্জনি আর বাঁশির সুরে মুখোরিত হয়ে উঠেছে লালন ধাম। উৎসবে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হয়েছেন দর্শনার্থীরাও। মরা কালি নদীর পাড়ের লালন আখড়াবাড়ির আশপাশের সব পথ এখন আখড়াবাড়িতে গিয়ে মিশেছে।


‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র এই আধ্যাত্ম বাণীকে প্রতিপাদ্য করে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়াবাড়ীতে ৩ দিনের লালন স্মরণোৎসব-এর উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার ৪ মার্চ রাতে অওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ স্মরণোৎসব’র উদ্বোধন করেন।।


অখড়াবাড়ির আঙিনায় আসন পেতে বসা সাধু ও লালন ভক্ত বাউলরা দরাজ গলাই গেয়ে চলেছেন সাঁইজির বাণীতে। সাঁইজির মতে ‘যে নিজেকে চিনেছে, সে তার রবকে চিনেছে’ তাই স্রষ্টার সান্নিধ্য পেতে হলে নিজেকে চিনতে হবে, সহজ মানুষ হতে হবে, ভজতে হবে মানুষকে। তবেই দেখা মিলবে স্রষ্টার। আর এজন্য প্রয়োজন সহজ মানুষের সান্নিধ্য।


আখড়াবাড়িতে অবস্থান নেয়া প্রবীণ সাধু দরবেশ নহির ফকির জানান, ফকির লালন সাইজি নিজেকে দীনহীন কাঙ্গাল ভেবে মানুষকেই সবার উর্দ্ধে স্থান দিয়েছেন। তাই স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে হলে সৃষ্টির সেরা মানব সাধন প্রয়োজন। আর এখানে এসে সাধুরা কি পেয়েছেন আর পাইনি তা মুখে বলা যেমন দুস্কর, তেমনিভাবে আত্মার ক্ষুধা নিবরণে তারা ছুটে সাঁইজির ধামে। দোল পূর্ণিমার শুদ্ধ আলোয় প্রফুল্ল ছড়াবে সবার মনে এমন প্রত্যাশা সাধুদের।


তবে দোল পূর্ণিমার আগেই স্মরণোৎসব হলেও সাধুদের মনের দোলযাত্রা ও আত্মার শুদ্ধি নিজস্ব রীতিতেই হবে। বিনা সুতোয় বাঁধা আত্মার টানে ছুটে আসা সাধুরা আখড়াবাড়িতে থাকেন ভাবতত্বে মোহিত। আর এ ভাব প্রকাশের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি ও স্রস্টার সান্নিধ্য পাওয়ায় তাদের একমাত্র লক্ষ্য।



কুষ্টিয়া লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট. আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা ও কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্ট্রার সেলিম আলতাফ জর্জ। প্রধান আলোচক ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহীনুর
রহমান।


আলোচনা শেষে লালন একাডেমির মঞ্চে একাডেমির শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় লালন একাডেমি ৩দিন ব্যাপী লালন স্মরনোৎসবের আয়োজন করেছে। এবছর পবিত্র শব-ই-বরাতের কারণে দু’দিন এগিয়ে আনা হয়েছে স্মরণোৎসব। লালন উৎসবের অনুষ্ঠানিকতা আগামী ৬মার্চ রাতে শেষ হলেও দৌলতিথি অনুযায়ী বাউল, সাধু ও ভক্তবৃন্দের অধিবাস শুরু হবে ৬ মার্চ বিকেলে। পরদিন ৭মার্চ ভোরে বাল্যসেবা ও দুপুরে


পূর্ণ্যসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হবে সাধুদের স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এদিকে আখড়াবাড়ী চত্বরে কালী নদীর তীর ঘেষে মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। আর ঐতিহাসিক এই উৎসবকে নির্বিগ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, বাউল সম্রাট লালন শাহ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দৌলপূর্নিমা রাতে ভক্ত, বাউল-সাধুদের নিয়ে সাধুসঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব করে আসছেন তাঁর অনুসারীরা।


বিবার্তা/শরীফুল/জবা/এমএ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com