ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে বাংলাদেশ
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ১৯:০৮
ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে বাংলাদেশ
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

অবশেষে বাংলাদেশেও পরিষেবা শুরু করতে যাচ্ছে ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিঙ্ক। তাদের স্যাটেলাইট প্রযুক্তি দেখাতে স্টারলিঙ্কের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এবং আইসিটি বিভাগের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।


আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সরকার ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্টারলিঙ্ক পরিষেবা নিয়ে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরু করতে পারে। গতকাল বুধবার স্পেসএক্সের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার জোয়েল মেরিথ ও গ্লোবাল লাইসেন্সিং অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন ম্যানেজার পার্নিল উর্ধাওরেসের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।


দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকায় বসবাসরত মানুষের মধ্যে ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে স্পেসএক্স স্টারলিঙ্ক পাইলট প্রোগ্রাম শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।


স্পেসএক্স স্টারলিঙ্কের কর্মকর্তারা রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট পরিষেবার মান দেখান। আইসিটি টাওয়ারের ছাদে একটি স্টারলিঙ্ক অ্যানটেনা বসিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী ইন্টারনেটের গতি প্রত্যক্ষ করেন। প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এসময় প্রথমবার ১৫০ এমবিপিএস ডাউনলোড গতি পেয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়বার পেয়েছেন ৫০০ এমবিপিএস।


প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ককে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ জানাতে চান- সেটি প্রতিনিধি দলকে বলেছেন।


এর আগে গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝিতে স্পেসএক্সের ইন্টারনেট পরিষেবা আরো বিস্তৃত করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। স্পেসএক্সের টুইটে স্টারলিঙ্কের সেবা কতটুকু বিস্তৃত হচ্ছে, সে বিষয়ে একটি মানচিত্র শেয়ার করা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০২৩ নাগাদ স্টারলিঙ্কের সেবা সহজলভ্য হবে।


স্টারলিঙ্কের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, গত বছরই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে প্রি-অর্ডার গ্রহণ করেছে। ৯৯ ডলারে প্রি-অর্ডারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সমস্যা দেখা দিলে পুরো অর্থ রিফান্ড করারও আশ্বাস দেওয়া হয় ওয়েবসাইটটিতে।


এছাড়া গত ১৫ জুলাই রাতে ঠাকুরগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় ফোঁটা ফোঁটা আলোর চলন্ত বিন্দুর দৃশ্য দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। আকাশের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় ১০ মিনিট এ দৃশ্য দেখা যায়। পরে জানা যায়, এটি ইলন মাস্কের ‘স্টারলিঙ্ক প্রজেক্টের স্যাটেলাইট ট্রেন’। ৬০টি স্যাটেলাইটের দীর্ঘ সারি দেখা গিয়েছিল।


২-৩ মাসের ট্রায়াল দেখে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ স্টারলিংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করা হচ্ছে, আগামী শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি স্টার্টআপ ইভেন্টে স্টারলিংক টিম যোগ দেবে।


স্টারলিঙ্ক মূলত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের (ভূ–স্থির উপগ্রহ) মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার একটি প্রকল্প। এখন পর্যন্ত ৬০টি দেশে স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। ইলন মাস্কের বাণিজ্যিক রকেট পরিষেবা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ২০১৯ সাল থেকে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শুরু করেছে। এরই মধ্যে তারা ৪ হাজার ৫১৯টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করেছে। প্রাথমিক পরিকল্পনায় প্রায় ১২ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও পরবর্তীতে ৪২ হাজারটি কক্ষপথে স্থাপনের কথা বলেছে স্পেসএক্স। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীতে অবস্থিত অ্যানটেনার মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করবে।


