লক্ষ্মীপুরে দুর্ঘটনায় আহত হওয়া ইন্টারনেট ক্যাবলের শ্রমিক মিরাজ হোসেন ৫২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সিনিয়র সহকারী জজের কাছে মিরাজ এই অভিযোগ করেন।
বাদীর আইনজীবী মো. ইয়াহ্ইয়া সোহাগ বলেন, অভিযোগটি লিগ্যাল এইডের সিনিয়র জজ আমলে নিয়েছেন। অভিযোগ আকারে এটি বিচারক আমলে নেন। অভিযুক্ত মামুন হোসেনকে রবিবার লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, মিরাজের বাবা আব্দুর রব পাটওয়ারী বলেন, ঘটনার দিন আমার ছেলে অসুস্থ ছিল। তাকে জোর করে কাজে নিয়েছে মামুন। দুর্ঘটনার পর মিরাজের চিকিৎসা ও পারিবারিক ব্যয়ভার গ্রহণ করার কথা থাকলেও এখন কোন খোঁজ নিচ্ছেন না তিনি। উল্টো বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিচ্ছে।
অভিযুক্ত মামুন রামগঞ্জ পৌরসভার সোনাপুর এলাকার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি কার্নিভাল ইন্টারনেটের রামগঞ্জের ডিলার ও এমআরএস ডিস ক্যাবলের স্বত্ত্বাধিকারী।
অভিযোগ সূত্র জানায়, মিরাজ রামগঞ্জ উপজেলার কলছমা গ্রামের আব্দুর রব পাটওয়ারীর ছেলে। ২০২১ সালের ২৪ জুন সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের দালালবাজার-রামগঞ্জ সড়কে ইন্টানেটের সংযোগে নিয়ে মিরাজ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে কাজ করছিলেন। এসময় বিদ্যুতের ১১ হাজার বোল্টের সঞ্চালন তারে জড়িয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ঝলসে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট তিনি বিদ্যুতের তারে ঝুলে ছিলেন। পরে অন্যান্য সহকর্মীরা এসে তাকে উদ্ধার করে। তখন প্রথমে তাকে আনোয়ারা হসপিটাল ও পরে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে নিয়ে ২৫ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরবর্তীতে তাকে ৫৮ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) রাখেন চিকিৎসকরা।
ওই ঘটনার পর থেকে পঙ্গু হয়ে পড়েন মিরাজ। এদিকে তার চিকিৎসার সম্পুর্ণ ব্যায়ভার নেওয়ার কথা ছিল কোম্পানির মালিক মামুনের। কিন্তু হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে মালিক তার কোন খোঁজ নেয় না। দুই-এক মাস পর পর এক থেকে দুই হাজার টাকা পাঠায়। কিন্তু শীতে তাকে নিয়মিত থেরাপি দিতে হয়। থেরাপি না দিলে প্যারালাইসিস অথবা মৃত্যুও হতে পারে তার। এ অবস্থায় চিকিৎসার ব্যয়ভার ও ক্ষতিপূরণের জন্য মোবাইলফোনে কল দিলে মামুন তাকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেয়। মূলত ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার মানসিকতায় তাকে হুমকি দিচ্ছে মামুন।
মিরাজ হোসেন বলেন, আমি এখন নিঃস্ব। আমাকে চিকিৎসার জন্য ১২ লাখ ও আজীবনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪০ লাখ টাকা দিতে হবে। কারণ চাকরির নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনায় শিকার শ্রমিককে সারাজীবনের চিকিৎসাসহ পরিবারের যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করবে কোম্পানির পরিবেশক।
মিরাজের মা নাসিমা বেগম বলেন, মিরাজকে ঢাকা হাসপাতালে দেখতে গেলে মামুন আমাকে চলে আসতে বাধ্য করে। আমি না আসলে মিরাজকে ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করার ভয় দেখায়। পরে আমি চলে আসি।
মিরাজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, আমার আড়াই বছরের মেয়ে রয়েছে। অনেক কষ্টে আমরা এখন দিনাতিপাত করি। আমার স্বামীকে নিয়মিত থেরাপি দিতে হয়। টাকা পয়সার বড় অভাব। এ মুহুর্তে ইন্টারনেট ক্যাবলের মালিক মামুন কোনভাবেই আমাদের সহযোগিতা করতে রাজি হচ্ছে না। আমার স্বামীকে বাঁচাতে তার সঠিক চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। এজন্য আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য আদালতে অভিযোগ দিয়েছি।
বিবার্তা/সুমন/জামাল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]