তিন ইউনিয়নে কমিটি দেওয়ার নাম গন্ধ নেই!
ভারে ভারাক্রান্ত কর্ণফুলী যুবলীগ!
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪, ২৩:০৫
ভারে ভারাক্রান্ত কর্ণফুলী যুবলীগ!
চট্টগ্রাম থেকে জে. জাহেদ
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম কর্ণফুলীতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সাড়ে ৫ বছর আগে। তারপর ঠিক ১২ মাস আগে এই কমিটির হাল ধরেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার। যদিও পূর্বে তিনি কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।



অন্যদিকে, যুবলীগকে বিদায় জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও যুবলীগ ছাড়তে রাজি নন তিনি। তারা দুজনে কর্ণফুলী যুবলীগের দায়িত্ব নিয়ে দুই ইউনিয়নে (জুলধা-চরপাথরঘাট) পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিলেও এখনো তিন ইউনিয়নে কমিটি দিতে পারেননি। সম্মেলন করে কমিটি দিতে না পারাটা ব্যর্থতা বলে অভিযোগ করেছে অনেকে।


যদিও উপজেলা যুবলীগ আড়ালে-আবডালে স্বীকার করছে, তারা কমিটি দিতে চেষ্টা করলেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। কেননা, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ঘোর আপত্তি জানাচ্ছেন। বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। আবার দক্ষিণ জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতারাও কর্ণফুলীর কমিটি নিয়ে নানা হিসাব নিকাশ মাথায় রেখেছেন। ফলে, এই দুই কারণে সহজে কমিটি পাচ্ছে না শিকলবাহা, বড়উঠোন ও চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন।


কমিটি দিচ্ছে না এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহুর বিবার্তাকে বলেন, 'আমরা তো উপজেলা কমিটিকে বলে দিয়েছি কমিটি দিয়ে দিতে। কিন্তু তারা কেন দিচ্ছে না- সেটা তারা ভালো জানবেন। কারণ ইউনিয়ন কমিটি দেবে উপজেলা যুবলীগ। আপনারা উপজেলা নেতাদের সাথে কথা বলুন।'


চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ নেতার এমন কৌশলী বক্তব্য সহজ শোনালেও আপাতদৃষ্টিতে এটা স্পষ্ট, এক বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকই চালাচ্ছেন কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগ! এটা কী এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়- এই মুহূর্তে কর্ণফুলী যুবলীগের নেতৃত্ব আসার মতো কোন নেতা নেই? না অন্য কিছু!


সূত্র জানায়, সাংগঠনিক কার্যক্রমে চাঙ্গা ভাব ফেরাতে হলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পদ পদবি দেওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, যদি বর্তমান উপজেলার কমিটি বাকি তিন ইউনিয়নে কমিটি দিতে না পারে, তাহলে যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগও।


যুবলীগের নেতাকর্মীরা বলেছেন, গত একযুগ থেকে ইউনিয়ন যুবলীগের ক্ষীণ অবস্থানকে গতিশীল ও সক্রিয় করতে রাজনীতির মাঠে ত্যাগী নেতাকর্মীদের পদে আনা জরুরি হলেও সেটা সহজে বাস্তবায়ন করতে পারছে না ভারে ভারাক্রান্ত সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা। এক কথায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তিন ইউনিয়নে কমিটি দিতে নানা গড়িমসি ও হিসাব কষছেন তারাও।


তিন ইউনিয়নে তৃণমূল পর্যায়ের যুবলীগে পদপ্রত্যাশী এমন একাধিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মন ভেঙে গেছে। তারা হতাশায় ভুগছেন। অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। কারণ সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের ছাত্রত্ব শেষে যুবলীগ করার অপেক্ষায় এমন একাধিক ছাত্রনেতার রাজনীতির পথ রুদ্ধ হচ্ছে।


যদিও কয়েকমাস আগে চট্টগ্রামে সাংগঠনিক সফরে এসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ জানিয়েছিলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যুবলীগকে সুসংগঠিত করতে হবে। যুবলীগের কমিটিতে ত্যাগী নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। নিষ্ক্রিয় কর্মীদের যেন স্থান দেওয়া না হয়। বিতর্কিত কোন লোককে যেন পদ দেয়া না হয়। কিন্তু সে কথার বাস্তবায়ন দেখছে না তৃণমূল।


এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিক নির্দেশনাও কর্ণফুলী যুবলীগ মানছে না। যদিও তাদের কমিটিরই মেয়াদ নেই। ফলে তারেই তো নতুন কমিটি গঠনের চিন্তা করেছেন। দিচ্ছেন দেবেন শিগগিরই হচ্ছে- এমন সব বার্তায় হযবরল অবস্থা। কর্ণফুলীতে উপজেলা যুবলীগে ৭১ সদস্যের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৭ জানুয়ারি।


ফলে, উপজেলা যুবলীগের অনেক নেতাকর্মীরা চান, বিতর্কিত নেতাদের দূরে সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির। কেননা, দীর্ঘদিন একই ব্যক্তিরা দায়িত্বে থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যুবলীগের কিছু নেতা।


যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয় ও নিজে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়ে কীভাবে যুবলীগ চালাচ্ছেন এমন প্রশ্ন করলে কাগজে কলমে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সেলিম হক বিবার্তাকে বলেন, ‘জেলা কমিটি যদি সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে তাহলে অবশ্যই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হবে। তবে যতটুকু জানি জেলার সব ইউনিয়নের সম্মেলন এখনো হয়নি। পুরো জেলায় ইউনিয়নের সম্মেলন হলে তারপর উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন হবে। যুগ্ম সম্পাদক আওয়ামী লীগের মূল পোস্ট না হওয়াতে আওয়ামী লীগে এখন না গেলেও আমার তেমন প্রভাব পড়বে না দলে। তাই যুবলীগে এখনো আছি। তা ছাড়া যুবলীগের গঠনতন্ত্রে আওয়ামী লীগে থাকলেও যুবলীগে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না এই ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই।’


ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ নাজিম উদ্দিন হায়দার বিবার্তাকে বলেন, ‘আগে কর্ণফুলী যুবলীগ কেমন ছিল তা আমি বলব না। বর্তমান যুবলীগকে শক্তিশালী ও উজ্জীবিত করতে গত আগস্ট মাস জুড়ে আমরা কর্মসূচি পালন করেছি। আমি দায়িত্ব নেবার পর দুই ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছি। কেন্দ্রের সকল কর্মসূচি পালন করছি। জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছি। আমি যুবলীগকে একটা ব্র্যান্ডে পরিণত করতে চাই। অন্যদিকে, তিন ইউনিয়নে কমিটি দিতে পারছি না সেই ব্যর্থতা আমাদের। সফলতা নেতাদের।'


তিন ইউনিয়নে কমিটি দিতে বাঁধা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেলেও এ বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগের তীর তাক করে রেখেছেন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের উপর। তাতে কোন সন্দেহ নেই।


বিবার্তা/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com