আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বিপদ সংকেত দিয়ে গুগল ছাড়লেন হিনটন
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৩, ১৬:৫৫
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বিপদ সংকেত দিয়ে গুগল ছাড়লেন হিনটন
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সক্ষমতা নিয়ে নিজের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন এআই এর পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত জেফ্রি হিনটন। ৭৫ বছর বয়সী হিনটন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের উন্নয়নে তার যা কাজ, সে জন্য এখন তার অনুশোচনা হচ্ছে। সারা জীবন কাজ করেছেন কৃত্রিম মেধা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) নিয়ে। পেয়েছেন একাধিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের ‘গডফাদার’ হিসেবে সবাই তাকে চেনে। তবুও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপকারিতা এবং ঝুঁকি নিয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলার জন্য গুগল থেকে পদত্যাগ করেছেন হিন্টন। এআই এর ক্রমবর্ধমান বুদ্ধিমত্তার কারণে ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে সেটি নিয়ে শঙ্কিত এইবিজ্ঞানী।


কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যুগান্তকারী কাজের জন্য২০১৮ সালে‘ট্যুরিং অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছেন জেফ্রি। কিন্তু এখন তার দাবি, তিনি যে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছেন তার পরিণতি ভয়ংকর। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, এআই চ্যাটবটগুলো এখন এমন বিপজ্জনক মাত্রায় বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে, যা রীতিমতো আতঙ্ক জাগানোর মতো। এখনো তারা আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আমার মনে হয়, শিগগিরই তারা আমাদের ছাড়িয়ে যাবে।


মার্কিনসংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হিন্টন জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার করছে সমাজের একাংশ। ভুয়া ছবি এবং খবর তৈরিতে যেভাবে এআই ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হিন্টন। তিনি জানান, এআই শিল্পে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণে সবাই নতুন নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন। যার ফলে এত বেশি পরিমাণ এআই টুল ইন্টারনেটে আসছে যে এদের সঠিকব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, ফলে প্রচুর অপব্যবহার করা হচ্ছে এই শক্তিশালী টুলগুলোর।


ব্রিটিশ-কানাডিয়ান কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী জেফ্রি হিনটন এখন মনে করছেন, মানুষের মস্তিষ্ক যতটা তথ্য ধারণ করতে পারে, শিগগিরই তাকে ছাড়িয়ে যাবে চ্যাটবট। ফলে বিশ্বব্যাপী ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই বাড়তে পারে। চাকরির অভাব দেখা দিতে পারে। চাকরির অভাব ছাড়াও কৃত্রিমমেধার এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে ইন্টারনেটে বিদ্যমান বিষয়বস্তুগুলো এতটাই নিঁখুত হয়ে উঠবে যে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা সেটি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হবে।


ব্রিটিশ-কানাডিয়ান কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী জেফ্রি হিনটন এক দশক আগে তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা গুগলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি কেন এত দিন পরে গুগল ছাড়লেন সে সম্পর্কে কিছু বলেননি। তবে তিনি টুইটারে টুইট করে জানান, ‘আমি গুগল ছাড়লাম এ জন্য, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তৈরি হতে চলা সংকটজনক পরিস্থিতি নিয়ে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি। এর প্রভাব যেন গুগলে না পড়ে, তাই আমি সংস্থা থেকে পদত্যাগ করেছি। তবে আমাকে স্বীকার করতেই হবে, এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুগল অত্যন্ত দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে।’


নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে হিনটন সেইসব ‘দুষ্ট লোকের’ বিষয়েও সতর্ক করেছেন, যারা খারাপ কাজে এআই ব্যবহার করতে পরে। ব্যাখ্যা করে বিবিসিকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যদি সবচেয়ে খারাপ হয়, তখন এমনটা হতে পারে। মনে করুন, (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিনের মতো বাজে লোকদের কেউ রোবটদের নিজস্ব লক্ষ্য ঠিক করার ক্ষমতা দিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত সেই নিজস্ব লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াবে এ রকম– ‘আমার আরো ক্ষমতা চাই।’


যেরকম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমরা তৈরি করছি, তা ধরনের দিক দিয়ে আমাদের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। তিনি আরো বুঝিয়ে বলেন, ধরুন আপনার দলে ১০ হাজার লোক আছে, তাদের মধ্যে কেউ একজন যখন নতুন কিছু শিখছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে দলের বাকি সবাই সেটা শিখে ফেলছে। আর এভাবেই এ পদ্ধতিতেই চ্যাটবটগুলো মানুষের চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছে।


বিবার্তা/নিলয়

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com