ডেঙ্গু : অবহেলায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি, জ্বর হলেই পরীক্ষার পরামর্শ
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩, ১৬:৩৮
ডেঙ্গু : অবহেলায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি, জ্বর হলেই পরীক্ষার পরামর্শ
এস এম রিয়াদ রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

বছরের শুরু থেকেই এবার মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ। আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। রাজধানীর হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটগুলোতে কোনো শয্যা ফাঁকা নেই। ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।


চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার সাথে সাথে এর অস্বাভাবিক লক্ষণ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বর ছাড়াও শরীর ব্যথা, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, কারও কারও বমি, পাতলা পায়খানা, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ায় অবস্থা অনেক দ্রুত খারাপ হচ্ছে। শিশুরা বেশিরভাগক্ষেত্রে ডেঙ্গু সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্তদের সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। এ ছাড়াও ডেঙ্গু রোগীদের নানা উপসর্গ দেখা যায়।


চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ে যারা হাসপাতালে আসছেন, তারা শুরুতে না এসে দেরিতে আসছেন। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, তা বুঝতে না পেরে অনেকে জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যখন রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে যায়, তখন স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। যার ফলে রোগীর শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। এতে হঠাৎ ‘শক সিনড্রোম’ দেখা দিলে রোগী বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। অনেক রোগীকে আবার আইসিইউতে নিতে হচ্ছে। এসব রোগীর সুস্থ্য হয়ে উঠতে সময়ও বেশি লাগছে।


দেশে প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তার সাথে বাড়ছে মৃত্যুও। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা ভালো, তাদের বাসায় থেকে চিকিৎসার কথা বলছেন চিকিৎসকরা। আর ডেঙ্গু ‘শক সিনড্রোম’ এবং জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ।



তার ব্যতিক্রম নয় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও। এই হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য ডেডিকেটেড ওয়ার্ড পুরোটাই রোগীতে ভর্তি। ১৬ জুলাই, রবিবার রাজধানীর শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জ্বরসহ নানা উপসর্গে স্বজনরা রোগীদের নিয়ে আসছেন। চিকিৎসকরা রোগীদের উপসর্গ দেখে পরীক্ষা করছেন। ডেঙ্গু পজিটিভ ও জটিল হলে হাসপাতালে ভর্তি করছেন, অন্যথায় বাসায় গিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন।



হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রবিবার সকাল থেকে আসা বেশিরভাগ রোগীরা জ্বর ও নানা উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু ধরা না পড়ায় তাদের অন্যান্য পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে। তা নির্ণয় হলে হাসপাতাল থেকেই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে যাদের ডেঙ্গু পজিটিভ ও অবস্থা জটিল তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।



বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে বেড আছে ৪২টি, সব বেডেই রোগী ভর্তি। নতুন ডেঙ্গুরোগী এলে তাদের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি থাকায় যেখানে শয্যা খালি হচ্ছে, সেখানেই মশারি টানিয়ে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশু হাসপাতালের সব বেডেই রোগী ভর্তি আছে। হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা না থাকায় নতুন রোগী এলেও ভর্তি করানো সম্ভব হচ্ছে না। রেফার করা হচ্ছে অন্য হাসপাতালে।


বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ২নং ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ১১ মাস বয়সী শিশু সায়মা রহমান। তার মা মনিরা বেগম বিবার্তাকে বলেন, পাঁচ দিন হয় মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম দিন জ্বর আসে, পরের দিন একটু পরপর শুধু বমি করে- সাথে জ্বর। রাতে জ্বর বাড়তে থাকে ও মায়ের দুধ খায় না। দেরি না করে সকালেই হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তাররা অনেক পরীক্ষা করে বলেন ডেঙ্গু হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করাতে। এখন শরীরের অবস্থা ভালো।


মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার ব্যবসায়ী হাসিবুর মিয়ার ৭ বছরের ছেলে মো. সোহান মিয়া তিন দিন ধরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ভর্তি। তার বাবা বলেন, জ্বর আমার পোলারে শেষ করি ফেলাইছিল। ভুল হয়ছে আমরা সময়মতো হাসপাতালে আনবার পারি নাই। ওষুধের দোকান থাহি জ্বর, শরীর ব্যাথার বড়ি কিনি নিয়ে যাই। তা খাওয়ানোর পর জ্বর, বেদনা কমি গেছিল। কিন্তু দিনে দিনে তার শরীর আরও বেশি খারাপ হইতেছিল। পরে এক দোকানদার আমারে হাসপাতালে নিয়ে যাইতে বলল। এরপর হাসপাতালে নিয়ে আইছি। এহন সোহানের শরীর একটু ভালো। ডাক্তার বলছে আরো কয়দিন লাগব সুস্থ হতে।


