সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে একটি টেলিভিশনের টকশোতে দেয়া বক্তব্যটি ভুল বলে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে তিনি বলেন, আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও মর্মাহত।
এর আগে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসত্য ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠায় সেনাসদর দফতর।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, সময় টেলিভিশনের টকশোতে আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমানে সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না ‘কমান্ডডেন্ট’ও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল হয়নি। একবার কোর্ট অব এনকোয়ারি হয়েছিল। ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তিরিক দুঃখিত ও মর্মাহত।
তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী বা জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। এরূপ কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়েছি এবং যুদ্ধ শেষে আমিও প্রথম কুমিল্লা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি। পরে আমি ও ডা. আজিজুর রহমান ঢাকা কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতাল চালু করি।
তিনি আরো বলেন, জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করার কোনো চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না। আমি খোলা মনে আরো বলেছিলাম, তার ছোট ভাই শীর্ষ সন্ত্রসী জোসেফের দায় দায়িত্ব জেনারেল আজিজের ওপর বর্তায় না। চরম দণ্ডপ্রাপ্ত জোসেফের দণ্ড থেকে মুক্ত করেছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জেনারেল আজিজকে আমি অসাবধানতাবশত কোনো মনোকষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ প্রয়োজন যে, আমি ইতোমধ্যে বিগত দুই দিন কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাটের বিষয় প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। চূড়ান্তভাবে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতেই এই সংবাদ সম্মেলন।
৯ অক্টোবর রাত ১০টায় সময় টিভির একটি টকশোতে ডা. জাফরুল্লাহ বলেছিলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন ‘চট্টগ্রামের জিওসি’ ছিলেন, সেখান থেকে ‘সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি’ যাওয়ার ঘটনায় তার ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়েছিল।
এদিকে সেনাসদর থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি সেপ্টেম্বর ২০১০ হতে জুন ২০১১ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন, জুন ২০১১ হতে মে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং মে ২০১২ হতে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এতে আরো বলা হয়, বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।
সেনাসদরের প্রতিবাদলিপিতে জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়, ওই বক্তব্য সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয়।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]