ছিলেন সিএনজি চালক, হয়ে গেলেন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:১৩
ছিলেন সিএনজি চালক, হয়ে গেলেন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বান্দরবানের রুমা উপজেলার দূর্গম পাহাড়ে নিরাপত্তাবাহিনী ও সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ এর গোলাগুলিতে নিহত বেনেট থাং ম্রো লাশ গ্রহণ করেছে তার পরিবার। সোমবার দুপুরে বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে ছেলের লাশ নিয়ে যান তাঁর মা-বাবা।


হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমান নিহতের পিতা লিপমাং ম্রো ও প্রতিবেশীরা জানান, নিহত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য বেনেট থাং ম্রো একসময় সিএনজি গাড়ি চালাতেন। পরে পরিবারের অবাধ্য হলে গত দুই বছর আগে তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল পরিবার। এরপর আর তার কোনো খোঁজ ছিল না। রবিবার রুমার দূর্গম পাহাড়ের গোলাগুলির খবর এবং বিভিন্ন মাধ্যমে ছবি দেখে ছেলের পরিচয় নিশ্চিত করেন নিহতের পিতা লিপমাং ম্রো।


এদিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলার দূর্গম পাঁচটি গ্রাম এখন জনমানব শূণ্য। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে গ্রামের মানুষ এখন উপজেলা সদরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে শনিবার দূর্গম পাহাড়ে নিরাত্তাবাহিনীর অভিযানে কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর পোষাক পরা এক সদস্যের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের পিতা লিপমাং ম্রো ও মা লাল বিয়াক জিং ম্রে ছেলের কফিন বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে গ্রহণ করেছেন।


রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, বান্দরবান সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বেনেট ম্রো লাশ তাঁর বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে।


সম্প্রতি পার্বত্য জেলা বান্দরবানের দূর্গম পাহাড়ে ঘরছাড়া যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত জঙ্গি গ্রুপকে প্রশিক্ষণের পর আলোচনায় আসে কেএনএফ বা কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এখনো রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেরায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত ৯ অক্টোবর থেকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া ও কেএনএফের বিরুদ্ধে নিরাপত্তাবাহিনীর পরিচালিত অভিযানে কয়েক দফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।


সর্বশেষ শনিবার রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩কিলোমিটার দূরে পাইন্দু ইউনিয়নের বাসত্লাং পাড়া ও আর্থাপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একদল কেএনএফ সদস্য হামলা করেন। নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা গুলি ছুড়লে কেএনএফ সদস্যরা পালিয়ে যান। এ সময় গুলিতে একজন কেএনএফ সদস্য নিহত হন। গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে পাড়ার লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। নিহত ওই কেএনএফ সদস্যের নাম বেনেট থাং ম্রো। নিহতের পিতা সাংবাদিকদের জানান, একসময় পেশায় সিএনজি চালক ছিল বেনেট থাং ম্রো। গত দুই বছর ধরে নিখোঁজ ছিল বেনেট থাং। তবে এই নিয়ে তিনি আইন শৃংখলা বাহিনীকে কখনো জানাননি।


এদিকে রুমায় গত কিছুদিন ধরে চলা কেএনএফ এর আতংকে আতঙ্কে পাইন্দু ইউনিয়নের হ্যাপিহিলপাড়া, বাসত্লাংপাড়া, আর্থাপাড়া, মুননুয়াম পাড়া ও মুয়ালপিপাড়ার ৭১টি পরিবারের অন্তত ২শতাধিক বাসিন্দারা নিজ বসতবাড়ি ছেড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন ও ৬৯ পদাতিক ব্রিগডের সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেএনএফের অত্যাচার ও নির্যাতনে পাড়াগুলো থেকে বম ও মারমা বাসিন্দারা বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা রুমা উপজেলা সদরের মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভবনে অবস্থান করছেন। আশ্রিত পরিবারগুলোকে সেনাবাহিনী খাবার, শীতবস্ত্র, চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রদান করছেন।


বিবার্তা/নয়ন/এমএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com