প্রাণের বইমেলা, প্রতিবছর সমৃদ্ধি না অস্তিত্ব সংকট কী দিচ্ছে?
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩৯
প্রাণের বইমেলা, প্রতিবছর সমৃদ্ধি না অস্তিত্ব সংকট কী দিচ্ছে?
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

সাহিত্যপ্রেমীদের প্রাণের মেলা হিসেবে স্বীকৃত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভাষার মাসজুড়ে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা। বাঙালির এই প্রাণের মেলা নিয়ে প্রতি বছরই নানা তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে থাকে। এতে সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাণের উৎসব যেন সংকুচিতই হয়ে পড়ে। আর তাতে বাংলাদেশি ও বাংলা ভাষাভাষীরা বইমেলাকে কেন্দ্র করে চিন্তাজগত সমৃদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে ক্রমেই কি এগিয়ে যাচ্ছে মেধা ক্ষত আর মননের ক্ষতির দিকে?


প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে মেলা হলেও এবার অধিবর্ষের ২৯ তারিখসহ বর্ধিত সময়ে ১ ও ২ মার্চ ছিল অমর একুশে বইমেলার বিস্তৃতি। সময় বাড়ার সাথে সাথে লেখক, প্রকাশক ও বাংলা একাডেমি- পরস্পরকে অভিযোগ করার বিষয়টিও বেড়েছিল আনুপাতিক হারে। তাই বইমেলা শেষে ইতিবাচক আমেজের পরিবর্তে নেতিবাচক রেশ নিয়ে পরবর্তী বইমেলার দিকে নজর দিতে হলো।


প্রতিবারের মতো এবারও বইমেলার আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন লেখক-প্রকাশক-পাঠক-বুদ্ধিজীবীসহ মেলায় আগতরা। তবে বাংলা একাডেমির দাবি মেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজিত হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় মেলা যথেষ্ট ভালো হয়েছে। পরবর্তী বছরে আরো ভালো হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি আসলে কী? চলতি বছরে বইমেলার আরেকটি ঘটনা রীতিমতো ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছিল যা শঙ্কিত করে তুলেছে লেখক ও প্রকাশকদেরকে। বইমেলা থেকে 'ভুয়া ভুয়া' বলে বের করে দেওয়া হয়েছে হিরো আলম, খন্দকার মোশতাক, ডা. সাবরিনাকে। যদিও উল্লেখিত নামের প্রত্যেকের লেখকসত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবুও পরবর্তী বছরে এই ঘটনার শিকার সাহিত্যানুরাগী কবি-সাহিত্যিকরা হবেন কি না সেটি নিয়ে শঙ্কিত লেখক সমাজ। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান এখন সময়ের দাবি, নয়তো পরবর্তী বছরগুলোতে প্রাণসঞ্চারী এই বইমেলা নিয়ে ব্যর্থতার দিকেই যেতে হবে আমাদের।


চলতি বছরের ২ মার্চ, শনিবার মেলার ৩১তম ও শেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও এমন একটি বইমেলা খুঁজে পাবেন না। এ বইমেলা আমাদের আবেগের মেলা, জাতিসত্তার মেলা। এই বইমেলা জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা, আমাদের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার বইমেলা। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা জানান, ‘এ বছর তিন হাজার ৭৫১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আগামী বছর আরও সফল মেলা আয়োজন করা হবে।’ সমাপনী অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা সরানোর বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখার ব্যবস্থা করবো।


এদিকে, গত দুই বছরের তুলনায় বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বেড়েছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের পক্ষে একাডেমির প্রশাসন উপবিভাগের উপ-পরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ জানান, এবারের অমর একুশে বইমেলাতে প্রায় ৬০ কোটি টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মেলাতে প্রবেশ করেছে। গত বছরের তুলনায় এই বিক্রি ১৩ কোটি টাকা ও ২০২২ সালের তুলনায় সাড়ে সাত কোটি বেশি। যদিও দেশে করোনা অতিমারির শুরুর আগের মাসের বিক্রির তুলনায় এই বৃদ্ধিকে বলা চলে নগণ্য। কারণ, সে বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে বিক্রি হয়েছিল ৮২ কোটি টাকার বই।


এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের এক-তৃতীয়াংশই ছিল কবিতার। সংখ্যাটা আশা জাগানিয়া হলেও কবিতার মান নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। যেই কবিতা এক সময় আন্দোলন সংগ্রামে প্রাণ জোগাত, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের রণাঙ্গনে মনোবল ধরে রাখার উৎস ছিল, এখন আর সেই অবস্থা নেই বলে অভিযোগ। পাঠকরা বলছেন, কবিতার মান ঠিক রাখতে না পারলে কবিতার গৌরবের ঐতিহ্য হারাতে হবে হয়ত।


অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ এ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গুণগত মানের বই প্রকাশের জন্য চিত্তরঞ্জন সাহা পুরস্কার পেয়েছে কথাপ্রকাশ। এ ছাড়া প্রথমা, ঐতিহ্য ও জার্নিম্যান মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছে। সেরা শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পুরস্কার পেয়েছে ময়ূরপঙ্খি। সংশ্লিষ্টদের বাংলা একাডেমি স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।


অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ নিয়ে কবি ও সাহিত্যের কাগজ মগ্নপাঠ-এর সম্পাদক আহমেদ শিপলু বিবার্তাকে বলেন, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে যে পাঠবিমুখতা তৈরি হয়েছে, এবারের মেলায় ভাইরাল লেখকদের নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে- সেটা মেলার মধ্যে একটা ডিস্টার্ব ছিল। তথাকথিত সমালোচিত কিছু ব্যক্তিদের নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়েছে বারবার। তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এরকম অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটেছে মেলায়। যেগুলো নিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ ও প্রকাশনা সংস্থার মধ্যে একটা বোঝাপড়া থাকা উচিত। এই ধরনের ঘটনাগুলো মেলা কর্তৃপক্ষ কীভাবে তাৎক্ষণিক মোকাবিলা করবে, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কাউকে ভুয়া বলে বের করে দেওয়া এসব অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো যাতে আর কখনো না ঘটে সেদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর জোরদার করতে হবে। এছাড়াও কবি আহমেদ শিপলু বইমেলার পরিবেশ, অপরিচ্ছন্নতা, অত্যধিক ধুলো ওড়া, টয়লেটের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে পরবর্তী মেলায় এসবের সুব্যবস্থা কামনা করেন।


তার কথার সাথে সঙ্গতি পাওয়া যায় নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী রেদওয়ানুর রহমান জুয়েলের কথাতেও। তিনি বিবার্তাকে বলেন, মেলাকেন্দ্রিক যে প্রতিষ্ঠানের কথাই বলেন না কেন, মূল ভূমিকা বাংলা একাডেমির। বাংলা একাডেমি যদি মনে করে এই মেলাটা আমাদের প্রাণের মেলা, আমাদের ভাষার মেলা, ঐতিহ্যের মেলা, তাহলে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে মেলাটা করতে পারে। ভাসমান টয়লেট করছে, কিন্তু এত নোংরা আর গন্ধ যে সেগুলোর পাশে ঘেঁষা যায় না। এটা কোনো মেলার পরিবেশ হলো? কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মেলাতে যায়, সেখান থেকেও তো ধারণা পাওয়া যায়। কলকাতা বইমেলাতেও দেখি, তাহলে মেলার পরিবেশ এরকম কেন হবে? প্রতিবছর আমরা বলছি আর খারাপ হচ্ছি।


দেশ পাবলিকেশন্স এর স্বত্বাধিকারী অচিন্ত্য চয়ন বিবার্তাকে বলেন, এবার মেলায় আগের চেয়ে বিক্রি কমেছে, এটা কোনো ভালো লক্ষণ না। এবার রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে শুরু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল তাও কেন বিক্রি কমে গেল। মেলার পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলে বলতে হবে বাংলা একাডেমি বইমেলা নিয়ে খুবই অবহেলা করেছে। বইমেলার শেষদিনে অনেক স্টলে চুরি হয়েছে। যে মেলার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না, সেই মেলাটা করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি যদি দায়িত্ব নাই নিতে পারি তাহলে দুইদিন মেলা বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন ছিল না। বাংলা একাডেমির না চাইলে প্রকাশকদের তো ক্ষমতা নেই মেলা করার।


