
'৭৫-এর ঘাতকরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তারা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু বাংলার মানুষ তা হতে দেবে না, ঢাকা-৪ নির্বাচনি এলাকার মানুষ তা হতে দেবে না। আমরা বেঁচে থাকতে বঙ্গবন্ধুকন্যার গায়ে আঁচড় লাগতে দেব না। আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আছি, থাকব।
২৬ জুলাই, শুক্রবার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-৪ পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম এমপি।
কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ সারাদেশে বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালিয়েছে। একইভাবেঢাকা-৪ আসনেও তাণ্ডব চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নিজ নির্বাচনি এলাকার দোলাইপাড় গোল চত্বর, বিক্রমপুর প্লাজা এবং পোস্তগোলার নেতৃবৃন্দের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে পরিদর্শনে যান তিনি।
এসময় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ বলেন, সাধারণ ছাত্রদের যে দাবি ছিল সেই দাবি আওয়ামী লীগেরও ছিল। যে কারণে ২০১৮ সালে এই সাধারণ ছাত্রদের দাবি পূরণ করেছিলেন জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার সেসময় কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন। সেই প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা কোটা বহাল করার জন্য রিট করেছিল। সেই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের এক রায়ে সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছিল। যেদিন প্রজ্ঞাপন বাতিল হয় সেইদিনই হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন এটর্নি জেনারেল। অর্থাৎ সাধারণ ছাত্রদের যে দাবি সেই দাবি আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও ছিল।
পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী রায় দিয়েছেন। সেখানে ৯৩% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য রেখেছেন। ৫% দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য, আর ১% দিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উপজাতিদের জন্য। বাকি ১% দিয়েছেন প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য।
তিনি বলেন, চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেটিই ছাত্রদের আন্দোলনের দাবি ছিল এবং সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা তা মেনে নিয়েছে। এই রায় হওয়ার পর এসব তাণ্ডব হওয়ার কথা ছিল না। সাধারণ ছাত্ররা ঘোষণা দিয়েছে এই জ্বালাও পোড়াও এর সাথে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার পিছনে তাদের হাত নেই। তাহলে এর পিছনে কারা আছে? যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, ঐ রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের উত্তরসূরিরা এই ধ্বংসলীলা চালিয়েছে।
এডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, গতকাল বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলেন। ঢাকাবাসীর জন্য এই মেট্রোরেল ছিল আশীর্বাদ। মেট্রোরেলের কারণে সাধারণ মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারত। নগর জীবনের স্বস্তি ছিল মেট্রোরেল। বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসীরা সেই মেট্রোরেলের কী অবস্থা করেছে তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না। পুনরায় মেট্রোরেলের দুই স্টেশন চালু করতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল প্রযুক্তি অপব্যবহার করে এই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা গুজব ছড়াতে চেয়েছিল। সেটা পারেনি বলে তারা ইন্টারনেটের পুরো ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিল। গুজব ছড়াতে ব্যর্থ হয়ে তারা ডাটা সেন্টার পুড়িয়ে দিল। মানুষের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিল। এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপনারা সবাই মিলে সরকারকে সাহায্য করুন।
এমপি বলেন, সাধারণ ছাত্রদের দাবি সরকার মেনে নিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। ছাত্ররা যেখানে সব মেনে নিয়েছে সেখানে বিএনপি জামাত তা মানতে পারছে না। এই সন্ত্রাসীরা টার্গেট করে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়েছে, থানা পুড়িয়েছে, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ফ্লাই ওভারে ঝুলিয়ে রেখেছে। এ কেমন জিঘাংসা, এ কেমন নির্যাতন, প্রশ্ন এডভোকেট সানজিদা খানমের।
তিনি আরো বলেন, এ দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসীরা, এদেরকে মাফ করা যায় না। রাষ্ট্রের সম্পদ যারা ধ্বংস করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের সাথে সাধারণ ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা-৪ নির্বাচনি এলাকায় এই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি উল্লেখ করে এডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে ছিলাম বলেই অপশক্তিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন, ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।
বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের সাবধান করে দিয়ে তিনি বলেন, ঘরে ফিরে যান, আর রাষ্ট্রীয় সম্পদে হাত দিবেন না, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গায়ে হাত দিবেন না। অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় আসার সাহস দেখাবেন না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। ক্ষমতায় আসার একটাই উপায়, আর সেটা হলো নির্বাচন। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আসুন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চান। নির্বাচনে জনগণ আপনাদের ভোট দিলে আপনারা ক্ষমতায় আসবেন।
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যদি শেখ হাসিনার কর্মী হয়ে থাকেন তাহলে মাঠে থাকেন। স্ত্রী করা পাঞ্জাবি পরে ঘুরে না বেরিয়ে রাজপথে থেকে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করুন, আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনা পালন করুন।
পরে তিনি পোস্তগোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পরিদর্শন করেন। এসময় স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। তাদের খোঁজ-খবর নেন এবং যেকোনো প্রয়োজনে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার কথা বলেন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ দ্রুত শেষ করার আশ্বাস দেন।
বিবার্তা/মোবারক/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]