শফি আহমেদকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায়
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ১৭:৪৫
শফি আহমেদকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায়
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফি আহমেদকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন তার সহযোদ্ধারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।


৪ জুন, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় শফি আহমেদের কফিন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।


এর আগে বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদের জানাজা হয়।


যাদের সাহসী নেতৃত্বে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল, তাদের মধ্যে শফি আহমেদ উজ্জ্বল এক নাম। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম শীর্ষ নেতা।


সোমবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।


পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে শফি আহমেদের মৃতদেহ তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার মদনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে বুধবার তাকে দাফন করা হবে।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির একদল নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শফি আহমেদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।


পরে সাংবাদিকদের বলেন, “শফি আহমেদ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বিশ্বাসী প্রগতিশীল চিন্তার একজন মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পতাকা তলে সমবেত হন। সেই থেকে তিনি আওয়ামী লীগের একজন বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শক্তির পক্ষে কাজ করেছেন।


“সাম্প্রদায়িক শক্তি, অগণতান্ত্রিক শক্তি এবং যারা বাংলাদেশ বিরোধী রাজনীতি করেছে, তাদের বিপক্ষে তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি একজন বিচক্ষণ ছাত্র নেতা ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে একটা শূন্যতা তৈরি হল, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।”


শফি আহমেদের স্ত্রী খন্দকার তাহেরা খাতুন লিপি বলেন, “আমরা জানি তিনি দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। অনেকে তার রাজনীতিতে অপ্রাপ্তি আছে মনে করেন। কিন্তু তিনি সব সময় বলতেন, ‘যে রাজনৈতিক আদর্শ আমার আছে, আমি সেটা বুকে ধারণ করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাঁচতে চাই।’ আমার সন্তানদেরও উনি সেই শিক্ষা দিয়েছেন।”


সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “স্বৈরাচার সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথরের প্রক্রিয়া থেকে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি কাজ করেছেন। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াই, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং এদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িকে শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার তার যে স্বপ্ন, তা থেকে তিনি এক মুহূর্তের জন্য বিচ্যুত হননি। তরুণ বয়সে যে আদর্শকে বুকে ধারণ করেছিলেন, সেই আদর্শ মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বজায় রেখেছেন।”


স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “শফি আহমেদ ১৯৮০-৯০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন আলোচিত ও সাহসী নেতা ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক। খুবই সাদামাটা তার জীবনযাপন ছিল।


“স্বৈরাচারের দোসর ও খুনিরা যখন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করল, হামলা করল, তখন শফীসহ সেই সময়ের নেতারা ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিলেন। একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সমন্বয় করা, আন্দোলনের বাঁকে বাঁকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত দেওয়া, সাহস জোগানো সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অতুলনীয়।”


বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরুদ্দিন স্বপন বলেন, “শফি আহমেদ আমাদের সময়কার জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিল। আমি তখন বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সে একজন প্রথম সারির নেতা ছিল। তার একটা বড় গুণ ছিল, প্রচলিত আন্দোলন, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তৎপরতার বাইরে একটা ব্যতিক্রমধর্মী ভূমিকা ছিল, যা চূড়ান্তভাবে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছে।”


শফি আহমেদ ১৯৮৯-৯১ মেয়াদে জাসদ ছাত্রলীগের যে কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন নাজমুল হক প্রধান।


নিজের সহযোদ্ধাকে বিদায় জানাতে এসে তিনি বলেন, “শফি বয়সে অনেক ছোট হলেও নেতৃত্বে অনেক পাকা ছিল। আমি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলাম, তখন সে সেক্রেটারি ছিল। তার নেতৃত্ব ছিল অতুলনীয়, যা পরিমাপ করা যাবে না। তার অকাল মৃত্যুকে খারাপ লাগছে।”


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ, বাসদ, জেএসিড, ঐক্য ন্যাপ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুবমৈত্রী, সমাজচিন্তা ফোরাম, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণ সংগীত পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শহিদ মিনারে শফি আহমেদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।


বিবার্তা/সউদ



সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com