তিনি আরো বলেন, এই যে বইমেলা থেকে লেখককে বের করে দেওয়া এবং মানহীন বই প্রকাশ নিয়ে বলবো- লেখক মানহীন না, যে প্রকাশক বইটা বের করছে সেই মানহীন। প্রকাশকের আগে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন, আমি উদ্যোক্তা হবো না প্রকাশ করবো, আমি বই প্রকাশ করবো না ছাপাবো। এই দায় প্রকাশককে নিতেই হবে। কারণ, বইমেলা থেকে কাউকে বের করে দেওয়া এটা কোনো সভ্য আচরণ না। আমি বলেছি মানহীন বইয়ের দায় অবশ্যই প্রকাশকের কিন্তু কোন বই প্রকাশ হওয়া উচিত সেটা নির্বাচনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমিরই নেওয়া উচিত। বাংলা একাডেমি মেলার অভিভাবক, সন্তান যেমন বাবা-মায়ের আশ্রয়ে থাকে, তেমনি বইমেলার অভিভাবক হিসেবে দায়-দায়িত্ব বাংলা একাডেমিকেই নিতে হবে। যারা সৃজনশীল বা মানসম্মত বই করে না, তাদের স্টল দেওয়া উচিত না। এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিভাবকের পরিচয় দিয়েছে।


গৌরব ৭১-এর সাধারণ সম্পাদক লেখক ও সংগঠক এবং জাগরণ টিভির প্রধান নির্বাহী এফ এম শাহীন বিবার্তাকে বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা তাতে বইমেলা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের বইমেলার যে ঐতিহ্য বাঙালির যে আবেগ, বইমেলা ঘিরে বাঙালির সাহিত্যচর্চার যে জায়গাটি তৈরি হয়েছিল এই মুহূর্তে আগের সেই জায়গাটি আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এখন এটা বইমেলা বাদে বাকি সবকিছুর মেলায় পরিণত হয়েছে। বইমেলায় ৬০ লক্ষ লোকের সমাগম হয়েছে কিন্তু এখন হিসাব বের করা প্রয়োজন মেলা ঘিরে খাবারের দোকান কতগুলো ছিল এবং কত টাকার খাবার বিক্রি হয়েছে? খাবারের ব্যবসা কেমন হয়েছে বইমেলা এটা বের করলেই বোঝা যাবে আসলে বইমেলা কতটা বইয়ের মেলা হয়েছে! বই বাদে বাকি অন্য সব কিছুর মেলা করার প্রচেষ্টা দারুণভাবে সফল করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। আমার মনে হয়, শুধু বইমেলা না, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। তারা আসলেই কি বইমেলা ঘিরে বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে, সংস্কৃতির চর্চা করতে চায় নাকি ভিন্ন কোনো প্রয়াস আছে সেটি নিয়ে এখন গবেষণা করা প্রয়োজন।


এফ এম শাহীন আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে লিটল ম্যাগ চত্বর অবহেলিত, ছোট প্রকাশকরা ভালো স্টল পায় না, বড় বড় প্যাভিলিয়ন সামনে রাখা হয়, এই অভিযোগগুলো প্রতিবারের। একটা অংশকে সুবিধা দিয়ে বইমেলা আয়োজন করা হচ্ছে। তুলনামূলক কম বই যে প্রকাশকের তার জন্য বইমেলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। আর এই যে বইমেলায় একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে যারা ভুয়া বলবে, যাকে তাকে ভুয়া বলবে, বইমেলা থেকে বের করে দিবে। প্রথমে সত্যিকার অর্থে বইমেলায় কিছু ভুয়া লোকজন বই বের করছে। বই যে কেউই লিখতে পারে। কিন্তু যে শ্রেণির লোকদের তারা ভুয়া বলা শুরু করল, এটা তারা একটা উদাহরণ তৈরি করতে চায় যে, এই লোকগুলোকে ভুয়া বলে আমরা তাদের ভুয়া বলতে চাই যারা সত্যিকার অর্থে দেশটাকে ধারণ করে, দেশকে ভালোবাসে। হুমায়ূন আজাদের কথা ধরুন- মুক্তচিন্তার মানুষ, মুক্তবুদ্ধির মানুষ। যারা নারী জাগরণের কথা বলে, এদের প্রতিহত করতে চায় বইমেলা থেকে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয় যে, কে কী লিখেছে এটা পাঠক বিচার করবে। প্রকাশকেরও একটা দায় থাকে কোন বইটা সে প্রকাশ করবে। এবারের বইমেলায় মনে হয়েছে তারা সেলিব্রেটিদের বই প্রকাশ করে নিজেদের আয় বাড়াতে চেয়েছে, কিন্তু এটা কাম্য নয়।


