টাকা নিয়ে সার্ভিস না দিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর ট্রিপকার্ট ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, পাওনা টাকা চাইলে গ্রাহকদের হুমকি দিচ্ছে, এমন অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান ২ এর ১১৩নং রোডের ৯নং হাউজের কনকর্ড ভিলায় এজেন্সির অফিস থাকলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজারসহ বিশ্বের নানা দেশ ভ্রমণে ট্রিপকার্ট ট্রাভেল থেকে আকর্ষণীয় প্যাকেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করত। গ্রাহকদের অভিযোগ, শুরুতে তারা কিছুদিন ঠিকঠাক সার্ভিস দিলেও ধীরে ধীরে শুরু হয় প্রতারণা। এক পর্যায়ে তারা নিজেদের আখের গুছিয়ে অফিসও বন্ধ করে দেয়। তবে তাদের ফেসবুক পেজ TripKart এখনো সচল আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার এখনো তারা লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন।
এদিকে ট্রিপকার্টের প্রতারণার ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মো. আব্দুর রায়হান (২৭) নামের এক ভুক্তভোগী। জিডি নং: ১৭৯২।
বিবার্তা২৪ডটনেটের অফিসে সংরক্ষিত সেই জিডির কপিতে বলা হয়েছে, ‘আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী মো. আব্দুর রায়হান (২৭), ‘থানায় হাজির হয়ে জানাইতেছি যে, বিবাদী TripKart ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল ইসলাম অপু (বিবাদী-১) পিতা: অজ্ঞাত, মোবাইল নং- 01777666555, 01756586100, হাউস- ০৯, রোড নং- ১১৩ গুলশান- ০২ ঢাকাকে আমি এবং আমার স্ত্রী, দুবাই, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ট্যুরে যাওয়ার জন্য গত ১৯/০৮/২০২৩ ও ২৮/০৮/২০২৩ দুপুর ১২:০০ ঘটিকায় বিবাদীর কথামতো অফিসে যেয়ে সিটি ব্যাংক, মগবাজার শাখার 1223934358001 অ্যাকাউন্ট নাম্বারে মোট তিন লক্ষ সাতাইশ হাজার (৩,২৭০০০) টাকা দু’ধাপে দেই। আমার বন্ধু শামীম আহম্মেদ, মনিরুজ্জামান রাজু, ইমরান খান, মনিকা, আশা, বৃষ্টি, রাসমিন হোসেন, ফারিয়া, মাকসুদুর রহমান ও আয়শাসহ কক্সবাজার ট্যুরে যাওয়ার জন্য ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) ও ৪১,০০০/- টাকা (বিবাদী-২) আমিনুল ইসলাম (৩২) মোবাইল- 013296897503 ও 01775439125 কে দেই। গত ২২/০৯/২০২৩ সময় ১১.০০ ঘটিকায় বিবাদীদের অফিসে যেয়ে আমাদের ট্যুর ও টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে।’
থানায় জিডি প্রসঙ্গে মো. আব্দুর রায়হান বিবার্তাকে বলেন, আমরা সার্ভিস তো পাইনি, এদিকে টাকাও দিচ্ছে না। চাইতে গেলে ভয়ভীতি দেখায়, হুমকি দেয়। ওরা সবাই এখন পলাতক! অফিসও বন্ধ। শুধু অনলাইনে বুস্ট করে এখনো প্রতারণার ব্যবসা চালু রেখেছে।
তিনি বলেন, অনেকের না-কি পাসপোর্টও আটকে রেখেছে। আমার কাছে পাসপোর্ট চেয়েছিল- কিন্তু আমি দেইনি। মানুষের কষ্টের টাকা তারা প্রতারণা করে নিয়ে যাচ্ছে, এটা মানা যায় না।
জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই (নিরস্ত্র) মো. বশিরুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, গুলশান থানায় এই জিডি হয়েছে৷ এটার তদন্ত কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ট্রিপকার্ট লাপাত্তায় ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম সাইফ বিবার্তাকে বলেন, ট্রিপকার্ট ট্রাভেল এজেন্সি কোটি কোটি টাকা নিয়ে ভাগছে। আর এখনো তারা অনলাইনে ডিজিটালি চিটিং করে যাচ্ছে! অথচ প্রশাসন এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর আমার নিজেরও তাদের কাছে ৫৬ হাজার ৯০০ টাকা আটকে আছে।
ভুক্তভোগী শামীম আহম্মেদ নামের একজন বিবার্তাকে বলেন, আমরা ৩ জন বাচ্চা ও ৬ জন অ্যাডাল্ট নিয়ে ৩ দিন ২ রাতের একটা কক্সবাজার ট্যুরের প্যাকেজ নিতে চেয়েছিলাম। প্রতিটি প্যাকেজ ৯৫০০ টাকা করে ঠিক করেছিলাম। ফলে আমাদের মোট বিল এসেছে ৬০ হাজার ৭৫০ টাকা। এরমধ্যে আমি ইনভয়েজ ও মানি রিসিটে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকী ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়ে হোটেল বুকের টিকিট নিতে ট্রাভেলের মালিক সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে পরের দিন বিকালে যোগাযোগ করতে বললেন। পরের দিন তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আবার আমিনুল ইসলাম নামের এক এমপ্লয়ির সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তার সাথে যোগাযোগ করলে কাল কাল করে ঘুরাতে থাকে। এদিকে তাদের হেল্প নাম্বারগুলোতে কল দিলেও কোন সাড়া শব্দ নেই!
