মাত্র ৩০ হাজার টাকায় রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৫৯
মাত্র ৩০ হাজার টাকায় রোহিঙ্গা থেকে বাংলাদেশি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে রোহিঙ্গারা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নাগরিক। টাকার বিনিময়ে এসব সনদ করে দিচ্ছে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটররা। এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনায় গড়ে উঠেছে চক্র। চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) ইউনিট।


১৯ ফ্রেরুয়ারি, সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।


গ্রেফতারকৃতরা হলেন দিনাজপুরের বিরল পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর মো. আব্দুর রশিদ, বিরলের রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর সোহেল চন্দ্র, মো. শহিদুল ইসলাম মুন্না, মো. রাসেল খান ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান।


ডিবি বলছে, চক্রটি বাগেরহাট, নারায়ণগঞ্জ এবং দিনাজপুর জেলার ভিন্ন ভিন্ন থানা এলাকা থেকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে দিতো। এজন্য ফেসবুকে বিভিন্ন নামে পেজ খুলে প্রচারণা চালাতো তারা। তাদের মাধ্যমে অনেক দাগি আসামিও নিজের নাম পরিচয় পাল্টে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন নিয়েছে। আবার অনেকে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করছেন।


ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃত আব্দুর রশিদ দিনাজপুরের বিরল পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর এবং সোহেল চন্দ্র বিরলের ১০নং রাণীপুকুর ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত। সংশ্লিষ্ট পৌরসভা মেয়র ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের জন্ম নিবন্ধনের এক্সেস ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিরল উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে দেখিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন কপি এবং নাম্বার দিয়ে আসছিলো তারা। এক্ষেত্রে তাদেরকে বিভিন্ন ব্যক্তির ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করে দেয়ার কাজ দিত গ্রেফতারকৃত মোস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম মুন্না ও রাসেল খান। মুন্না ও রাসেল বাগেরহাট এবং নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। তারা ৫ জনই একে অপরের পরিচিত এবং পরস্পরের সহায়তায় স্থানীয় নাগরিকদের পাশাপাশি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা জনগণকে বিরলের অধিবাসী দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ সরবরাহের কাজ করে আসছিল। এ কাজে তারা সবাই আনুপাতিক হারে লাভ পেত।


এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য পৌরসভা ও ইউনিয়নে তাদের লোকজন রয়েছে যারা ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার মানুষের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করে দিয়েছে। যারা কাজ এনে দিতেন তারা সুবিধা মতো রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিতেন। অপারেটররাও রোহিঙ্গা শুনলে একটু বেশি টাকা চাইতেন। এ সব জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী অবৈধভাবে দেশের নাগরিক হয়ে যাচ্ছে। অনেক অপরাধী অপরাধ করে নিজ এলাকার বাহিরে আরেকটি জন্ম নিবন্ধন করে তাদের পরিচয় গোপন করে নতুন করে অপরাধ শুরু করছে। অনেক ভুয়া পাসপোর্ট তৈরিতে এই জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করেছে। যাতে ব্যাংক লোন ও অনলাইন অপরাধে পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারে। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করছে। এসব জন্ম নিবন্ধন দিয়ে অনেক দাগী/কুখ্যাত খুনী, ডাকাত এবং রাষ্ট্ররিরোধী অপরাধী চক্র নিজেদের পরিচয় গোপন করাসহ নতুন পরিচয়ে আবার অপরাধ শুরু করতে পারছে।


আসামিদের গ্রেফতারে নেতৃত্ব দেয়া ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি (অর্গানাইজড এন্ড ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম) মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান, তার টিমের সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড (সাইবার ক্রাইম) নজরদারি করার সময় দেখতে পান ‘এনআইডি হেল্প ডেস্ক গ্রুপ’ ও ‘এনআইডি অনলাইন সার্ভিস’ নামে ফেসবুক গ্রুপে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি কর্তৃক কল লিস্ট, এসএমএস লিস্ট, নাম্বার টু এনআইডি, এনআইডি টু নাম্বার, লাস্ট কল লোকেশন, রেডিও লোকেশন, কোন সিম নাম্বার হতে তার রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্যাদি, নগদ/বিকাশ, এনআইডি সার্ভার কপি, এনআইডি (সাইন কপি), সার্টিফিকেট (সাইন কপি), বিভিন্ন নাগরিক তথ্যাদি, জন্ম নিবন্ধন (সাইন কপি), জন্ম নিবন্ধন সংশোধনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করে। পরে তার অনুলিপি টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করার পোষ্ট দেয়। পরে প্রযুক্তি সহায়তায় ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে এই চক্রের খোঁজ পায় ডিবি।


এডিসি বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে ২ জন কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে এবং অপর ২ জন পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি, বিশেষত রোহিঙ্গা জনগণের জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরিতে ব্যাপক লাভ দেখে তারা এই কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। যেহেতু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক না এবং স্থানীয় নাগরিক পরিচিতির অভাবে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে তাদের কোনো এক্সেস নেই। এ কারণে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ভুয়া নিবন্ধন তাদের জন্য সুবিধাজনক হওয়ায় বহু রোহিঙ্গা চক্র ভুয়া জন্ম নিবন্ধন-সনদ তৈরি করে নিয়েছে এবং এর মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতরাও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। দেশের প্রায় সব ধরনের সেবা ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ব্যবহারকারী সবাইকে তাদের আইডি পাসওয়ার্ড অধীনস্থদের কাছে দেয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com