বইমেলার আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে বইমেলা চলাকালীন বিবার্তাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, সব আয়োজনে কিছু না কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে, বইমেলাতেও সেটা থাকা স্বাভাবিক। মানুষ হলেই ত্রুটি কিছু হবেই। সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা সবসময়ই রাখতে হয় এবং সেই চেষ্টা আমাদের আছে। এই বছর আর গত বছর আলাদা। গতবারের মতো করার চেষ্টা করলে এই বছর আমি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। এবারের মতো এই বছরের চিন্তা করতে হবে। সেটা এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি করতে পেরেছে বলেই মনে করছি।


মানহীন বই প্রকাশ ও সমালোচিত হওয়া প্রসঙ্গে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বিবার্তাকে বলেন, বই লেখে লেখক, বই প্রকাশ করে না। প্রকাশ করে প্রকাশক। প্রকাশক বই বের করার সময় যদি পাণ্ডুলিপিটি যাচাই করে নেয়, পদ্ধতির মাধ্যমে লেখকের পাণ্ডুলিপিটি যদি পরীক্ষা করে নেয় তাহলে এত বই প্রকাশ হওয়ার কথা নয়। এই দায় প্রকাশকের যে, পাণ্ডুলিপিটি যাচাই বাছাই করে বই প্রকাশ করতে হবে। সম্পাদিত বই দেখে শুনে যাচাই বাছাই করে প্রকাশিত হওয়ার প্রচলন এখনো আমাদের দেশে হয়নি।


কিন্তু বইমেলা শেষ হওয়ার পর বইমেলার আয়োজন ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টায় একাধিকবার কল করা হলেও এই বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


বইমেলায় কবিতার বেশি প্রকাশ এবং ক্যারিয়ারমুখী বই বেশি বিক্রি হওয়ার প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবার্তাকে বলেন, বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির, এই সময়ে ছেলেমেয়েরা বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। স্ক্রিনে বই পড়ে, মোবাইলে কম্পিউটারে দেখে। কিন্তু এই যে বইমেলা এটি সাধারণ মানুষকে, পাঠকসমাজকে প্রতিবছর বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। এবারের মেলায় যে ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যেকোনো ধরনের বই বিক্রি হোক না কেন, ক্যারিয়ারমুখী বই হোক, গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ যাই হোক না কেন মানুষ এই যে বইমুখী হয়েছে, সেটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। বই মানুষ ও জাতি গঠনে সাহায্য করে। সেই দিক থেকে আমাদের প্রতিবছরের বইমেলার একটা বিরাট ভূমিকা আছে। কিছু দুর্বলতা থাকতেই পারে, ব্যবস্থাপনা ক্রমান্বয়ে ভালো হবে, কিন্তু যেভাবে মেলাগুলো হয়ে চলেছে প্রতিবছর সেটা আমাদের জন্য খুব প্রয়োজন। সাধারণ মানুষকে বইমেলার সাথে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। তবে বইমেলাতে সবসময়ই প্রয়োজন মানসম্মত বইপ্রকাশ। বইমেলাতে আমরা বই প্রকাশ করছি, কিন্তু মানসম্মত বইপ্রকাশ হচ্ছে কি না সেটা লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। শুধু দেশে না দেশের বাইরেও বাংলা সাহিত্যের বই প্রকাশ হচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে বাংলা ভাষাভাষী অনেক মানুষ, এদেরকে বইমেলার সাথে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করলে প্রতি বছরই বইমেলাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে পারি এবং এর কোনো বিকল্প নেই।


বিশিষ্টজনদের মতামত আর লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও বাংলা একাডেমিসহ সকলের বক্তব্য এবং আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন থেকেই যায়, প্রতি বছরের বইমেলা এইরকম অভিযোগের মুখে শেষ হয়ে পরবর্তী বছর কেন সুব্যবস্থাপনায় আসছে না? তাতে করে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে অস্তিত্ব সংকটেই কি পড়ছে? সকলের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানের প্রেক্ষিতে ভাষার মাসে ভাষা আন্দোলনের চেতনার ধারক বাহক হিসেবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কবে আয়োজিত হবে একটি আন্তর্জাতিক মানের 'অমর একুশে বইমেলা'?


বিবার্তা/এসবি/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com