নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
তিনি বলেন, প্রকৃত শিক্ষা না থাকলে মানুষ প্রতারক হয়ে যায়। আজকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এক প্রতারক নিয়ে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কে সে ব্যক্তি? তিনি হলেন আমাদের নোবেলজয়ী ড. ইউনূস। যিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত। উনি করেছেন মাইক্রোক্রেডিটের ব্যাবসা। গ্রামের অল্পশিক্ষিত, অর্ধিশিক্ষিত নারীদের ঋণ দিয়ে তাদের কাছ থেকে সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তি আদায় করতেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে বছরে সুদ আসে ৯ থেকে ১০ শতাংশ। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হতো।
৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকেলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, উনি কোন শান্তিতে পুরস্কার পেলেন। উনি কি শান্তি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন? উনি মাইক্রোক্রেডিটে সুদের ব্যাবসা করেছেন। সেখান থেকে কোন শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন? বরং গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে অন্তত ১০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি হারিয়ে ঢাকা শহরে এসে রিকশা চালায়। ড. ইউনূস ঋণ দেয়ার নাম করে গ্রামের মানুষকে শোষণ করেছে। কিস্তি দিতে গিয়ে মানুষ অসহায় হয়ে গেছে। কিস্তি না দিতে পারলে মানুষের ঘরের খাট, চাল, গরু নিয়ে গেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে না পেরে লজ্জায়, দুঃখে, কষ্টে ৩৬ জন মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকে গোটা বিশ্বে তাকে নিয়ে তোলপাড় চলছে। কারণ তার বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমে কর্মচারীরা এই মামলা করেছে। কারণ প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক থেকে শ্রমিকদের বছরে যে লভ্যাংশ দেয়ার কথা সেটা তিনি দেননি। এটা আমাদের শ্রম আইনে আছে। তিনি যদি নির্দোষ হতেন তাহলে মামলা ফেস করতেন। উনি সেটা না করে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিবৃতি দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
হানিফ বলেন, মামলা লড়তে অসুবিধা কোথায়? তিনি এই কারণে যান না কারণ মামলা লড়তে গেলে হেরে যাবেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হবে, মানুষের পাওনা টাকা দিতে হবে।
নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশ যখন ভালোভাবে পথ চলে তখনই আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, দেশের অভ্যন্তরে চক্রান্ত শুরু হয়ে যায়।
দেশের টাকা লুট করে নিয়ে বিদেশিদের চ্যারিটি করে ড. ইউনূস মহান নেতা সাজছেন মন্তব্য করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আমেরিকাতে গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে মাইক্রোক্রেডিট চালু করেছেন। প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেছেন। আমেরিকার সরকার বলেছে উনি ইনভেস্ট করে মানুষকে সহায়তা করছেন। কার টাকা তিনি নিয়ে গেলেন? উনি তো গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে চাকরি করেন। উনি বেতন পান কত টাকা? উনি ২ বিলিয়ন ডলার কোথায় পেলেন? বাংলাদেশ থেকে টাকা কোন পথে নিয়ে গেলেন।
তিনি বলেন, ২ বিলিয়ন ডলার বৈধ পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই তাহলে নিশ্চয়ই অবৈধ পথে মানি লন্ডারিং করে টাকা নিয়ে গেছেন। আমি মনে করি, এসব কিছুর তদন্ত করে মানি লন্ডারিং-এর দায়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা উচিত। যে টাকা পাচার হয়েছে সে টাকা ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিত। আমাদের দেশের টাকা নিয়ে আপনাদের ওখানে নিয়ে চ্যারিটি করবে আর আপনারা তার পক্ষে সাফাই গাইবেন। গাইতেই পারেন। আপনাদেরকে টাকা দিচ্ছে। আপনারা তার পক্ষ কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের টাকা নিয়ে যাবে, কথা বলবে না। তার বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। উনি কি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন? এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে হানিফ বলেন, আজ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৯০০ ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদরা বলছেন উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। দেশের এই উন্নয়ন এমনি হয়নি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা না থাকলে মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হয়। আমরা বাংলাদেশে দেখেছি দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কতটুকু লেখাপড়া করেছে সেটা সবাই জানে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে যত অন্যায়, দুর্নীতি ও অপরাধ হয়েছে সবগুলো বেগম খালেদা জিয়ার ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু তার মধ্যে শিক্ষার ঘাটতি থাকার কারণে অনেকে ব্যবহার করতে পেরেছে। খালেদা পুত্র তারেক জিয়া হাওয়া ভবন বানিয়ে সরকারের ভেতর সরকার গড়ে তুলেছিল। দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানিয়েছিল।
হানিফ বলেন, শেখ হাসিনার উদ্যোগের ফলে বছরের প্রথম দিনে দেশের প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে ৩৬ কোটি বই বিতরণ করা হয়। জাতিকে আলোকিত করার জন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছেন। জেলায় জেলায় ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করেছেন। শিক্ষার উন্নয়ন শেখ হাসিনার লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি কাজ করছেন।
বিএনপি মাহসচিব মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি একজন শিক্ষক। তিনি প্রায়ই রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য দেন। কিন্তু কখন সত্য আর কখন মিথ্যা বলেন তার হুঁশ থাকে না। তিনি বলে বসলেন খালেদা জিয়া নাকি প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। অথচ যুদ্ধের সময় খালেদা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট আরামে ছিলেন। সেটা ইতিহাসে আছে। তিনি বললেন, তারেক জিয়া নাকি শিশু মুক্তিযোদ্ধা। প্রকৃত শিক্ষার ঘাটতি থাকলে এ ধরনের উদ্ভট, হাস্যকর কথাবার্তা বলা যায়।
বিবার্তা/সোহেল/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]