
দেশের দুই শেয়ারবাজারে চলছে টানা দরপতন। প্রতিদিন লেনদেন শুরু হলে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা থাকে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু বাজার আর ঘুরে দাঁড়ায় না। এতে করে পোর্টফোলিও মূলধন ধারাবাহিক কমতে থাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ নিয়ে রয়েছেন নানা শঙ্কায়। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে বাজার কেমন আচরণ করবে, কোনদিকে যাবে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই।
এদিকে গত সপ্তাহের টানা ৫ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ১৪৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ গত সপ্তাহের রোববার (১২ মে) সূচক ছিল ৫৬৬৬ পয়েন্টে। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকটি লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৫৪৩১ পয়েন্টে। টানা ছয় দিনে কমেছে ২৩৫ পয়েন্ট।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক এক পরিচালক জানান, গত ১৮ জানুয়ারি বাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর কিছুদিন ইতিবাচক থাকলেও গত দুই মাসে অধিকাংশ কার্যদিবসে বাজারে পতন দেখা গেছে। এতে করে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী তথা হাউসগুলোও বড় লোকসানের মুখে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। কোথায় সমস্যা ও এর স্বাভাবিক গতি ফেরাতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
মতিঝিলে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজারের এ পতন কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। প্রতিদিন লেনদেন শুরুর কিছু সময় পর একে একে কোম্পানির শেয়ার দর ৩ শতাংশের সার্কিটে নেমে যায়। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতা না থাকলেও বিক্রেতা ঠিক বিক্রির জন্য বসে থাকছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে আরো কার্যকর ভূমিকা পালনে বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রভাব তৈরি করা উচিত।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার দেশের দুই শেয়ারবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শেষে সূচকের ব্যাপক পতন হয়েছে। একইসাথে বাজার দুটিতে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ ৪০০ কোটি ঘরে নেমে এসেছে।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৮৬.১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, লেনদেন হয়েছে ৪০৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬৯.২৭ পয়েন্ট, লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮৬.১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৪৩১.২৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২০.৫২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৯১.৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৫.৫৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৪৮.৪৩ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৮৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২টির, দর কমেছে ৩৪৭টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির।
ডিএসইতে এদিন ১৩ কোটি ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪৭টি শেয়ার ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ার ও ফান্ডের বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৬৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। বাজারটিতে লেনদেন কমেছে প্রায় ২৬৭ কোটি টাকা।
এছাড়া এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেনের দিক দিয়ে শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় প্রথমে উঠেছে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে উঠেছে ই-জেনারেশনস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে উঠেছে আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফাস্ট মিউচুয়্যাল ফান্ড। কোম্পানিটির টাকার অঙ্কে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। এরপর লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশনস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, লাভেলো আইসক্রিম, প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড, সী পার্ল বিচ ও রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স মিউচুয়্যাল ফান্ড।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন শেষে প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৬৯.২৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৩৭.২৬ পয়েন্টে।
সিএসইতে এদিন ২২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৫টির কোম্পানির, কমেছে ১৮৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির শেয়ার দর। সিএসইতে দিন শেষে ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন কমেছে প্রায় ৫১ কোটি টাকা।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]