'ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের শিক্ষা ও রাজনীতি মূল্যহীন'
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৩
'ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের শিক্ষা ও রাজনীতি মূল্যহীন'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, নিজের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থের জন্য যারা নিরীহ নিরুপায় মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে তাদের রাজনীতি তাদের শিক্ষা মূল্যহীন। যে মানুষের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ নেই সে কোনো সভ্য মানুষ হতে পারে না।


২ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ আয়োজিত অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনী শিল্পী সম্মিলন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।


বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে সকাল ১০.৩০ টায় এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।


হানিফ বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি তারা গতানুগতিক রাজনীতি করলে তার থেকে জাতি খুব প্রত্যাশিত কিছু পায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখিয়েছেন রাজনীতি করতে কতটা দূরদর্শী হতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন এই বাংলাকে সোনার বাংলা গড়ার, সেই স্বপ্ন তিনি পূরণ করেছিলেন এবং বাস্তবায়ন করেছিলেন দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ফলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই রাজনীতিবিদই সার্থক যিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং বাস্তবায়ন করেন। এর বাইরে অন্য রাজনীতিবিদের কোনো মূল্য নেই।



তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় ব্যাধি, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মানবিক মূল্যবোধ একদম তলানিতে চলে গেছে। সমাজে সবাই যান্ত্রিক জীবনযাপন করছে। শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবনায় চলে গেছে, সমাজ বা দেশকে নিয়ে ভাবনা একেবারেই নেই। সমাজের সকলের কল্যাণ হবে সেই শিক্ষা আমরা পাচ্ছি না, সেবামূলক মানসিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, সকলের মধ্যে অর্থটাই প্রাধান্য পাচ্ছে।


এক কানাডিয়ান ডাক্তারের কথা উল্লেখ করে হানিফ বলেন, মেয়েটি ডাক্তারি পড়া শেষে আবার নার্সিং ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হয়েছে, কারণ জানতে চাইলে সেই ডাক্তার মেয়েটি জানায় একজন ডাক্তারের চেয়ে একজন নার্স মানুষের সেবা করার সুযোগ পায় বেশি। সেবা করার মহান ব্রত থেকেই সে ডাক্তারি পড়েও নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে। কানাডিয়ান এই ডাক্তারের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই যে মানসিকতা এটাই প্রমাণ করে তার মানবিক মূল্যবোধ কতটুকু। আমাদের সমাজের চিত্র সম্পূর্ণ উলটো। এর কারণ, আমরা ছোটো থেকে বাচ্চাদের মধ্যে অর্থবিত্তের লোভ ঢুকিয়ে দিচ্ছি, তাদের মধ্যে এই চিন্তা ঢুকিয়ে দিচ্ছি যে তাকে পড়াশোনা করে বড় চাকরি, সরকারি চাকরি বা অর্থলাভ হবে এমন চাকরি করতে হবে এটাই শেখাচ্ছি বাচ্চাদের। তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করছি না।



তিনি বলেন, আজকের যারা খুদে, প্রতিভা যাদের আছে তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এই চিত্রাঙ্কনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের ইতিহাস জানার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমরা বলি, একটা ছবি অনেক কথা বলে, অর্থাৎ পিকচার টেইলস মিলিয়ন। ভাস্কর রাশার কথার সূত্র ধরে তিনি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ত্রিশ বছর পূর্বে একবার বন্ধুর সাথে বেইজিং গিয়েছিলাম, সব চাইনিজ ভাষায় লেখা। ছবি দেখিয়ে বুঝিয়ে তখন আমরা খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম। আসলে, ছবি অনেক শক্তিশালী। একটা ছবিই পারে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে, একটা ছবি ফিলিস্তিনে কীভাবে মানবতার লঙঘন হচ্ছে তা তুলে ধরে। অনেক অনেক কথার চেয়ে একটা ছবি সমাজে অনেক গুরুত্ব বহন করে। সেই ছবি যারা এঁকেছেন আমি চাইবো তাদের এই অঙ্কন অব্যাহত থাকুক। ছবি আঁকার মাধ্যমে তারা এই দেশকে বদলে দিবে বলেই তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, শ্রদ্ধা জানান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, শ্রদ্ধা জানান জাতীয় চার নেতার প্রতি, ১৯৭৫ সালে শহিদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি।


বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত অভিভাবকদের প্রতি তিনি নিবেদন জানান, প্রত্যেক সন্তানের প্রথম পাঠশালা তার বাসা, প্রথম শিক্ষক তার মা এবং তার বাবা। শুধু স্কুলের পাঠ একটি শিশুর জন্য যথেষ্ট নয়। একজন অনেক বড় পণ্ডিত হতে পারেন, অনেক শিক্ষিত হতে পারেন কিন্তু তার মধ্যে নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ না থাকে তাহলে সেই শিক্ষা মূল্যহীন।


হানিফ বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন আমরা মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে গড়ে তুলতে পারি। আজকের যারা শিশু-কিশোর ও তরুণ তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়বে। তাদেরকে এমন শিক্ষায়, মূল্যবোধে আমাদের গড়ে তুলতে হবে যাতে করে বাংলাদেশকে আমরা মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে এবং নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধ দিয়ে গড়ে তুলতে পারি। আজকে আমাদের দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেই ধারা যেন অব্যাহত থাকে সেই লক্ষ্যে সবাই উদ্বৃত্ত হতে কাজ করবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে।


অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপ-উপাচার্য ড. মো. শাহিনুর রহমান এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিথুন মোস্তাফিজ।


অনুষ্ঠানে সভামুখ্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন ভাস্কর রাশা।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com