প্রথম অধিবেশন ঘিরে আন্দোলনের নতুন ছক আঁকছে বিএনপি
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:২০
প্রথম অধিবেশন ঘিরে আন্দোলনের নতুন ছক আঁকছে বিএনপি
মাইদুর রহমান রুবেল
প্রিন্ট অ-অ+

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে গত এক বছর ধরে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করলেও ঠেকানো যায়নি নির্বাচন। নির্বাচন শেষে শপথ গ্রহণ ও মন্ত্রী পরিষদ গঠন হয়েছে দ্রুততম সময়ে। এরই মধ্যে প্রথম অধিবেশনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি বসবে দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন।


বছর জুড়ে আন্দোলন করলেও বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্তির খাতা এখনো শূন্য। নির্বাচন শেষে শম্বুক গতিতে চলছিল খেই হারা বিএনপি। তবে প্রথম অধিবেশকে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। এরই মধ্যে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দুই ধরনের প্রস্তাবনা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন ৩০ জানুয়ারি। ওই দিন কর্মসূচি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন প্রত্যাখান করা বিএনপি। সেদিন হরতাল-অবরোধ, বিক্ষোভ কিংবা প্রতিবাদ সমাবেশ, সংসদ অভিমুখে পদযাত্রা কিংবা সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। এরমধ্য দিয়ে নির্বাচনের পর মাঠের কর্মসূচিতে ফিরতে চায় দলটি।


সারাদেশে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতার হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে না পারায় এখন অনেকটাই দিশেহারা দলের নীতিনির্ধারকরা। দলটি সরকারবিরোধী আন্দোলন আবার গতিশীল করতে চাইলেও বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী কারাগারে থাকায় সেদিকে এগোতেও পারছে না। শুধু তা-ই নয়, এ মুহূর্তে ঠিক কী করা দরকার, সেটিই বুঝে উঠতে পারছেন না বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ ছাড়া দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ধর-পাকড়ের আতঙ্কে আছেন। এই অবস্থায় দলটির নীতিনির্ধারকরা আপাতত কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্ত করে ধীরেসুস্থে আন্দোলনের পথে এগোতে চান। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে।


বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বিবার্তাকে বলেন, এই সংসদ আমরা মানি না, অধিবেশনও মানি না। দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরামে বৈঠক হয়েছে- তারা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছে। জেলা-উপজেলার নেতাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কালো পতাকা মিছিল শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।


তিনি বলেন, আমরা তো শুক্র ও শনিবার কালো পতাকা মিছিল করব- তাতেও সরকারের ভয়, তারা বলছে হাড়ভাঙা জবাব দেবে। কেন তাদের এতো ভয়?


ফারুক বলেন, ৩০ তারিখ তৃণমূলের প্রত্যাশা অবৈধ সংসদ বাতিলের দাবিতে একটা কর্মসূচি থাকুক। তবে সেটা হরতাল হবে কিনা তা এখনই বলতে চান না ফারুক। তিনি বলেন, সরকার পতনে একটু সময় লাগছে এটা ঠিক। রাজনীতি স্তরে স্তরে আন্দোলনের গতি পাল্টায়, এই সরকারও বেশিদিন টিকতে পারবে না।


আন্দোলনে খেই হারিয়ে ফেলার বিষয়টি অবশ্য প্রকাশ্যে স্বীকার করতে রাজি নন বিএনপির কোনো নেতা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গত রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আন্দোলন গতি হারানোর প্রশ্নই ওঠে না। নির্বাচন বর্জন করার মধ্য দিয়ে জনগণ সরকারের প্রতি তাদের অসন্তুষ্টি ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের চলমান আন্দোলন আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে।’


বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আবদুল মঈন খান বিবার্তাকে বলেন, ৩০ জানুয়ারি ঘিরে একটা কর্মসূচি আসবে- এখনই সেটা বলতে চাই না। আমরা রাজপথে আন্দোলনে রয়েছি, আমাদের রাজপথেই আন্দোলনে থাকতে হবে। তবে এই আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ অহিংস এবং নিয়মতান্ত্রিক।


তিনি বলেন, এটা একটা সাজানো নির্বাচন, এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। একটা সাজানো নির্বাচনে সরকার যাকে চেয়েছে তাকে বিজয়ী করেছে, যাকে চেয়েছে তাকে পরাজিত করেছে। সেটি আবার তাদের নেতারাই গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। সংবিধানের দোহাই দিলেও তারাই বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। বর্তমানে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৬০০ এমপি সংসদে- একটা সংবিধানের লঙ্ঘন নয়?


মঈন খান বলেন, সরকারের চরম নির্যাতন দমন পীড়নের পরও আমাদের আন্দোলন থেমে থাকেনি। আন্দোলন চলবে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত।


বিএনপির বিপর্যস্ত অবস্থায় নতুন করে আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী হতে পারছে না সমমনা দলগুলোও। এই অবস্থায় তাড়াহুড়ো না করে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদেরও সায় আছে।


বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জোটের এক নেতা বলেন, নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলন থামেনি- আবার সক্রিয় আছে, তেমনটাও নয়। এই অবস্থায় সামনে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলা মুশকিল।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধাপে ধাপে আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ছোট-বড় নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে মাঠ গরম রাখার একপর্যায়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিও পালন করে বিএনপি। কিন্তু তাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারও গঠন হয়ে গেছে। ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার কথা। অথচ বিএনপিসহ সরকার বিরোধীরা মাঠে নেই বললেই চলে। নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত মাত্র দুদিনের গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। বিএনপি নতুন করে দুইদিনের কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে। ২৬ জানুয়ারি দেশের সব জেলা শহরে এবং ২৭ জানুয়ারি সব মহানগরে এই কর্মসূচি পালিত হবে। কালো পতাকা মিছিল শেষে ৩০ জানুয়ারির প্রথম অধিবেশনের দিন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা।


বিবার্তা/রুবেল/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com