শিশু হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অনেকেই জ্বরসহ নানা উপসর্গ নিয়ে এসেছেন। সেখানে ৫ বছর বয়সী ছেলে আবু তালহাকে নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে এসেছেন তার বাবা ও মা। বাবা মো. তাহের মিয়া বিবার্তাকে বলেন, আজ দু দিন থেকে তালহার জ্বর, নাপা সিরাপ খাওয়াইছি কিন্তু জ্বর কমে আবার বাড়ে। তাই হাসপাতালে আসছি ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে।


সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ তলায় গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ২টি পুরুষ ও একটি মহিলা ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তি রাখা হয়েছে। কোনো শয্যা ফাঁকা নেই, রোগীদের অতিরিক্ত চাপ। বেশিরভাগ রোগীদের হাতে-পায়ে ক্যানুলা লাগানো, স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। দায়িত্বশীল চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।


সেখানেই চিকিৎসাধীন কলেজ শিক্ষার্থী মো. মহিবুল্লাহ মাহিন নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছেন। পাশেই তার মা বসা। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমার ছেলে আজ তিন দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি। শরীর অনেক দুর্বল, কিছুই খেতে পারছে না। ডাক্তাররা স্যালাইন দিয়ে যাচ্ছেন। এত চঞ্চল ছেলেটা আমার এখন স্তব্ধ হয়ে গেছে। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেন- সেই দোয়া করি।


তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার হঠাৎ মাহিনের হালকা জ্বর আসে। পরদিন জ্বর কমে যায়। কিন্তু রাতে আবার জ্বর বেড়ে যায়। নাপা খাওয়ানোর পর একটু কমলে ভাবলাম ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মাহিন কিছু খেতে পারে না, তাই পরদিন হাসপাতালে নিয়ে আসছি। পরীক্ষা করার পর ডাক্তাররা জানাল মাহিনের ডেঙ্গু হয়েছে। তারপর থেকেই এখানে ভর্তি।



রাজধানীর শ্যামলী থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মো. কামরুল হাসান। তার এক হাতে ক্যানুলা লাগানো। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম, কথা বলতে পারি নাই। এখন আগের চেয়ে সুস্থ আছি, খাবার খেতে পারছি।


তার বাবা মুদি দোকানদার মো. কালু মিয়া বিবার্তাকে বলেন, প্রথমে ওর জ্বর খুব বেশি ছিল না। কিন্তু পাতলা পায়খানা হয় ও শরীর ব্যথা ছিল। ওষুধ ও স্যালাইন খাওয়ানোর পরও শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। দুইদিন পার হবার পরও যখন কমছিল না, তখন বাধ্য হয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তাররা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।


তিনি বলেন, এখন কামরুলের শরীর ভালো। জ্বর, শরীর ব্যাথা নেই, ডাক্তার বলেছেন দু-একদিন মধ্যে কামরুলকে নিয়ে বাড়ি যেতে পারব।


সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক বিবার্তাকে বলেন, প্রতিদিন নানা ধরনের উপসর্গ নিয়ে ডেঙ্গু রোগীরা হাসপাতালে আসছেন ও ভর্তি হচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ রোগী শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে অনেক রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে গেছে। যার কারণে সেরে উঠতে একটু সময় বেশি লাগে।


তিনি বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা এখানে ভর্তি আছেন তাদের মধ্যে দুই-তিন জন ছাড়া সবাই অশঙ্কামুক্ত আছেন। সবার প্রতি পরামর্শ হলো রোগী যখন অসুস্থ হয়ে যায়, তখন সে কিছু করতে পারে না। তাই রোগীর স্বজন বা অভিভাবকদের বলছি, কারও জ্বর বা ডেঙ্গুর কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসুন।


সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ জন। এ সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে ভর্তি আছে ১২০ জন। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৫৯ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৩৮ জন। এ সময়ে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।


তিনি বলেন, এবার আমরা যেসব ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি, তাদের বেশিরভাগ হচ্ছে সিভিআর ফর্মে, অবস্থা তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য যেসমস্ত রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগ দেখা যাচ্ছে অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসছে। কারণ তারা জানত না যে, তাদের ডেঙ্গু হয়েছে। হাসপাতালে আসার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, এ সমস্ত রোগীর অবস্থা অশঙ্কাজনক হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে।


