শিরোনাম
শিবিরের হামলায় পা হারানো মাসুদের এখন ভরসা শুধুই প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২১, ১৮:২০
শিবিরের হামলায় পা হারানো মাসুদের এখন ভরসা শুধুই প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

‘আব্দুল্লাহ আল মাসুদ’ নামটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে জামাত শিবিরের হায়েনা রুপ। প্রথম দেখাতেই অবাক হয়ে যায় শরীরে এত আঘাত! শার্ট-প্যান্ট পরে থাকলেও হাত, পা মাথাসহ সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলো, জখমের বড় বড় দাগগুলো আড়াল করা যায় না। স্পষ্ট দেখা যায় সব।


অবাক হতে হয় মানুষ কতটা নরপশু হলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে এতটা জখম করতে পারে। গোটা শরীরের কোন স্থান বাদ নেই আঘাতের চিহ্ন থেকে। প্রথম দেখাতে মাসুদ যে প্রশ্নের সম্মুখিন হন, তা হল কিভাবে হলো, কিসের আঘাত, অনেকেই পাশ থেকে আঘাত গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। কোন উত্তর দিতে পারে না।


আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ১২ বছর পেরিয়েছে। মাসুদ এক পা ছাড়াই চলছেন এই দীর্ঘ সময়ে। বাইরে বের হন একটা নড়বড়ে কাঠের পা নিয়ে, খুব কষ্ট করে চলাচল করতে হয় তাকে। অথচ ৫-৬ লাখ টাকার সংকুলান হলেই লাগাতে পারেন একটা উন্নত মানের কৃত্রিম পা। এতে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক চলাফেরায় ফিরতে পারেন মাসুদ।


কথা বলতে বলতে আবেগী হয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানান, দলের জন্য পা হারালেও গত সাত বছরে নিজ দলের অনেক নেতার কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছি। অনেকে আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি তা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ-এর জন্য দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।


কি হয়েছিল সেই সময়
২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকাল ৮ টায় ক্লাসের উদ্দেশ্যে বের হন সুস্থ, সবল, নিখুঁত শরীরের অধিকারী ছাত্রলীগের দুই উদীয়মান নেতা মাসুদ ও টগর মো. সালেহ। ভাবনাতেও ছিলনা যে, জামাত শিবিরের হায়েনারা তাদের শেষ করার জন্য জিয়া হলের সামনে সশস্ত্র অবস্থান করছে। জিয়া হলের কাছে আসতেই আতর্কিত হামলার শিকার হন তারা দুজন। সেই হামলায় জামাত শিবির আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, ককটেল, চাপাতি, চাইনিজ কুড়ালসহ এমন কোন অস্ত্র বাদ ছিলো না, যে তারা ব্যবহার করেনি।


প্রকাশ্য দিনের বেলা ৪০-৪৫ জন ক্যাডার একসাথে দুজনের উপর হামলা করে, সেই হামলার স্থানেই মাসুদের ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, গোটা শরীরে অসংখ্য চাপাতি - চাইনিজ কুড়ালের কোপে রক্তাক্ত সম্পূর্ণ শরীর, বাকি তিন হাত পায়ের রগও কাটা। টগরেরও হাত পায়ের রগ কেটে মাথায় গুরুতর জখম করে। মৃত ভেবে জামাত শিবিরের ক্যাডাররা চলে গেল। সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। টগর কিছুটা সুস্থ হলেও মাসুদ কোনমতে বেঁচে আছেন।


২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও রাবি ক্যাম্পাস ছিলো ভুতুড়ে। মাত্র তিন চারটা হলে হাতে গোনা ২০-২৫ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। বেশিরভাগ হলেই ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে চলে আসে। সুবিধাবাদী অনেক ছাত্রলীগকর্মী রাজনীতি ছেড়ে 'সাধারণ ছাত্র' সেজে হল ছেড়ে মেসে উঠে যায়। তাদের ধারণা ছিল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও ৬ মাসের বেশি টিকবে না! কর্মীশূন্য প্রায় ক্যাম্পাসে মাসুদ- টগরদের সেশনের কিছু সাহসী উদ্যমী বন্ধুরা জয় বাংলা স্লোগানে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করে। এজন্যই জামাত শিবির এই সার্কেলটাকে টার্গেট করে মাসুদ- টগরকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।