তিনি বলেন, ট্রাভেল থেকে আমাদের বলা হয়েছিল কক্সবাজারের ওয়েস্টার্ন হোটেল বুক করবেন। তাই আমি নাম্বার সংগ্রহ করে সেই হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু সেখান থেকে বলা হলো এই ট্রাভেল এজেন্সির সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। তখন বুঝতে পারলাম তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। এরপর আমি মিরপুরে থাকা আরও অনেককে খুঁজে পেলাম যারা আমার মতো প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ১০/১৫ জন ট্রিপকার্টের অফিসের সামনে জড়ো হই। কিন্তু সেই অফিস তালাবদ্ধ ছিল। এরপর আমরা ডিবি অফিসে গেলাম। সেখানে বলা হলো, আপনারা থানায় যান, এক্ষেত্রে হেল্প লাগলে আমরা অবশ্যই করব। তারপর থানায় গিয়ে জিডি করি।
এখন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সাথে আমি বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেছি। কখনো ফোন ধরে না, আবার কখনো ধরলেও নানা রকম আশ্বাস দেয়। আমাকে কিছুদিন আগে একটা চেক দিয়েছিল- কিন্তু তাদের অ্যাকাউন্টে কোন টাকা ছিল না। এভাবে ব্যালেন্স ছাড়া চেক দিয়ে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
এজেন্সি ভবনের সিকিউরিটি গার্ড মো. নুরুল্লাহ ৩ অক্টোবর বিকালে বিবার্তাকে বলেন, এই অফিস এখন বন্ধ আছে। কবে খুলবে সেটা আমি জানি না। আমি ভবন মালিকের আন্ডারে এই বিল্ডিংয়ে কাজ করি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রিপকার্ট ট্রাভেল এজেন্সির পরিচালক আমিনুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, যেসব গ্রাহক আমাদের থেকে টাকা পাওয়ার কথা বলতেছে, তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। আমরা তাদের সাথে আগামী ১৫/২০ তারিখের মধ্যে লেনদেন শেষ করার চেষ্টা করব। আমাদের বস অসুস্থ থাকায় এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। আগামী ৫/৬ তারিখের মধ্যে তিনি দেশে আসবেন।
অফিস বন্ধ রাখার বিষয়ে অবগত করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন- অনেকগুলো এজেন্সি আমাদের পেছনে লেগে ক্ষতি করার চেষ্টা করতেছে। এমনকি স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা আপাতত অফিস বন্ধ রেখেছি। তবে খুব শীঘ্রই আমাদের অফিস আবার চালু করা হবে।
এজেন্সির মালিক সাইফুল ইসলাম দেশের বাহিরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ট্রিপকার্ট ট্রাভেল এজেন্সির গ্রাহক ঠকানোর বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (আপিল কর্তৃপক্ষ) মনোজ কুমার রায় বিবার্তাকে বলেন, কোন এজেন্সি অনিয়ম কিংবা প্রতারণা করলে আর সেটা প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাদের লাইসেন্স বাতিল করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবার্তা/ রাসেল/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]