রাজনীতি
২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে: শেখ পরশ
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৯:৪১
২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে: শেখ পরশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, সভ্যতার ইতিহাসের ভয়ঙ্কর একটা রাত, ২৫ মার্চের কালরাত। অষ্ট্রেলিযার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকা অনুযায়ী শুধুমাত্র ২৫ মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে, ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালিকে বিনা বিচারে হত্যা করেছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। সেই থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে শুরু হয় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর ঐই দিনের হত্যাকাণ্ডের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিল আমাদের দেশেরই রাজাকারদের দল। নিজের পরিবার, প্রতিবেশী অথবা নিজ দেশের নাগরিকের উপর পরিকল্পিতভাবে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সহযোগিতা করে মানুষ হিসাবে ওরা সমগ্র মানুষ জাতিকে কলঙ্কিত করেছে, ছোট করেছে।


শনিবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে “কালরাত্রি স্মরণ” শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের রাক্তন অধিনায়ক ও স্বাধীনতা পুরষ্কারপ্রাপ্ত রকিবুল হাসান। সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।


শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, আমাদের সৌভাগ্য আমাদের দেশে জন্মেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, যার অপ্রতিরোধ্য প্রতিবাদ ও সাহসী সংগ্রামের ফলে আমরা আমাদের এদেশের মানুষকে ঐ সকল হায়নাদের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।


তিনি বলেন, আজকের অনেকে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলছে। তাদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন, ১৯৭১ সালে যখন রাজাকার, আলবদর, আল-সামস বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নি সন্ত্রাস করেছে তখন এই সকল প্রশ্রয়দাতাদের ভূমিকা কি ছিল? নিশ্চয়ই তারা প্রশ্রয় দিয়েছেন। কেন এখোনো ২৫ মার্চ গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় না? এসব ব্যাপারে তারা কি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন তুলে বা প্রতিবাদ করে? আমি সেটা জানতে চাই। এমনকি ২০০১ সালেও ঐ জামায়াত-বিএনপি সরকার যখন সেই পাকিস্তানী কায়দায় যখন আমাদের হিন্দু ভোটারদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়া দিয়ে তাদেরকে উৎখাত করেছিল। তখনো কি এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারক এবং বাহকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন?


শেখ পরশ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় এক যুুগের বেশি সময় যে অগণতান্ত্রিক মিলিটারি শাসকদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়েছিল। সে ব্যাপারে এবং সেই সময়ও কি তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক হিসাবে সরব ছিল? ১৫ই আগস্টে যখন নারী শিশু হত্যা করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া ছিল কি-না, আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে। কেন এখনো ২৫ মার্চের হত্যাকা- আন্তর্জাতিক গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।


তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাঁর উদার গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে। তা না হলে আমরা একটা উন্নয়নশীল, মর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারব না। আমাদের লক্ষ্য একটা সুখী-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল বাংলাদেশ।



তিনি আরো বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে এবং একই সাথে শুধু দেশপ্রেমী নয়, বাঙালি সংস্কৃতির ও ইতিহাসের অনুরাগী হতে হবে। শুধু আবেগ নির্ভর রাজনীতি নয়, নৈতিক এবং যুক্তিশীল রাজনীতি করতে হবে। একই সাথে বাঙালি মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হবে। নিজেকে জানতে হবে এবং আত্মসমালোচনাও করতে হবে। কেবল তাহলেই শহীদের আত্মত্যাগের সম্মান আমরা দিতে পারব। ভুলে গেলে চলবে না, এদেশ সহজে স্বাধীন হয় নাই, বহু বাঙালির মা-বাবা, ভাই-বোনদের রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল। এই বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং একই সাথে দায়িত্বশীল হতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মৌলবাদী ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে প্রতিহত করে একটি প্রগতিশীল বিজ্ঞান-ভিত্তিক, গঠনমূলক রাজনীতি তরুণ প্রজন্ম বেছে নিবে।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারা জাতি যখন ঐক্যবদ্ধ তখন বাঙালি জাতিকেই পাকিস্তানী শাসকরা শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তাই বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যেই ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ইতিহাসের কলঙ্কময় গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হায়নারা। তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব এই সমস্ত গণহত্যা, নারি ধর্ষণের মত জঘন্যতম ঘটনাকে ধামা চাপা দিয়ে এই দেশটাকে নব্য পাকিস্তানে রূপান্তরিত করেছিল খুনী জিয়া।


