কক্সবাজারে পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে বিষমুক্ত লবণছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত শুটকি। বিশেষ করে মায়ানমার, পাকিস্তান ও ভারতীয় শুটকীতে ভরপুর কক্সবাজার শুটকি মার্কেট। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে পর্যটন মৌসুমে দৈনিক গড়ে প্রায় দুই কোটি টাকার সামুদ্রিক শুটকি বিক্রি হয় ২৩৫ টি দোকানে। আবার পর্যটকের চাপ বাড়লে বেচা বিক্রি দুই থেকে তিন গুন বেড়ে যায়।
শহরের বড় বাজার,বার্মিজ মার্কেট, লাবনী পয়েন্ট, কলাতলী, সুগন্ধা পয়েন্ট মিলে ছোট বড় ২৩৫ টি শুটকির দোকান রয়েছে। এসব দোকানে যে সব শুটকি বেশি বেচাবিক্রি হয় লইট্যা,ছুরি,মাইট্যা,লাউক্ষা, কোরাল, কেচকী, গুইজ্যা, চিংড়ি, সুন্দরী, উলুয়া, পাইস্যা, রূপচাঁদা, পোপামাছ, হাইরচাঁন্দা,ফলিয়া ও হাঙ্গরসহ নানা প্রজাতির শুটকি মাছ।মাত্র দুই তিন বছর আগে ও কক্সবাজারে উৎপাদিত শুটকি পর্যটক ও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ও রপ্তানি হতো।
কিন্তু বঙ্গোপসাগরে আশংকাজনক ভাবে মৎস্য হ্রাস পাওয়ায় শুটকি মহালে আগেরমত সামুদ্রিক মাছ শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। এ দিকে দিন দিন শুটকির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি শুটকি এনে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।
কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্টের শুটকি ব্যবসায়ী মাহি শুটকি এগ্রো ইন্ড্রাষ্ট্রিজের সিও মোকাদ্দেসুর রহমান মুকুল জানিয়েছেন, তার দুই টি ফিশিং ট্রলার ও দুই টি দোকান রয়েছে। দৈনিক দুটি দোকানে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকার শুটকি বিক্রি করেন তিনি। এ ছাড়া পাইকারী একটি শুটকি আড়ৎ ও রয়েছে তার।সেই আড়ৎ থেকে স্থানীয় দোকান ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুটকি সাপ্লাই দিয়ে থাকেন তিনি।
তাই চাহিদা মেটাতে ও নিয়মিত শুটকির যোগান দিতে পাকিস্তান, ভারত ও মায়ানমার থেকে শুটকী আমদানী করতে হয় তাকে ও।তার দাবী বিষ মুক্ত, লবণ বিহীন বিশুদ্ধ স্বাস্থ্যসম্মত শুটকি বিক্রি করেন তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেছেন, কক্সবাজার সদর,টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলীয় ৯৫০ টি শুটকি মহাল বা খামারে চলতি মৌসুমে শুটকি সনাতন পদ্ধতিতে মাছ শুকানো হচ্ছে। চলতি মৌসুমে শুটকি উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার মেট্রিকটন শুটকি। অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়কাল চলে শুটকি উৎপাদন। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদিত শুটকি দিয়ে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। দিন দিন শুটকির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানী করা হচ্ছে।তিনি আরো বলেন, শুটকির মান নিয়ন্ত্রণ আইন ২০২০ এখনো কাঠামোগত ভাবে প্রয়োগের অনুমতি মিলেনি।
এটি বাস্তবায়ন হলে ভোক্তারা শত ভাগ বিশুদ্ধ শুটকি বাজারে পাবেন।এ আইনে বলা আছে শুটকিতে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর কীটনাশকসহ যে কোন পদার্থ মেশানো হলে, যতি তা প্রমাণিত হয় ৫ বছর পর্যন্ত জেল জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।এ ছাড়া বিশুদ্ধ শুটকি উৎপাদন ও ব্র্যাংন্ডিং করতে বেশ কিছু প্রদর্শনী খামার কাজ করছেন।এর মধ্যে জেলায় ৮০ জন শুটকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী মৌসুমে স্বাস্থ্য সম্মত শুটকি উৎপাদন কার্যক্রম শতভাগ সফল হবে।
এ দিকে জেলা শুটকি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আতিক উল্লাহ জানিয়েছেন, কাঁচা মাছের দাম বেশী এ বছর শুটকির দাম ও বেশ চড়া। অন্য বিদেশি ট্রলিং আমাদের জলসীমায় ঢুকে প্রতিনিয়ত মৎস্য আহরণ করছে।ফলে সাগরে কাংখিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যেকারণে বিদেশ থেকে শুটকী আমদানী করে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে আমাদের।
বিবার্তা/তাফহীমুল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]