জাতীয়
উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৯:৫৮
উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত: প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজ এগিয়ে নিতে বারবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং সবসময় জনগণের মুখে হাসি ফোটাবার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ ২০২৪ সালে স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমরা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটি কোনো অসাড়-বাগাড়ম্বর দাবি নয়। বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।


মার্চ ২৫, সোমবার সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভাষণ শুরু করেন তিনি।


ভাষণে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে দেশে এবং প্রবাসে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বলেন, তাঁর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।


জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে তিনি স্মরণ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সকল বন্ধুরাষ্ট্র, সংগঠন, সংস্থা, ব্যক্তি এবং বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।


শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাক-সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা শুরু করে। শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন। ২৩ মার্চ সারাদেশে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাক সামরিক জান্তা শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।


শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর মিত্র শক্তির সহায়তায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। বাঙালি জাতির পিতা, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। শূন্য হাতে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিয়ে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করেন, অবকাঠামো পুনঃস্থাপন ও উন্নয়ন করেন এবং উৎপাদন খাত ও অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। স্বাধীনতা অর্জনের ৯ মাসের মধ্যেই একটি সংবিধান উপহার দেন।


তিনি বলেন, কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭১-এর পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালাতে থাকে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ শাহাদতবরণ করেন। খুনি মোস্তাক-জিয়া ও তাদের উত্তরসূরিরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশে স্বৈরশাসন কায়েম করে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা দায়িত্ব নিয়েই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রবর্তনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে দ্রুত কাজে নেমে পড়ি। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রান্তিক মানুষের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তুহারা মানুষের জন্য বাসস্থান নির্মাণসহ মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করি। ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন এবং ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করি।


তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সবক’টি জাতীয় নির্বাচনে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে সরকার পরিচালনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন বাস্তবতা। আমরা ইতোমধ্যেই ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে সুনীল অর্থনীতির দ্বার উন্মুক্ত করেছি। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটিয়েছি। এক দিনে ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়, যা ইতিহাসে এই প্রথম। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে এসেছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দৃষ্টিনন্দন তৃতীয় টার্মিনাল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মত মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন আমাদের সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসের উপযোগী করে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমানে ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অর্থাৎ ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়ন করতে চলছে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা।


তিনি স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের শপথ গ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com