পুরোনো মামলায় সাজার আতঙ্কে বিএনপি নেতারা
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ১২:২৪
পুরোনো মামলায় সাজার আতঙ্কে বিএনপি নেতারা
মো. ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। এমন সময় নতুন, নতুন মামলার খড়্গ নেমে আসছে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর। এমন কী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরোনো মামলা নিয়েও নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিনিয়র থেকে শুরু করে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়মিত একাধিক মামলার হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। তবে নেতাকর্মীদের দাবি, এভাবে হয়রানি করেও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করা যাবে না।


বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১২ হাজারের মতো মামলা হয়েছে। এতে আসামি প্রায় ৪০ লাখ। বেশিরভাগ মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে সচল হচ্ছে ওয়ান-ইলেভেন ও পরবর্তী সময়ে সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতির পুরোনো মামলা। শুরু হয়েছে বিচারকাজও। এসব মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে দ্রুত রায় দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দলটির নেতা ও আইনজীবীদের। এছাড়া সম্প্রতি বিচারিক আদালতে দেওয়া বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমান উল্লাহ আমানের সাজা উচ্চ আদালত বহাল রাখায় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।


বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতাদের সরিয়ে দিতে সরকার ভয়াবহ মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়ার এই যে রায়, এই রায় হচ্ছে তাদের সেই পরিকল্পনা- যে পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে একেবারে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ করা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া, সরিয়ে আবার যদি এককভাবে পার হওয়া যায়। প্রায় সাড়ে ১৩‘শ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যে মামলাগুলো নির্বাচনের পূর্বেই শুনানি করে নিস্পত্তি করা হবে। জগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে তা বন্ধ করা যাবে না।


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা মামলায় সম্প্রতি বিচারিক আদালতে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নয় বছরের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। পৃথক আরেকটি মামলায় দলটির আরেক নেতা আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া আমান উল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানেরও তিন বছরের সাজা উচ্চ আদালত বহাল রেখে রায় দিয়েছেন।


বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জানান, ওয়ান-ইলেভেন ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি নেতাদের নামে করা দুর্নীতির অনেক মামলা বাতিলে উচ্চ আদালতে আবেদন করেন তারা। উচ্চ আদালত অনেক মামলাই বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। দীর্ঘদিন এসব মামলার বিচারকাজ বন্ধ ছিল। সেই মামলাগুলো পুনরায় সচল হচ্ছে। এসব মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে দ্রুত রায় দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দলটির নেতা ও আইনজীবীদের।


বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির বিরুদ্ধে করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১। আর অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। মোট মামলার মধ্যে দুই হাজার ৮৩০টির বেশি হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এরমধ্যে কয়েকশ গায়েবি মামলাও রয়েছে।


এছাড়া এ বছর ১৯ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৭১টি নতুন মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব মামলায় আসামি ৬ হাজার ৯১৫। এ সময় সারা দেশে বিএনপির ৮০২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, বিএনপির চলমান আন্দোলনকে দমন করার জন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা, বাড়ি বাড়ি অভিযান ও গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। সরকার মূলত ভয় পাওয়ার কারণেই বিএনপি নেতা কর্মীদের উপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে। এভাবে দমন পীড়ন চালিয়ে আসলে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। তিনি বলেন, পুরনো মামলায় নেতা কর্মীদের সাজা দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে সরকারের কৌশল। নেতা কর্মীদের সাজা দেওয়া হলে সেটা রাজনৈতিক এবং আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। কিন্তু এভাবে নিপীড়ন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের চলমান আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না বলে জানান তিনি।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বিবার্তাকে বলেন, নির্বাচনের পূর্বে সরকার ষড়যন্ত্র করছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা, গ্রেফতার এবং পুরনো মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে জেতার জন্য দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা, নতুন করে মামলা দেওয়া, হয়রানি করা এটা ২০০৮ সালেও করেছে ১৪ সালেও করেছে এবং ১৮ সালেও করেছে। ২০০৮ সালে সেনাবাহিনী সরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা আনার জন্য এগুলো করেছিল। এছাড়া ১৪ এবং ১৮ সালে তারা নিজেরাই এগুলো করেছে। তারা জানে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে। পরাজিত হওয়ার ভয়ে তারা এগুলো করছে।


তিনি বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন- ‘নির্বাচনের সময় হয়রানিমূলক মামলা করা হবে না’। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট আগে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছিল। পূর্বে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করে ক্ষমতায় এসেছে, এখন আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু এবার জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা এগুলো মাথায় নিয়েই আন্দোলন করবে এবং সরকারের পরাজয় নিশ্চিত করবে ইনশাআল্লাহ। সাজা, মিথ্যে মামলা যত কিছুই করা হোক না কেন এটা দেশ-বিদেশে স্পষ্ট হয়ে গেছে। যত কিছুই করা হোক না কেন তাদের যে ষড়যন্ত্র তা ব্যর্থ হবে।


মামলা এবং গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বিবার্তাকে বলেন, এটা সরকারের চরিত্র। বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারের কাছে আতঙ্ক। জাতীয়তাবাদীর শক্তি যেকোনো সময় চূড়ান্ত আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে এই ভয়ে এমন দমন পীড়ন চলছে। সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন বলেই সব সময় আতঙ্কে থাকে। এই সরকার যতদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে, আইন অনুযায়ী একটি বৈধ পার্লামেন্ট গঠন করতে পারেনি, মানুষের ভোটেও পার্লামেন্ট তৈরি হয়নি। যতটুকু পেরেছে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। কিন্তু এই ভয় তো একদিন না একদিন কাটবেই। বিএনপি'র সাংগঠনিক তৎপরতা তেমনি এগিয়ে চলেছে। যতই ভয় ভীতিতে থাক এবং যতই মামলা গ্রেফতার করা হোক না কেন এতে কোন কাজ হবে না। আমি মনে করি এটা সরকারের শেষ মরণ কামড়, পতন যখন অনিবার্য হয় তখন মরন কামড় দিয়ে কোন লাভ হবে না। জনগণেরই বিজয় হবে।


মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নতুন মামলা হবে, গ্রেফতার হবে, কোন হামলায় সাজা দেওয়া হবে- এ সকল বিষয় মাথায় রেখেই আমরা রাজপথে নেমেছি। আমরা জানি আমাদের পথ খুব ভঙ্গুর, কষ্টকর। আমাদের অনেক কষ্ট, দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এটা মাথায় রেখেই আমরা নেমেছি। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, সিনিয়র নেতাদের সাজা দেওয়া হয়েছে আরও অনেক কিছু হতে পারে। কিন্তু সরকার শেষ পর্যন্ত সফল হবে না। যেহেতু জনগণের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। যারাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন তাদের পতন অনিবার্য।


বিবার্তা/এমই/রোমেল/কেআর


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com