ডা. মো. খলিলুর রহমান বলেন, এ জন্য সাধারণ মানুষের কাছে বার্তা হলো—যেহেতু এখন দেশব্যাপী ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে, তাই কারও জ্বর হলে প্রথমে ডেঙ্গু হয়েছে কি না, সেই পরীক্ষা করতে হবে। যদি ডেঙ্গু নিশ্চিত হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় চিকিৎসা নিবে অথবা হাসপাতালে আসবে।


তিনি আরও বলেন, বাসায় যদি রোগীর শরীর ভালো থাকে শুধু রেস্ট ও প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার খাবে। যেমন- স্যালাইন, পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, এগুলো খেলে জটিলতা কম হয়। কেউ একদম খেতে পারছে না বা তীব্র মাথাব্যথা, তীব্র পেটব্যথা, খুব বমি করছে, মাথা ঘুরাচ্ছে বা মাথা ঘুরে পড়ে গেছে, শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে অথবা ৬ ঘণ্টা থেকে প্রশ্রাব হচ্ছে না—এসব লক্ষণ থাকলে অবশ্যই দেরি না করে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসবেন। এবং যত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসবেন তার জীবন রক্ষার জন্য উত্তম হবে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে জানিয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বলেন, কারও হয়ত জ্বর বেশি হয়, আবার কারও জ্বরটা তেমন নেই। কিন্তু পাতলা পায়খানা দেখা দিয়েছে। কারও হয়ত জ্বর হালকা ছিল কিন্তু মাথা ঘুরে পড়ে গেছে অথবা রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কারও যদি জ্বরের পরে শরীর খুব দুর্বল লাগে বা যেকোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এতে নিশ্চিত হওয়া যাবে রোগ সম্পর্কে এবং রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের যেসব হাসপাতালে শয্যা খালি ছিল, সেগুলো ধীরে ধীরে ভরে যাচ্ছে। দেশে উদ্বেগজনক হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। আমরা চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকলে আমরাও সংকটে পড়ে যাব। তবে ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত আমাদের কোনো সংকট নেই।
ঢাকাসহ সারাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক হেলথ ইমারজেন্সি বা জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তবে দেশে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বা ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বাড়লে স্বাস্থ্যসেবা সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।


প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। সিটি করপোরেশন তো একা এ কাজ পারবে না। কারণ এ মশা ঘর-বাড়ি যেখানে জমা পানি থাকে, সেখানেই জন্ম নেয়। বিশেষ করে ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে, ছাদ বাগানে, ফুলের টপে, পরিত্যক্ত পাত্রে এসব জায়গা জনগণের নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিজের ঘর-বাহির পরিস্কার রাখার দায়িত্ব তো তাঁকেই নিতে হবে। এখন সিটি করপোরেশন তার যে কাজ তা করবে। জনগণ যদি তার নিজের ঘর-বাড়ি পরিস্কার না রাখে তাহলে ডেঙ্গু নির্মূল করতে পারবে না।


অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এজন্য কারও ঘরে-বাইরে যেন কোন পানি জমা না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। নিজেকে মশার কামড় থেকে বাঁচাতে হবে। আপনার ঘরের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের না। সবাই মিলে সমন্বয় বাড়ানো দরকার। কোথাও যাতে পরিত্যক্ত পাত্র পড়ে না থাকে। কারণ তাতে পানি জমে মশার জন্ম হবে। আবার এই মশাগুলো ঘরে গিয়ে জমা পানি পেলেই সেখানে জন্ম নিবে। এভাবে এডিস মশা ঘরে-বাইরে বংশবৃদ্ধি করে।


প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক আরও বলেন, এই মুহূর্তে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যদি জোরেশোরে প্রস্তুতি না নেয়া হয় অবস্থা আরও খারাপ হবে। রোগী যত বাড়বে তার সাথে মৃত্যুর হারও তো বাড়বে। হাসপাতালগুলোর ধারণক্ষমতাও ছাড়িয়ে যাবে। সেই মুহূর্তে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আর ঝুঁকি তো রয়েই গেছে।


দেশে ডেঙ্গু নির্মূলের জন্য প্রশাসন জনগণ সবাইকে সম্প্রীতির সাথে মিলে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সবাই মিলে একসাথে ডেঙ্গু নির্মূলের ব্যবস্থা নিলে নির্মূল হয়তো হবে না তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তা না হলে এভাবে চলতেই থাকবে এবং আগামীতে ডেঙ্গুর প্রকট আরও বাড়বে।


বিবার্তা/রিয়াদ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com