অমর একুশে বইমেলা ২০২৪: আয়োজন নিয়ে ভিন্নমত
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৪৬
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪: আয়োজন নিয়ে ভিন্নমত
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ব ও একুশের চেতনা বাঙালির মধ্যে জাগরূক রাখা, বইপাঠে উদ্বুদ্ধকরণ, বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য এবং চিন্তা-চেতনার মানসম্পন্ন চর্চার প্রচার ও প্রসার এবং দেশীয় প্রকাশনা শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিবৎসর ‘অমর একুশে বইমেলা’ আয়োজন করে আসছে বাংলা একাডেমি। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালেও আয়োজিত হয়েছে 'অমর একুশে বইমেলা'। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির মাসের শেষ দিন পর্যন্ত বইমেলা চললেও এবার বর্ধিত হয়ে মেলা চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত।


চলতি বছর বাঙালির প্রাণের ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয় বইমেলা। গত ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইমেলা উদ্বোধনের পর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ প্রাপ্ত ১৬ জনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।


বইমেলার উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। তাই ভাষা-সাহিত্যসহ সবকিছুকে স্মার্ট করতে হবে। অনুষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে অনুবাদে জোর দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।


অধিবর্ষ হওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। ২৯ ফেব্রুয়ারি দিনটি বৃহস্পতিবার। পরে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। বরাবরই ছুটির দিনে মেলায় লোকসমাগম বেশি হয়, বাড়ে বেচাবিক্রি। এ কারণে প্রকাশকরা মেলার মেয়াদ দুই দিন বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার রাতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা জানান, বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের আবেদন নিয়মানুযায়ী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে মেলার মেয়াদ দুই দিন বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে বইমেলা চলবে ২ মার্চ, শনিবার পর্যন্ত।


এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল, প্যাভিলিয়ন রয়েছে। উভয় অংশ মিলে মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্যাভিলিয়ন ছিল ৩৭টি।


এবারের বইমেলায় যাতায়াতের জন্য প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলের সুবিধা পেয়েছেন গ্রন্থানুরাগীরা। মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনটি ঠিক বইমেলা সংলগ্ন। ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সব এলাকার যাত্রী এবার অনায়াসে মেলায় যাতায়াত করতে পেরেছেন। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি ও পূর্ব প্রান্তে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে প্রবেশ ও বের হওয়ার মোট আটটি গেইট করা হয়েছে। ফলে মেলায় গ্রন্থানুরাগীদের ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে।


এবারের বইমেলায় গতকাল পর্যন্ত গল্পের বই এসেছে মোট ৪৩৭টি, উপন্যাস ৪৬৫টি, প্রবন্ধ ১৭৯টি, কাব্যগ্রন্থ ১০৩৫টি, গবেষণা গ্রন্থ ৬৬টি, ছড়ার বই ৯৪টি, শিশুতোষ বই ৬০টি, জীবনী গ্রন্থ ১১৭টি, রচনাবলি ২৯টি, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই ৬৪টি, নাটক ২৮টি, বিজ্ঞান বই ৪০টি, ভ্রমণকাহিনী ৬০টি, ইতিহাসের বই ৫০টি, রাজনীতি বিষয়ক বই ২৪টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক বই ২৫টি, বঙ্গবন্ধুর উপর বই ২৫টি, রম্য ২৭টি, ধর্মীয় ৫৪টি, অনুবাদ ৫১টি, অভিধান ১৯টি, সায়েন্স ফিকশন ও গোয়েন্দা বই ৩৩টি, অন্যান্য ১৯৪টি। ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ দিনে মোট প্রকাশিত বই ৩১৭৬টি।


২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিনে বই প্রকাশিত হয়েছে ৩১টি, তৃতীয় দিনে ৭৪টি, চতুর্থ দিনে ৬৬টি, পঞ্চম দিনে ৭০টি, ষষ্ঠ দিনে ১০৮টি, সপ্তম দিনে ৬৯টি, অষ্টম দিনে ৮০টি, নবম দিনে ১৭১টি, দশম দিনে ১৫২টি, ১১তম দিনে ৯২টি, ১২তম দিনে ১১৫টি, ১৩তম দিনে ১১০টি, ১৪তম দিনে ৯১টি, ১৫তম দিনে ৯৭টি, ১৬তম দিনে ২৯৮টি, ১৭তম দিনে ১৭১টি, ১৮তম দিনে ৮৩টি, ১৯তম দিনে ১১৫টি, ২০তম দিনে ৯৯টি, ২১তম দিনে ২৩৪টি, ২২তম দিনে ৭৮টি, ২৩তম দিনে ১৯৭টি, ২৪তম দিনে ১৩৮টি, ২৫তম দিনে ৯৬টি, ২৬তম দিনে ২৪৬টি ও ২৭তম দিনে প্রকাশিত বই ৯৫টি।


