শিরোনাম
দেশের সেরা ৩ পর্যটন কেন্দ্র
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:৪৮
দেশের সেরা ৩ পর্যটন কেন্দ্র
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দক্ষিণ এশিয়ার একটি সুন্দর দেশ বাংলাদেশ। দেশটির পর্যটন আকর্ষণ এখনো যথার্থভাবে বিকশিত হয়নি। যদিও দেশটিতে ঘুরে দেখার মতো অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে যা বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আমাদের দেশের লোকেরা অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও অতিথিপরায়ণ, যারা সর্বত্র পর্যটকদের স্বাগত জানায় এবং তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করে।


একটি দেশের সেরা জায়গাগুলোর তালিকা তৈরি করা সর্বদা খুব জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়। দেশের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত ঘুরে দেখতে যাদের ভালো লাগে তাদের জন্যে আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সেরা পর্যটনকেন্দ্রের তালিকা দেয়া হলো:


বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার


বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কক্সবাজার। ঘন জঙ্গলে ঢাকা, পাহাড়ের মনোরম পটভূমিতে গড়ে ওঠা বঙ্গোপসাগরের নীল জলের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এর মোট দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। দেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বিশ্বের দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত।



কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত


ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামানুসারা হয়েছে এর নাম। মাইলের পর সোনালী বালুকণার দীর্ঘ সৈকত, উঁচু পাহাড়, সার্ফিং ওয়েভস, আশ্চর্য শঙ্খ শাঁস, প্যাগোডা, বৌদ্ধ মন্দির, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় জীবন এবং সীফুডের কেন্দ্রস্থল এই নয়নাভিরাম কক্সবাজার। হাঙ্গরবিহীন সৈকতটি সমুদ্রস্নান, সানবাথ, সাঁতার কাটা এবং সার্ফিংয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে নিজস্ব খ্যাতি রয়েছে।


বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন


একটি অনন্য পর্যটন-পরিবেশ সুন্দরবন হলো পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সাইট হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের সুন্দরবন। বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশী এবং ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে বিস্তৃত এই বন। দুই দেশের মধ্যেই সুন্দরবনের অবস্থান থাকলেও বাংলাদেশের মধ্যে সিংহভাগ। প্রায় ১০ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মোট ৬২ শতাংশের মালিকানা বাংলাদেশের।



সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার


ঘন জঙ্গলের এই বনাঞ্চলটির তিনদিকে সর্বাধিক জনবহুল দুটি দেশকে ঘিরে রেখেছে। দুর্গম এই বনের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য নদী। আশ্চর্যজনক বনটি দুটি প্রাথমিক ইকোরিজিয়েন্স নিয়ে গঠিত: ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এবং মিঠা পানির জলাভূমি বন। এই বনে দেখা মেলে বিশ্বের খ্যাতনামা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের।


সুন্দরবন শব্দের অর্থ একটি সুন্দর বন। যদিও ‘সুন্দরী’ গাছ থেকে এই বনের নামকরণ করা হয়েছে, এখানে প্রচুর পরিমাণে এই গাছ দেখা যায়। এই বনটি মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে আছে ডোরাকাটা হরিণ, নোনতা জলের কুমির এবং বিভিন্ন ধরণের পাখি। এই বিশাল অরণ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৯০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং 8 প্রজাতির উভচরদের বাসস্থান।



সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রবাহমান খাল


প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন


অপরুপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে গড়ে ওঠা একটি ছোট দ্বীপ। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মুখে দ্বীপটি অবস্থিত। স্থানীয় জনসাধারণ এটিকে নারিকেল জিনজিরা নামে চেনে।


এখানে পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকজুড়ে রয়েছে ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর। ভৌগোলিকভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্ত। উত্তরাঞ্চলীয় অংশকে বলা হয় নারিকেল জিনজিরা বা উত্তর পাড়া এবং এ অংশ ২ হাজার ১৩৪ মিটার দীর্ঘ ও ১ হাজার ৪০২ মিটার প্রশস্ত।



