সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে বিদ্যানন্দের ব্যতিক্রমী আয়োজন
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৩
সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে বিদ্যানন্দের ব্যতিক্রমী আয়োজন
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

এতদিন যা ছিল পরিবেশ দূষণের কারণ, সেটিই এখন বাসিন্দাদের নিত্যদিনের খাদ্যের যোগানদার হয়ে উঠেছে! বাংলাদেশের সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণের নাম যে সেন্টমার্টিন সেখানেই ঘটছে এই অভূতপূর্ব ঘটনা। দ্বীপবাসীর বাজার করতে লাগছে না টাকা। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের সামগ্রী জমা দিলে মিলছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ।


এক্ষেত্রে, বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচিত হলেও এবার সেই প্লাস্টিকই হয়ে উঠেছে মূল্যবান। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই ব্যাগভর্তি বাজার করতে পারছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা। ১ থেকে ৫ কেজি প্লাস্টিক জমা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, মুরগী, ডিম, আটা, সুজি, কম্বল, শীতের কাপড় ও লুঙ্গী নিচ্ছে দ্বীপবাসী।


দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিকে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে বাঁচাতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। যাতে সহযোগিতা করছেন জেলা প্রশাসন। পর্যটক ও স্থানীয়দের যত্রতত্র ব্যবহারের পর ফেলা দেয়া এসব প্লাস্টিক বর্জ্য দূর্ষিত করছে সমুদ্রের প্রাণ-বৈচিত্র্যকে। অথচ এসব বর্জ্য অপসারণে নজর নেই কারো।


সংশ্লিষ্টরা জানান, সৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে তারা এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে দ্বীপবাসী বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারের পাশাপাশি উপকৃত হচ্ছেন তারা।


প্রসঙ্গত, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ (মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটার)। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে ও মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।


শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) সকালে দ্বীপে দেখা যায়, সবার হাতে বস্তা। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী-শিশু সবাই ছুটছেন বস্তা নিয়ে। বস্তার ভেতরে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, চিপস ও জুসের বোতল। বেড়াতে এসে সৈকতের বালিয়াড়িতে পর্যটকদের ফেলে দেয়া এসব প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। যা জমা দিয়ে বিনিময়ে বাজার করবেন তারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে সেখানে টাকার প্রয়োজন হচ্ছে না। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিয়েই সেন্টমার্টিনের অধিবাসীরা বাজার বাসায় নিয়ে যেতে পারছেন।


দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা খাতুন বলেন, ১০ কেজি প্লাস্টিক জমা দিয়ে কাগজের ১০ টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে ৫ টা দিয়ে একটি মুরগী, ১ টাকা চাল, ২ টাকা তেল, আর বাকি ২ টাকা দিয়ে ১ ডজন ডিম নিয়েছি। অনেক খুশি আমরা। এদিকে দ্বীপের প্লাস্টিক পরিষ্কার হচ্ছে অন্যদিকে আমরা বলতে গেলে বিনামূল্যে বাজার পাচ্ছি।


দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। এছাড়াও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেওয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন।


বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সংগৃহীত প্লাস্টিক দ্বীপ থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়। এর একটি অংশ দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করেছেন বিশাল আকৃতির একটি ‘প্লাস্টিক দানব’। ধারণা করা হচ্ছে এই দানব এশিয়ার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু। এই দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন মানব সমাজকে একটি বার্তা দিতে চায়, প্লাস্টিকের ফলে পরিবেশ যে হারে দূষিত হচ্ছে তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে। আর এই দানবই পরবর্তীতে মানবসভ্যতাকে গিলে খাবে।


কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সেন্টমার্টিন সহ অন্যান্য দ্বীপ ও সমুদ্রসৈকতকে দূষণমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে সেটি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করে ও তাদের সম্পৃক্ত করে যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন। আশা করছি এই উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা হবে।


জানা যায়, দিন পনেরো ব্যবধানে প্লাস্টিকের বিনিময়ে এসব পণ্য সরবরাহ করে বিদ্যানন্দ। এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে গত মাসে। এতে প্রতিবার ৮ থেকে ১০ টন প্লাস্টিক জমা দেয় দ্বীপের মানুষ। যা ঢাকায় নিয়ে রিসাইকেলিং করে পুনঃব্যবহার উপযোগী করা হয়।


বিবার্তা/তাফহীমুল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com