তিনি বলেন, আমরা যদি ২৫ মার্চ গণহত্যার সঠিক ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে রাজাকার আলবদরদের মানুষ যেভাবে ঘৃণা করে ঠিক সেইভাবে ঘৃণা করবে বিএনপি-জামাতকে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে যেকন বার বার প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়? তিনি তো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে টানাটানি করেন না। শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারণেই তার প্রাণ নাশের চেষ্টা, যে কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। একাত্তরের পরাজিত শত্রুরাই বার বার হত্যা চেষ্টা করছে। আজকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এ ষড়যন্ত্র দেশের বিরুদ্ধে, দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে।


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আজকে আমি যুবলীগের প্রোগ্রামে আসার অন্যতম কারণ সেটা হল সংবাদপত্রে গত ১ থেকে ২ বছর যুবলীগের নামে কোন নেতিবাচক সংবাদ দেখিনি। সংগঠনের জন্য ইতিবাচক সংবাদ সবসময় আনন্দদায়ক।


তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিসরে যদি চিন্তা করেন তাহলে বাংলাদেশের গণহত্যার চেয়ে বড় গণহত্যা আর কখনো হয়নি; আর কখনো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমি কখনো ভাবি নাই যে, এই বাংলাদেশে মানুষ দুবেলা খেতে পাচ্ছে, দুটো পোশাক গায়ে দিচ্ছে আর এক জোড়া স্যান্ডেল পায়ে দিচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে। এটার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার দেখানো পাথেই আজকের বাংলাদেশ।


সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ২৫ মার্চ, ১৯৭১ পৃথিবীর ইতিহাসে একটি জঘন্যতম নির্মম হত্যাকাণ্ড। এদিন ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির উপর সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ঐ রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আজকের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন কিন্তু সেদিন ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি জাতির উপর সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনী হামলা করে নির্বিচারে বাংলার মানুষকে হত্যা করেছিল। তখন কোথায় ছিল আপনাদের মানবতা, তখনতো আপনারা পাকিস্তানি বাহিনীকে হুমকি দেন নাই। তাদের প্রতি কোন নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি। আসলে আপনারা কি চান, আপনারা চান বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক।


তিনি বলেন, আর বিএনপি-জামায়াতও চায় বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ কারো কাছে মাথা নত করবে না। তিনি যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজপথে যুবলীগের বন্ধুদের সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।


এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মুস্তাফিজ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুল মুকিত চৌধুরী, উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম।


এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, ইঞ্জিনিয়ার মৃনাল কান্তি জোদ্দার, তাজউদ্দিন আহমেদ, মো. আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম, ডা. হেলাল উদ্দিন, মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, মোঃ জহির উদ্দিন খসরু, মো. সোহেল পারভেজ, অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগ, দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম মিল্টন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক মো. শামছুল আলম অনিক, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. মো. ফরিদ রায়হান, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. হারিছ মিয়া শেখ সাগর, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো. আব্দুল মুকিত চৌধুরী, ধর্ম সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান সরদার, উপ-দফতর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহজাদা, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাড. শেখ নবীরুজ্জামান বাবু, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক মো. সফেদ আশফাক আকন্দ তুহিন, উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. রাশেদুল হাসান সুপ্ত, উপ-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক এন আই আহমেদ সৈকত, উপ-ক্রীড়া সম্পাদক মো. আবদুর রহমান, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, উপ-ধর্ম সম্পাদক হরে কৃষ্ণ বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।


বিবার্তা/সোহেল/নয়ন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com