শিরোনাম
দিনাজপুরে প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি ধর্মপুর শালবন
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২০, ১৬:২৪
দিনাজপুরে প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি ধর্মপুর শালবন
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি উত্তরের সর্ববৃহৎ দিনাজপুরের বিরলে ধর্মপুর শালবন। এক সময়ে বাঘ, ভাল্লুক, নীল গাইসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণের অভায়ারণ্য গহীন অরণ্য এই বন এখন তার ঐতিহ্য হারিয়েছে।


ভূমি দস্যুদের করলে বেদখল হয়ে গেছে এ বনাঞ্চলের অনেক জমি। গাছ-গাছালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। সুন্দর নিরিবিলি গাছ-গাছালীর মোহনীয় প্রকৃতির নয়ানাভিরাম ধর্মপুর শালবন দর্শনাথী ও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হলেও এখানকার জীব-বৈচিত্র্য এখন বিলুপ্তির পথে। তাই এই বনটি রক্ষায় জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করার দাবি উঠেছে।


এ বনের বিশেষত্ব হলো ২১টি মৌজা জুড়ে ২ হাজার ৭৩০ একর এলাকা নিয়ে এ বনাঞ্চল। উত্তরাঞ্চলে সর্ববৃহৎ বনভূমি এটি। ধর্মপুর শালবন আয়তনে বড় এবং শাল গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা থাকায় দেশের মানুয়ের কাছে পরিচিত। বনের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পুরনো শালগাছ। বনবিড়াল, খেকশিয়াল, বিজিসহ পাখি রয়েছে অর্ধশতাধিক প্রজাতির। বনের ভিতর দিয়ে যোগাযোগের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি পাকা রাস্তা। এসব রাস্তা দিয়ে লোকজন যাতায়াত করে। রাস্তাগুলো পরিপাটি এবং আঁকাবাঁকা। এ আঁকাবাঁকা পথ ধরে যতই বনের ভেতরে যাওয়া যায়, চোখে পড়ে সারি সারি শালগাছ। শালগাছের মাঝারি আকারের পাতাগুলো গাড় সবুজের সমারোহে অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। বনের মধ্যে হঠাৎ ডেকে ওঠে ঘুঘু পাখি। এ ডাক শুনে চমকে ওঠার কারণ নেই। ঘুঘু পাখি দীর্ঘ সুরে বনে আগত দর্শনার্থীদের অভিনন্দন জানায়। আবার বনের ফাঁকা স্থানে সৃজীত বনগুলোর সারিবদ্ধ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গুলোর পাতা বাতাসে সারাক্ষণ ঝিক ঝিক করে অজানা সুর সৃষ্টি করে চলে সারাক্ষণ। বনের মধ্যে বাঁশ ও বেতের গাছ রয়েছে। প্রকৃতির মোহনীয় রূপ দেখে জুড়িয়ে যায় প্রাণ।


স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক সুমন সারোয়ার জানান, বিশেষত করোনা পরিস্থিতিতে এই বনে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে, তার আপন মহিমার অপরূপ সৌন্দর্য। বনের মাঝে দীঘির পানি, ফুল-গাছ, পাখি-প্রাণি ফিরে পেয়েছে, প্রাণচাঞ্চল্য আর স্বস্তি। প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে প্রাণ, সেজেছে নতুন সাজে। আকঁছে নতুন আবহে। গাইছে, যেনো মুক্তির আনন্দ গান।


এ বিশাল আকৃতির বনটিকে জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করা হলে বন রক্ষার পাশাপাশি সরকারের যেমন রাজস্ব আয় রাড়বে, তেমনি এলাকার মানুষের হবে কর্মসংস্থান। তাই এলাকাবাসীর দাবি এ বনকে জাতীয় উদ্যানে বাস্তবায়িত করা হোক।


দিনাজপুর শহর থেকে ৮ কিলোমিটা পশ্চিমে বিরল উপজেলা। আবার বিরল উপজেলা থেকে সোজা দক্ষিণে ৮ কিলোমিটার ৮নং ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কালিয়াগঞ্জ বাজারের পূর্ব পার্শ্বে শালবন ধর্মপুর শালবন। এ বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া ১০ কি:মি: দীর্ঘ নোনা নদী। বনের গভীরে যেতে চোখে পড়বে প্রাচীন পত্রঝরা শালবন। তবে শাল ছাড়াও জামরুল, তরুল, শিলকড়াই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমনি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরতকি, বয়রা, আমলকি. এলামুন্ডা, দেবদারু, অপরাজিতা, নয়নতারা, সোনালু, জামরুল, বেত, আগর, খেঁজুর সহ অসংখ্য উদ্ভিদ। রয়েছে টারজান খ্যাত বিরল প্রজাতির গিলালতা, উইঁডিপি এবং অনবরত ঝিরঝির করে বৃষ্টির মতো পানি ঝরা গাছসহ বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম। এ ছাড়া খরগোশ, শেয়াল, সাপ, বেজি এবং শকুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গ দেখতে পাওয়া যাবে এই বনে। কিন্তু নেই আর আগের মতো বাঘ, ভাল্লুক, নীল গাইসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণ। এমনটাই জানালেন স্থানীয় ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র।


ইউপি চেয়ারম্যান সাবুল বলেন, এই গহীন অরণ্য ধীরে ধীরে লোকালয়ে পরিণত হয়ে গেছে। গাছ চুরিসহ সংরক্ষণ অভাবে গাছে-গাছালী কমে যাচ্ছে। তবে ব্যস্ততম শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নিরিবিলি পরিবেশে মায়াবী হাতছানীর এক অনুপম দৃশ্য মহিমাম্বিত দিনাজপুরের ধর্মপুর শালবন ঠিক যেন স্বর্গেরমত। তাই জাতীয় উদ্যানে রূপান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।


ধর্মপুর বিটের ফরেস্টার মো. সাদেকুর রহমান সাদেক জানান, বনটি জাতীয় উদ্যানে পরিণত করার প্রক্রিয়া নিয়েছে সরকার। তা বাস্তবায়িত হলে বন রক্ষায় চারপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর বাড়বে ভূমিকা এবং তাদের সাথে বনবিভাগের বন্ধুসূলভ আচরণ এ বনের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। ফিরে আসবে, শালবনের হারানো জীব-বৈচিত্র্য ঐতিহ্য।


বিবার্তা/শাহী/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com