শিরোনাম
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ: আ.লীগের নির্বাচনী ইশতেহার
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:১০
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ: আ.লীগের নির্বাচনী ইশতেহার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকারের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।


শেখ হাসিনা মঙ্গলবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রাজনীতিবিদ, শিল্পী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনিতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশপার জনগণের উপস্থিতিতে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।


ইশতেহারে দুই ধরনের কৌশলগত পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে বঙ্গবন্ধু এবং লাখো শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ৩৩টি ক্ষেত্রের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।


দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহবায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।


শেখ হাসিনা ইশতেহার ঘোষণাকালে অতীতের ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করেন।


তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। আমি নিজে এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোনো ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।


তিনি আরো বলেন, আমি কথা দিচ্ছি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরো সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাঙ্খিত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, নিরক্ষরতা মুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।


এবারের ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার নিয়ে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শিরোনামে গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই ইশতেহারের নাম দেয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।’


একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়-পরায়নতা এবং জনসেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


গ্রামে আধুনিক সুবিধার উপস্থিতি, শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য খাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।


এবারের ইশতেহারের মূল বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে তারুণ্য এবং গ্রামের উন্নয়ন। প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা নিশ্চিতকরণ, তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।


এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারে নারীর ক্ষমতা, লিঙ্গসমতা ও শিশুকল্যাণ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে।


আগামী পাঁচ বছরে দলটি পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন করতে চায়। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করাসহ দেশে আর একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।


গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার এবং ‘ফাইভ-জি’ চালু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ।


এছাড়া রয়েছে দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, ব্লু-ইকোনমি এবং সমুদ্র উন্নয়ন করার অঙ্গীকার।


মা-বাবা, ভাই ও আত্মীয় পরিজনকে হারানোর পর তার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ইশতেহার ঘোষণায় বলেন, আমি রাজনীতি করছি শুধুমাত্র জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।


আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন পায়, তাদের জীবন সমৃদ্ধশালী হয়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং বঞ্চনা থেকে তারা যেন মুক্তি পায়, তাদের জীবনটাকে আরো উন্নত করা- এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র কামনা।


যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই আদর্শ তিনি বাস্তবায়ন করতে চান উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা সাড়ম্বরে পালন করবো।


তিনি বলেন, বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে, পারবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে।


তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি এ সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গ্লানিকর। তাই দেশবাসীর কাছে আমার আকুল আবেদন আগামী ৩০ তারিখে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করুন।


শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিন। আমরা আপনাদেরকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে দেব।


২০০১ সালের আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ২০০১–পরবর্তী পাঁচ বছর ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এ দেশের সাধারণ মানুষের এক বিভীষিকাময় সময়। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, জনজীবন ছিল অতিষ্ঠ।


তিনি আরো বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার, খুলনার অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, নাটোরের মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করে হাওয়া ভবন তৈরি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও পাচার করা হয়।


তিনি অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাই, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদসহ নানা ধরনের জঙ্গিগোষ্ঠী সৃষ্টি করা হয়। রমনা বটমূলে নববর্ষের অনুষ্ঠান, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও পল্টনে সিপিবির সমাবেশ বোমা হামলা। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বোমা হামলা করে হত্যাচেষ্টা এবং ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা, একই বছর গাজীপুরে বোমা মেরে ১০ জনকে হত্যা, শরীয়তপুরে দুই বিচারকসহ সারা দেশে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এসব জঙ্গিগোষ্ঠী।


গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগের র‍্যালিতে নৃশংস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রাণে রক্ষা পেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৫০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়, আহতদের অনেকেই এখনো অসংখ্য স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় দিন যাপন করে যাচ্ছে।


নিজ দলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সাতটি বছর অতিক্রম করে ২০০৯ সাল থেকে আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা আবারো সমৃদ্ধির, অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ, স্লোগানসংবলিত নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।


তিনি বলেন, আমরা আমাদের ইশতেহার এমনভাবে তৈরি করেছি, যাতে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারি। একইসাথে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা ২০১৮-এর নির্বাচনে ইশতেহারেও সংরক্ষিত রয়েছে।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com