
কোরবানির আভিধানিক অর্থ কাছে যাওয়া বা নৈকট্য অর্জন করা।ইসলামি ফিকহের পরিভাষায় কোরবানি হলো জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম ১০ জিলহজ সকাল থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসার পণ্যের মালিক থাকেন- তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হবে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর কোরবানির বিধান অবতীর্ণ হয়। তিনি প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার ১০ বছর জীবনের প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। (তিরমিজি: ১৫০৭)
নবীজি (সা.)-এর কোরবানি
কোরবানি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ইবাদত। প্রথম মানব ও নবী আদম (আ.)-এর যুগেই যার প্রচলন ঘটেছিল। বিশুদ্ধ মতে, মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর মুসলিম উম্মাহর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও কোরবানির আমল ত্যাগ করেননি।
নবীজির কোরবানির পশু যেমন ছিল
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির জন্য দৃষ্টিনন্দন পশু নির্বাচন করতেন, যা সব বিচারেই উত্তম ছিল। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধূসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২২)
নবীজি যে-সব পশু দ্বারা কোরবানি করেছেন
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক পশু দ্বারা কোরবানি করেছেন। হাদিসে যেসব পশুর বর্ণনা পাওয়া যায় তা হলো—
১. গরু: হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় স্ত্রীগণের পক্ষ থেকে গাভি দ্বারা কোরবানি করেছেন। (বুখারি: ২৯৪)
২. মেষ বা ভেড়া: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধূসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন। (ইবনে মাজাহ: ৩১২২)
৩. দুম্বা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাতে দুম্বা কোরবানি করেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯২)
৪. উট: বিদায় হজে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য ১০০টি উট কোরবানি করেন। যার ৬৩টি তিনি নিজে জবাই করেন আর বাকিগুলো হযরত আলী (রা.) জবাই করেন। (ত্বহাবি: ৬২৩৬)
৫. ছাগল: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগল দ্বারা তার নাতি হাসানের আকিকা করেছেন এবং সাহাবিদের ছাগল দ্বারা কোরবানি করার অনুমতি দিয়েছেন। এ ছাড়া ফকিহ আলেমরা গরু প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত এবং গৃহপালিত হওয়ায় মহিষ দ্বারা কোরবানি করা বৈধ বলেছেন।
নবীজি নিজ হাতে কোরবানি করতেন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে (কোরবানির পশু) জবাই করতেন ও (উট হলে) নহর করতেন।’ (বুখারি: ৫৫৫২)
নবীজি যেভাবে কোরবানি করতেন
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা, ছুরি দাও। এরপর বললেন, এটা পাথরে ঘষে ধারালো কর। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এটা করলাম। তিনি ছুরি নেন, দুম্বাকে ধরে কাত করে শোয়ান এবং জবাই করার সময় বলেন, ‘বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ, আপনি এ কোরবানি মুহাম্মদ, মুহাম্মদের পরিবার ও তার উম্মতের পক্ষ হতে কবুল করুন।’ অতঃপর তিনি দুম্বাটি কোরবানি করলেন। (আবি দাউদ: ২৭৯২)
নবীজি কোরবানির গোশত খেতেন
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোরবানি থেকে নিজেও খেতেন, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও অসহায় মানুষকে খাওয়াতেন। আর তিনি উম্মতকেও তার নির্দেশ দিয়েছেন। (আউনুল মাবুদ: ৭/৩৪৫)
নবীজির কোরবানির গোশত বিতরণ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবারকে কোরবানির এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন, প্রতিবেশীদের এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন আর ভিক্ষুকদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সদকা করতেন। (আল-মুগনি : ৯/৪৪৯)
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]