অমর একুশে বইমেলার আয়োজনের অংশ হিসেবে গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ এ কথাপ্রকাশ-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।


২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত একুশ শতকে বাংলাদেশ: শিক্ষার রূপান্তর গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত যাত্রাতিহাস: বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত কিলো ফ্লাইট প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।


এবছর অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট), বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হয়। অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনের সমাপনী অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রাপ্তদের পুরস্কার তুলে দেয়া হবে।


এর আগে, বইমেলার উদ্বোধনের দিন সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১১টি ক্যাটাগরিতে ১৬ বিশিষ্টজনকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছর যারা পুরস্কার পেয়েছেন- কবিতায় শামীম আজাদ, কথাসাহিত্যে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী, প্রবন্ধ/গবেষণায় জুলফিকার মতিন, অনুবাদে সালেহা চৌধুরী, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক, শিশুসাহিত্যে তপংকর চক্রবর্তী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় আফরোজা পারভীন ও আসাদুজ্জামান আসাদ, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে ইনাম আল হক, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনিতে ইসহাক খান এবং ফোকলোরে তপন বাগচী ও সুমনকুমার দাশ।


অমর একুশে বইমেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে, ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা। রাত ৮:৩০ মিনিটের পর নতুন করে কাউকে মেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।


নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ক্ষেত্রে তথ্যকেন্দ্রের নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হয়, ফরম পূরণ ব্যতিরেকে মোড়ক উন্মোচন করা যায় না। সিরিয়াল অনুযায়ী মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং তথ্যকেন্দ্র থেকে যথারীতি মোড়ক উন্মোচনের ঘোষণা প্রচার করা হয়।


বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের উত্তর-পূর্ব কোণে 'লেখক বলছি' মঞ্চ। নির্বাচিত লেখকগণ তাদের সদ্যপ্রকাশিত বই নিয়ে পাঠকের মুখোমুখি হন। একজন লেখকের জন্য সময় ২০ মিনিট। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মঞ্চের কার্যক্রম চলে।


মেলা চলাকালীন প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর বসে। প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলার লেখককুঞ্জে লেখকেরা তাদের বইয়ের ব্যাপারে পাঠক ও দর্শকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।


মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের খবর, প্রকাশিত বইয়ের নাম, লেখক ও প্রকাশকের নাম প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শক-শ্রোতাদের অবহিত করে।


২০২৪ বইমেলার আয়োজন কেমন ছিল জানতে চাইলে কবি ও সাহিত্যের কাগজ মগ্নপাঠ-এর সম্পাদক আহমেদ শিপলু বিবার্তাকে বলেন, বইমেলার যে আয়োজন সেটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সমাজ বাস্তবতায় বিশাল প্রভাব ফেলে। কারণ, টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে মেলা দেখা যাচ্ছে, হাজার হাজার মানুষ এখানে আসছে। বই কেনার সংখ্যা হয়তো মেলার জনসমাগমের তুলনায় নিতান্তই কম, তাও বলবো আমাদের বাংলাদেশের, বাঙালিদের যে সামাজিক জাগরণ তার আঁতুড়ঘর এই বইমেলা।


তিনি আরো বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রচুর নতুন লেখকের আবির্ভাব ঘটে, অনেক নতুন বই প্রকাশ হয়। এবারও প্রচুর বই প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবারের তুলনায় হয়তো কম, তবু এই যে এত বই প্রকাশ- এটা বইমেলার সার্থকতা। এবার মেলার স্টল বিন্যাস ভালো ছিল। শুধু লিটল ম্যাগ কর্নার নিয়ে অভিযোগ ছিল, এটি যথাযথ বিন্যাস হয়নি। লিটল ম্যাগের সম্পাদকরা সবাই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।


নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক ও প্রধান নির্বাহী রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল বইমেলা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিবার্তাকে বলেন, এইবারের মেলাটা গত চার বছরের তুলনায় খারাপ হয়েছে। যেই পরিমাণ ইনভেস্ট করেছিলাম আমরা, সেই পরিমাণ পুঁজি উঠে আসবে না। মেলার পরিবেশ ভালো না, প্রচুর ধুলা। মূলধারার প্রকাশকরা সবাই ডাবল স্টল নিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের স্টল আবার শিশুচত্বরেও। মেলার পরিবেশটা যা তা অবস্থা হয়ে গেছে। ধুলাবালিতে হাঁটা যায় না, ইট বিছায় না। দায়িত্বহীনের মতো কাজ। তারপরে টয়লেটের যে বুথ থাকে, কলকাতা বইমেলায় গেলে দেখি পনেরো বিশটা বুথ, আমাদের এখানে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে টয়লেটের কাজ সারছে, এটা কোনো বইমেলার পরিবেশ হতে পারে? এটা বছরের পর বছর ধরে চলছে, আমরা অনবরত বলছি আর খারাপ হচ্ছি।


তিনি আরো বলেন, এভাবে তো মেলা চলতে পারে না, এটার একটা বিহিত হওয়া দরকার। মেলাকেন্দ্রিক যে প্রতিষ্ঠানের কথাই বলেন না কেন, মূল ভূমিকা বাংলা একাডেমির। বাংলা একাডেমি যদি মনে করে এই মেলাটা আমাদের প্রাণের মেলা, আমাদের ভাষার মেলা, ঐতিহ্যের মেলা, তাহলে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে মেলাটা করতে পারে। ভাসমান টয়লেট করছে, কিন্তু এত নোংরা আর গন্ধ যে সেগুলোর পাশে ঘেঁষা যায় না, এটা কোনো মেলার পরিবেশ হলো?


লেখক ও নির্মাতা দিলদার হোসেন বিবার্তাকে বলেন, বাংলা একাডেমির কাজ কিন্তু বই বাজার করা না, এখানে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। বাংলা একাডেমির ভেতরে অনেকেরই বানান হয় না, অনেকেই চৌর্যবৃত্তির সাথে জড়িত। এই নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে। আমি তিনটি বিষয় বলতে চাই। এক, বাংলা একাডেমির লিটলম্যাগকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। দুই, স্বাধীন লেখক ও প্রকাশক আসতে চায় কিন্তু সংঘবদ্ধ প্রকাশকদের জন্য পারছে না। স্বতন্ত্র নির্বাচনের মতো স্বতন্ত্র গবেষক ও স্বতন্ত্র লেখকদের আসতে দেওয়া হোক, তাহলে পরিচ্ছন্ন ও প্রতিশ্রুতিশীল কাজ আমরা পাবো। তিন, আগামী বইমেলা যেন এই চারটা বাঁশ, তিনটা টিন আর ত্রিপল না থাকে, এগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। আমা কফি, হোটেল, বিকাশ এগুলো দিয়ে খেয়ে ফেলেছে আমাদের একুশ, আমাদের সালাম-রফিক-জব্বার-বরকত, আমাদের ভাষা আন্দোলন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ! ৫৪ বছর পরেও পড়ে আছি প্রাচীন স্টাইলে, এগুলো বদলাতে হবে!


বইমেলা নিয়ে সার্বিক মতামত জানাতে গিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বিবার্তাকে বলেন, সব আয়োজনে কিছু না কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে, বইমেলাতেও সেটা থাকবে স্বাভাবিক। মেলায় এবার অনেক পারটিসিপেশন, অনেক অংশীদারিত্ব হচ্ছে, তবে আমি বলবো এবারের বইমেলা সব মিলিয়ে খুবই ভালো হচ্ছে, বেচা-বিক্রিও ভালো হচ্ছে।


তিনি বলেন, আমরা এবার প্রথম থেকেই নানা সুবিধার দিকগুলো নিশ্চিত করতে পেরেছি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের পেছনে গতবারও মেলার শেষ দিকে আমরা বাথরুমের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। কিন্তু এবার প্রথম থেকেই সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরকম বিভিন্ন বিষয়ে আমরা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি। গতবার পরীক্ষামূলক ছিল কিন্তু এইবার সারিগুলো ঠিকভাবে বিন্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে। আমরা পরিচ্ছন্নতাও নিশ্চিত করতে পেরেছি অনেকাংশেই। তবে, যেটা বললাম, ত্রুটি বিচ্যুতি থাকবেই। ত্রুটি না থাকলে পরবর্তীতে তার নতুন কিছু করার সুযোগ ঘটে না। মানুষ হলেই ত্রুটি কিছু হবেই। সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা সবসময়ই রাখতে হয় এবং সেই চেষ্টা আমাদের আছে।


প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এরপর, ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত প্রকাশকদের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় এবং চলতে থাকে বইমেলা। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৮৪ সাল থেকে বইমেলা নতুন নামকরণ ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ আজকের ‘অমর একুশে বইমেলা’য় এসে দাঁড়িয়েছে।


বিবার্তা/এসবি/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com