যেভাবে কাজ করে স্টারলিঙ্ক
স্টারলিঙ্কের অনেকটা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মতো কাজ করে। পৃথিবীর লো অরবিটে স্থাপিত অনেকগুলো ভূ–স্থির স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর কক্ষপথে এসব স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। স্যাটেলাইটগুলো মূলত টেলিভিশন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ফোন ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলো ছোট ছোট স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে নির্দিষ্ট স্থানে থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সমান গতিতে প্রদক্ষিণ করতে থাকে।


পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে অন্য কোনো কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ করতে হলে, প্রথমে স্টারলিঙ্ক গ্রাহকের কম্পিউটার থেকে রিকোয়েস্ট কাছাকাছি স্যাটেলাইটে যায়। এরপর সেই রিকোয়েস্ট সেলুলার নেটওয়ার্কের মতো একটা থেকে আরেকটা স্যাটেলাইট হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে (সার্ভার) পৌঁছায়। এরপর কাঙ্ক্ষিত তথ্য নিয়ে একই পদ্ধতিতে গ্রাহকের কম্পিউটারে (মোবাইল বা আইওটি) ফিরে আসবে। এভাবে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যায়। এমনকি দুর্গম পাহাড় বা জঙ্গলেও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যাবে। ফলে পুরো পৃথিবী উচ্চগতির ইন্টারনেটের আওতায় আসবে।


স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট কানেকশন নিতে হলে টিভির ডিশ অ্যানটেনার মতো একটি অ্যানটেনা লাগাতে হয়। এই অ্যানটেনা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। ওই অ্যানটেনা থেকে একটি ক্যাবল গ্রাহকের ঘরে রাখা স্টারলিঙ্কের ওয়াইফাই রাউটারে লাগিয়ে ইন্টারনেট উপভোগ করা যায়।


স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেটের গতি কেমন
স্টারলিঙ্ক ছোট উপগ্রহের একটি অ্যারের (সারি) মাধ্যমে সীমাহীন উচ্চ-গতির ডেটা সরবরাহ করে। গতি প্রতি সেকেন্ডে ১৫০ মেগাবিট (১৫০ এমবিপিএস)। স্পেসএক্স এই হার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করেছে।


উকলা (ookla) স্পিডটেস্ট অনুসারে, স্টারলিঙ্ক লিথুয়ানিয়ায় ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ১৬০ এমবিপিএস ডাউনলোড গতি রেকর্ড করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৯১ এমবিপিএস, কানাডায় ৯৭ এমবিপিএস এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১২৪ এমবিপিএস পাওয়া গেছে। মেক্সিকোতে স্টারলিঙ্কের গতি রেকর্ড করা হয়েছে গড়ে ১০৫ দশমিক ৯১ এমবিপিএস।


স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেটে খরচ কত
আবাসিক সেবা: এই প্যাকেজটি আবাসিক ব্যবহারের জন্য। হার্ডওয়্যারের (ডিশ এবং রাউটার) জন্য এককালীন চার্জ ৫৯৯ ডলার। প্রতি মাসে সাবস্ক্রিপশন ফি ১১০ ডলার।


বাণিজ্যিক গ্রাহক: ব্যবসায়িক প্যাকেজটিতে আবাসিক প্যাকেজের দ্বিগুণ গতি পাওয়া যাবে। এর জন্য এককালীন চার্জ ২ হাজার ৫০০ ডলার। প্রতি মাসে ফি ৫০০ ডলার।


স্টারলিঙ্ক আরভি: ২০২২ সালের জুনে ইউএস ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন স্পেসএক্সকে বিনোদনমূলক যানবাহন, এয়ারলাইনস, জাহাজ এবং ট্রাকসহ চলন্ত যানবাহনগুলোর সঙ্গে স্টারলিঙ্ক ব্যবহার করার জন্য অনুমোদন দেয়। ভ্রমণের সময়ও এ সেবা নিতে পারবে মানুষ। এর জন্য প্রতি মাসে ১৩৫ ডলার খরচ হবে। আর হার্ডওয়্যারের জন্য দিতে হবে একককালীন ৫৯৯ ডলার। স্টারলিঙ্ক আরভি বর্তমানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com