প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন


মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে কয়েকটি ১০০ থেকে ৫০০ বর্গ মিটার আয়তন বিশিষ্ট ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া নামে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। উত্তর পাড়ার মাঝামাঝি অঞ্চলে একটি অগভীর উপহ্রদ (lagoon) রয়েছে এবং জোয়ারের সময় পশ্চিম তীরের একটি সংকীর্ণ নদীখাতের মাধ্যমে এটির সাথে সমুদ্রের সংযোগ ঘটে। উত্তর পাড়ার পৃষ্ঠমৃত্তিকা গঠিত হয়েছে বালি এবং ঝিনুক শামুকের খোলস সহযোগে।


টেকনাফ এবং সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের মধ্যে নিয়মিত লঞ্চ ও দেশী নৌকা চলাচল করে। দ্বীপের অধিবাসীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০ এবং এদের অধিকাংশই মৎস্যজীবী। এই মৎস্যজীবী পরিবারের সংখ্যা ৫৩৫। দ্বীপে ১৮২টি বন্য জীব প্রজাতির অস্তিত্ব চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বীপের উত্তরাংশে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস পর্যটন কাল। দ্বীপের সর্বাপেক্ষা ঘনবসতি পূর্ণ অংশ হলো জিনজিরা।



প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন


সমস্ত দ্বীপে স্বাদু পানির অভাব রয়েছে। শুধু অল্প কিছু পুকুর এবং কিছু সংখ্যক নলকূপের মাধ্যমে সমগ্র দ্বীপে পানীয় জল এবং চাষাবাদের জন্য স্বাদু পানি সরবরাহ করা হয়। সেন্টমার্টিনের আসল মজা একরাত না থাকলে উপভোগ করা সম্ভব নয়। আরো ভাল হয় দুইরাত থাকলে। সেক্ষেত্রে ১টা দিন ছেড়া দ্বীপের জন্য, আরেকটা দিন সেন্টমার্টিনের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।


দ্বীপের কয়েক জায়গা বিশেষ করে পশ্চিম বীচ থেকে সাইকেল ভাড়া নেয়া যায় ঘন্টা প্রতি ৬০-৮০টাকায়। বীচ ধরে ঘুরতে পারবেন কিন্তু দ্বীপের সরু রাস্তায় ভ্যানের সাথে চলতে পারবেন না। সেন্ট মার্টিনে পিডিবি বা পল্লী-বিদ্যুত এর সংযোগ নাই। পুরোটাই জেনারেটর নির্ভর। রিসোর্ট-হোটেলগুলো সন্ধ্যা থেকে সাধারণত রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত জেনারেটর চালায়।


যেভাবে যাবেন:


রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্যে সরাসরি বিমান সেবা রয়েছে। এছাড়া ট্রেনে করে যেতে চাইলে প্রথমে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে হবে, সেখান থেকে বাস বা ভাড়া গাড়ি করে কক্সবাজার। এছাড়াও কক্সবাজার ও টেকনাফ পর্যন্ত সরাসরি এসি এবং নন-এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিনে যাওয়া যায়।



সুন্দরবনে নৌবিহার


সুন্দরবন যেতে চাইলে বাস, ট্রেন বা লঞ্চে করে বাগেরহাট বা খুলনা যেতে হবে। মংলা থেকে সুন্দরবন যাওয়া সহজ। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের নৌযান ভাড়া করে যাওয়া যায়। এছাড়া নানান ট্র্যাভেল এজেন্সি সুন্দরবন ট্যুর প্যাকেজ দিয়ে থাকে।


যেখানে থাকবেন:


কক্সবাজারে ৫তারকা মানের থেকে শুরু করে সবধরনের হোটেল-রিসোর্ট আছে। যেখানে ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকার প্যাকেজ পাওয়া যায়। সেন্টমার্টিনেও রয়েছে নানা মানের হোটেল-রিসোর্ট। সুন্দরবনের ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে সরকারি বাংলো। কিংবা লঞ্চে করে গেলে সেখানেই থাকার ব্যবস্থা থাকে।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com