জাসদের জাতীয় কমিটির দুইদিনব্যাপী সভা শুরু
নতুন জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে: ইনু
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪৪
নতুন জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে: ইনু
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দুইটি জাতীয় কাউন্সিল মধ্যবর্তীকালে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কাঠামো জাতীয় কমিটির দুইদিনব্যাপী শুরু হয়েছে।


১৬ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শহিদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।


সভায় সভাপতিত্ব করছেন দলীয় সভাপতি জনাব হাসানুল হক ইনু। সভায় যোগ দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ, সকল সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ এবং বিশেষ আমন্ত্রণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলীয় প্রার্থীবৃন্দ।


সভার শুরুতেই দলীয় সভাপতি জনাব হাসানুল হক ইনু তার প্রারম্ভিক ভাষণে বলেন, বিএনপি-জামাত এবং তাদের দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক পার্টনারদের তীব্র বাঁধার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি বিরাট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ। বিএনপি-জামাতের অন্তর্ঘাত-নাশকতা-সহিংসতা-আগুন সন্ত্রাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কিছু আসনে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু প্রার্থীও পেশি শক্তি ও কালো টাকার ব্যবহার, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিকে জিতিয়ে আনার ঘটনা ঘটলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের সংবিধান সমুন্নত থেকেছে এবং দেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা মধ্যে ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত পরাজিত হয়েছে।


ইনু বলেন, ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে আসন এবং শরিকদের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে তাদের জিতিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের শক্তিশালী চক্র ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার ন্যাক্কারজনক নগ্ন ভূমিকাও পরিলক্ষিত হয়েছে।


ইনু আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে সংবিধান ও সাংবিধানিক শাসন পদ্ধতি সমুন্নত হলেও আজ রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজ-অর্থনীতিতে লুটেরা দুর্নীতিবাজ মাফিয়া সিন্ডিকেটের সর্বব্যাপক দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে, নিত্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে লুটেরা মাফিয়া-সিন্ডিকেট, রাজনীতি ও সমাজে কালো টাকা ও পেশি শক্তির দাপট বেড়েই চলেছে, রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবারতন্ত্র ও জ্ঞাতি সম্পর্কের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে।


রাজনীতি ও সমাজে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় অন্ধত্ব, কুসংস্কার আচ্ছন্নতা, বিজ্ঞান-শিক্ষা-যুক্তির বিরোধিতা, ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সংস্কৃতির বিরোধিতা সর্বগ্রাসী বিপদ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।


ইনু আরও বলেন, রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র ও জ্ঞাতি সম্পর্কেও প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভিত্তিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রবাহিত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবিদার রাজনৈতিক দলগুলিও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পরছে।


রাষ্ট্র-প্রশাসন-রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকে দুর্নীতিবাজ লুটেরা সিন্ডিকেটকে বিযুক্ত করা, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ছাতার নীচ থেকে লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের রেব করে দেয়া, নিত্যপণ্যের বাজারের উপর থেকে সিন্ডিকেটের প্রভাব ধ্বংস করা, আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের রাশ টেনে ধরা, জাতীয় প্রধান কর্তব্য হিসাবে হাজির হয়েছে।


দলীয় সভাপতি ইনু বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী দেশের এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা সিন্ডিকেট দমন, নিত্যপণ্যের বাজারের উপর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ধ্বংস, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সকল ধরনের বৈষম্য কমিয়ে আনা, রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র ও জ্ঞাতি সম্পর্কের প্রভাব মোকাবেলা করা, সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও বৈষম্য মোকাবেলা করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িকতা ও কালো টাকার ছোবল থেকে নিরাপদ করার পাশাপাশি দেশ পরিচালনা ও শাসন-প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ-ক্ষমতায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নতুন জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করাই সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির কর্তব্য।


জাসদ জাতীয় কমিটির সভায় শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জাসদের দলীয় প্রার্থীগণ তাদের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা উপর বক্তব্য রাখছেন। এরপর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যগণ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম এমপি, সহ-সভাপতি আফরোজা হক রীনাসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত আছেন। সভার শুরুতে প্রয়াত দলীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গের মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।


সভা রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৮টায় সমাপ্ত হবে।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com