শিরোনাম
ইরানের গেনু ইকোলজিক্যাল অঞ্চল
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:০৬
ইরানের গেনু ইকোলজিক্যাল অঞ্চল
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইরানের ‘গেনু’ সংরক্ষিত এলাকাটি গেনু নামের একটি পর্বতমালার সমন্বয়ে গঠিত। বন্দর আব্বাস শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে পড়েছে এলাকাটি। গেনু পর্বতমালার আশপাশে, বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্বদিকের ভূমি, তুলনামূলকভাবে কম ঢালু এবং অনেকটা মরুময়। আবার উত্তর ও পশ্চিম অংশে রয়েছে প্রচুর অনুচ্চ টিলা।


সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গেনু পর্বতের উচ্চতা ২,৩৪৭ মিটার। গেনু পার্বত্য অঞ্চলের আয়তন ৩৫০ বর্গকিলোমিটারের মতো। এই পর্বতের বেশিরভাগ অংশকেই সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এই পর্বতগুলোর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটার উপর থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্বত্য এলাকা যেমন হয়, উঁচুনিচু, ঢালুময়, গভীর উপত্যকাবিশিষ্ট তবে প্রচুর গাছগাছালি আর বিচিত্র উদ্ভিদের সমাহারে বেশ সবুজ।


ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় যাগরোস পর্বতমালার একটি সুন্দর অংশ হলো এই গেনু পার্বত্য অঞ্চল। এলাকাটি যাগরোস পর্বতমালার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত। এ এলাকার আবহাওয়াগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে যাগরোস পর্বতমালা। ইকোলজিক্যাল দিক থেকেও এই পর্বতমালার মূল্য অপরিসীম। কেশমের পার্বত্য অঞ্চল এবং মরু অঞ্চলের ইকো মিস্টেমের ক্ষেত্রেও যাগরোস পর্বতমালার গুরুত্ব অপরিসীম। মরু এলাকায় যখন ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা বিরাজ করে সে সময় গেনুর ২৩০০ মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা থাকে ২৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আবহাওয়াগত এই যে তারতম্য সেটা কেবল ইকোসিস্টেমের বৈচিত্র্যের দিক থেকেই নয় বরং চিত্তবিনোদনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এ কারণে কেশম অঞ্চলে একটা ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।



গেনু সংরক্ষিত এলাকায় পানির কোনো অভাব নেই। কেননা সেখানে রয়েছে অন্তত ৪০টি ঝরনা। কোনো কোনো ঝরনা পানির পরিমাণের দিক থেকে এতোই সমৃদ্ধ যে এলাকার সকল গ্রামের পানির চাহিদা মেটাতেও সমস্যা হয় না।


গেনু’র গরম পানির ফোয়ারা বা ঝর্নাগুলো এ অঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস। এই ঝর্নার পানির আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য আছে। বৈশিষ্ট্যটা হলো এর ওষুধি গুণ। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা চালিয়ে দেখতে পেয়েছেন এই ঝর্নার পানি চর্মরোগসহ আরো বহু রোগের জন্যে উপকারী। কেশম দ্বীপের অধিবাসী তো বটেই, এর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারা বছর বহু পর্যটক এই কেশম দ্বীপে আসেন। তারা আসেন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি গরম পানির ঝরনার ওষুধি গুণের বৈশিষ্ট্য থেকে উপকৃত হবার জন্যেও।


গেনুর গরম পানির ঝরনার পানিতে আছে প্রচুর ক্লোরিক অ্যাসিড ও সোডিয়াম। এই রাসায়নিক উপাদান দুটোর কারণে গরম পানি পেটে অ্যাসিড এবং লালা চুঁইয়ে পড়ার পরিমাণ বৃদ্ধিসহ পেটে স্পন্দন বেড়ে যায়। যার ফলে নরম হয়ে যায় পেটের ভেতরকার খাদ্যবস্তুগুলো। এখানকার পুকুরে গোসল করলে চর্মরোগের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যা কেটে যায়, ভালো হয়ে যায় রিওম্যাটিক ফিভার বা বাতজ্বরের মতো শারীরিক সমস্যাগুলোও।


যেসব এলাকাজুড়ে গেনুর গরম পানির ফোয়ারা বিস্তৃত সেসব এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দেখার মতো। সেইসাথে রয়েছে টিলার পর টিলা। সব মিলিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণকারীদের জন্যে সৃষ্টি করেছে চমৎকার একটি আকর্ষণ।


গেনু’র প্রকৃতিরাজ্যে উদ্ভিদের বৈচিত্র্যও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই বৈচিত্র্য গেনুকে এনে দিয়েছে অসাধারণ গুরুত্ব ও স্বাতন্ত্র্য। গেনু পাহাড়ে উচ্চতার তারতম্যের কারণে একেক উচ্চতায় একেক ধরনের বৃক্ষ আর উদ্ভিদ বিরাজ করে। এসবের মাঝে বহু ফলপাকড়ার গাছও রয়েছে। সবচেয়ে উঁচু এলাকায় রয়েছে বাদাম গাছসহ ছোট-বড়ো আরো অনেক ধরনের গাছ। এমিগদালুস ওয়েদেলবই নামের একটা বিশেষ শ্রেণীর গাছ আছে এখানে। এটা একটা বাদাম গাছ। এই বাদাম খুবই সুস্বাদু।



ইরানের দক্ষিণ উপকণ্ঠ বিশেষ জাতের এই বাদামের জন্যে বিখ্যাত। এই বাদাম গাছগুলো এখানকার একেবারেই নিজস্ব। ইরানের আর কোনো এলাকায় এই বাদাম গাছের দেখা মেলে না। সারা বছর ধরে পাওয়া যায় না এই বাদামগুলো। বসন্তের শুরুতে গোলাপি কিংবা লাল রঙের বাদামগুলোর রঙ গেনু পর্বতের সেই উচ্চতায় অবিশ্বাস্য সুন্দর এক প্রাকৃতিক শোভা তৈরি করে। স্থানীয় লোকজন গেনু পাহাড়ের কোনো কোনো উদ্ভিদকে ওষুধ কিংবা সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহার করে।


এ তো গেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। এখানকার জলে-স্থলে বসবাসকারী বিচিত্র প্রাণীর কথা না বললেই নয়। জঙ্গলে বাসকারী শেয়াল, নেকড়ে, মেষ ও বুনো ছাগলসহ আরো বহু ধরনের জন্তু জানোয়ার গেনু পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দা। পাখপাখালির সংখ্যাও এখানে উল্লেখযোগ্য। এতো বিচিত্র পাখির বাস এখানে যে নাম বলতে গেলে বেশ সময়ের প্রয়োজন। তারচেয়ে বরং স্বতন্ত্র এক জাতের মাছের কথা জানিয়ে বিদায় নেবো আজকের মতো। এই সামুদ্রিক মাছটির নাম হলো আফানিউস কুইনয়েস। গেনুর গরম পানিতেই এ অনন্য মাছটি পাওয়া যায়। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোথাও এই মাছটি দেখা যায়নি। সূত্র : পার্সটুডে


বিবার্তা/হুমায়ুন/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com