মাসুদ- টগরের রক্ত নিয়ে কত রাজনীতি হয়েছে। কত জন কতভাবে সুবিধা ভোগ করেছে। কিন্তু মাসুদ টগরকে কেউ মনে রাখেনি। শুধু ব্যানার পোস্টার বক্তব্যে তাদের নাম স্মরণ করা হয় রাজনৈতিক ভাবে।


মাঝে রাবিতে মাসুদ-টগর নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও তারা যোগদান করতে পারেনি। সেই চাকুরীর জন্য গত তিনমাস থেকে মাসুদ টগর রাজশাহী -ঢাকা যাওয়া আসা, নেতাদের কাছে নিয়মিত ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ফলাফল শুণ্য।


মাসুদ কথা প্রসঙ্গে বলেন, ভাই আমি চাকরি করলে বেতনের টাকা সব জমা করে ৫-৬ লাখ টাকা দিয়ে একটা ভালো কৃত্রিম পা লাগাবো। জীবনের সবকিছু হারিয়ে এটাই তার স্বপ্ন এখন। যাতে মায়ের সামনে একটু স্বাভাবিক চলাচল করতে পারে, একটু নিজের হাতে সেবা করতে পারে।


মাসুদের বাবা মারা গেছেন ঘটনায় আহত হওয়ার আগেই। আর মা, আদরের ছোট ছেলের আহত হওয়ার পর থেকে পাগলের মতো। মাকে দেখাশোনার কেউ নেই।


মাসুদের সাহস আর মনোবল তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এখনও সে প্রবল মানসিক শক্তি নিয়ে সারাদিন রাত কষ্ট করে যাচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে কৃত্রিম পা লাগিয়ে যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সাথে ভালো একটা কর্মসংস্থান হলে বৃদ্ধ ও ভারসম্যহীন মায়ের সেবা করা। মাকে একটু ভালো রাখা।


চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে তার পরিবার নগদ টাকাসহ জমি বিক্রি করে নিঃস্ব। অথচ রাবিতেই রাজনৈতিক কোন্দলে আহত শিবিরের ক্যাডার রাসেলের সম্পূর্ণ চিকিৎসা ও উন্নত কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা একমাসেই হয়ে যায় তাদের দল থেকে।


অপর দিকে যে দলের জন্য ও আদর্শের জন্য মাসুদ আজ পঙ্গু সেই দল ১২ বছরের বেশি ক্ষমতায়, দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধাবাদীরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের কেউ এগিয়ে আসেনি মাসুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য।


এ প্রসঙ্গে মাসুদের বন্ধু ও একসময়ের সহকর্মীরা বলেন, আমরা চাই মাসুদ আমাদের সাথে হাসিখুশি থাকবে, কিছুটা হলেও স্বাভাবিক চলাচল করতে পারবে। তার বাবার অঢেল সম্পদও নেই, চাকরি বা কর্ম করেই তাকে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। ৫-৬ লাখ টাকার একটা পায়ের জন্য কি মাসুদের প্রতিনিয়ত চোখের জল দেখতে থাকবো? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেও একটা চাকরি করার অধিকার নেই তার। মাসুদের প্রতি ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের কি কোন দায়িত্ব নেই। তাকে একটা সুন্দর নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনের কোন ব্যবস্থা করতে পারি না আমরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ মাসুদ- টগরকে সদস্য পদ দিয়েই নিজেদের দায় সেরেছে। মনে হয়েছে এটা দিয়ে তাদের সব ঋণ শোধ।


তার সাবেক সহকর্মীদের বক্তব্য, আব্দুল্লাহ আল মাসুদের জন্য দলের নেতা বা এমপি-মন্ত্রীদের কাছে কোন প্রত্যাশা নেই। এখন শুধু আমাদের প্রত্যাশা আমাদের মমতাময়ী মা, ত্যাগী নির্যাতিত তৃণমূল নেতাকর্মীদের একমাত্র আস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে। আশা করি তিনি মাসুদের জন্য কিছু করবেন।


মুঃ আতিকুর রহমান সুমন
সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সাবেক সহ-সভাপতি ও উপ-দপ্তর সম্পাদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ


বিবার্তা/শাহিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com