
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে বসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্রের সমাধান করত একটি চক্র। পরীক্ষা শুরুর আগেই পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতো উত্তরপত্র। পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করা হত।
২৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এর আগে শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের দুই সদস্য এবং তিন পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
এসময় তাদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস ও প্রশ্নের সমাধান করে দেওয়া চক্রের মূলহোতা অসীম গাইনের কাছে পাঠাতে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ফোনটিতে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চক্রের দুই সদস্য ঢাবি শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন (২৬), সুজন চন্দ্র রায় (২৫) এবং পরীক্ষার্থী মনিষ গাইন (৩৯), পংকজ গাইন (৩০) ও লাভলী মন্ডল (৩০)। তাদের কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১ জেলার সাড়ে ৩ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এই পরীক্ষা চলাকালে উত্তরপত্র ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাত জন এবং রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দুই জেলায় আলাদাভাবে দুটি মামলা হয়। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি প্রশ্নপত্রের সমাধান পাওয়ার বিষয়ে জানান।
গোয়েন্দা প্রধান বলেন, মাদারীপুরে গ্রেফতার হওয়া পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জামিনে বের হয়ে যান। মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাসুদ আলমের অনুরোধে ঘটনা তদন্তে নামে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জ্যোতির্ময় গাইন ও সুজন চন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনেই ঢাবির জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।’
গ্রেফতার ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে হারুন বলেন, জ্যোতির্ময় ও সুজনসহ সাত শিক্ষার্থী ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রশ্নের সমাধান করে পরিক্ষার্থীদের পাঠাতেন। ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় জ্যোতির্ময় গাইনের চাচা অসীম গাইন তাদের দিয়ে প্রশ্নের সমাধান করিয়ে নিতেন।
তিনি বলেন, অসীম গাইন পরীক্ষার দুই থেকে তিন মাস আগেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স শেষের পথে এমন পরীক্ষার্থীদের টার্গেট করতেন। তাদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি করতেন। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রশ্নের উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন অসীম গাইন।
এক প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, তদন্তে এখন পর্যন্ত যে প্রমাণ পেয়েছি, তাতে দেখা যাচ্ছে এই চক্রের মূল হোতা অসীম গাইন। তার বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। সে আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। অল্প দিনে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অসীমের মানবপাচার, হুন্ডি ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অসীম বর্তমানে পলাতক। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান। তাকে গ্রেফতার করলে কীভাবে সে প্রশ্ন পায় সেই বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারবো। এ ঘটনায় দুজনকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে যারা প্রশ্নের সমাধান করেছেন তারাও স্বীকার করেছে। যারা প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারাও স্বীকার করেছে। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে আরও কারা জড়িত সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা বাতিলের অনুরোধ জানাবে কি না জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, এ মামলার তদন্তে নেমে যা যা পেয়েছি সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পরীক্ষা বাতিল করবেন নাকি বহাল রাখবেন। তারা তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
এর আগেও আমরা ব্যাংক ও বিমানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত অনেককে গ্রেফতার করেছি। ব্যাংকের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল।
বিবার্তা/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]