‍‍‘১৫ আগস্টের পর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা’
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৫
‍‍‘১৫ আগস্টের পর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

২১ আগস্ট— বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াল এক দিন। দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নেতৃত্বশূন্য করার জঘন্য অপচেষ্টার দিন এটি। ২০০৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলায় হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেইদিন নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করলে সৌভাগ্যের সারথিরূপে বেঁচে যান দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতির জীবনে আরেক মর্মন্তুদ অধ্যায় রচনার এই দিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর দুই কান ও চোখ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপূরণীয় ক্ষতি হয় তার শ্রবণশক্তির। অলৌকিকভাবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন তিনি। তবে এদিন ভয়াবহ, নৃশংস, নিষ্ঠুর-নির্মম গ্রেনেড হামলায় মারা যান মহিলা লীগের তৎকালীন সভাপতি আইভী রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ ২৪ জন নেতাকর্মী ।


দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা বলছেন,২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও জেলহত্যার মতো জঘন্য ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা। স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তি আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে এবং দেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফেরাতে ভয়াবহ, নৃশংস এই গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। আজও এদেশের বিরুদ্ধে লেগে আছে সেই অপশক্তি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও মু‌ক্তিযুদ্ধের ধারাকে অব‌্যাহত রাখতে আমাদের একমাত্র কর্তব‌্য হবে, ঐক‌্যবদ্ধভা‌বে শেখ হা‌সিনার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর হাতকে আরও শ‌ক্তিশালী করা।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবার্তাকে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করা হয়। ভয়াবহ এই দিনে আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। পরবর্তীতে আরো অনেকে মারা গেছেন। শেখ হাসিনা সেইদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। তবে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন।


তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ছিলেন না বলে বেঁচে গিয়েছেন। তবে এরপরেও স্বাধীনতা বিরোধীরা তাঁকে হটানোর ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ করাসহ এদেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফেরাতে নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা করা হয়।


ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা একাত্তরে পরাজিত হয়েও এদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। এরপর থেকে সামরিক যাতাকলসহ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এদেশকে আবার পাকিস্তানমুখী বানানোর নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছিল। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে আবার এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এরপর শুরু হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।


তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করা এবং একইসাথে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করা হয়।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হচ্ছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও জেলহত্যার মতো জঘন্য ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা। একই গোষ্ঠী অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী যে চক্র ছিল এবং দেশি–বিদেশি যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তাদের যোগসাজসে এটা হয়েছে। শুধু স্বাধীনতা নয়, বাঙালির যত চিন্তা অর্থাৎ তারা বাঙালিত্বের বিরোধিতা করেছে। এ দেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ সালের ছয় দফা, ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ সবসময় তারা বিরোধিতা করেছে।


তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি মহলের এই ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাসকে চিহ্ন করে সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। এরপর দেশ আবার পাকিস্তানি ধারায় চলে যায়। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এ দেশকে বাংলাদেশি ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় নামেন। তিনি এসে সর্বপ্রথম যে কাজটি করলেন, তা হলো- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার। ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলেন তখন তিনি এ কাজ শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী যারা ছিল, তাদের বিচারটা নিম্ন আদালতে সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে খুনির সহযোগীরা যখন ক্ষমতায় আসে, তখন তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বাকি বিচার সম্পন্নের কাজ ষড়যন্ত্র করে ঠেকিয়ে রাখে। এরপর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা এবং একইসাথে এই বিচার রোধ করার উদ্দেশ্যে স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশকে আবার পাকিস্তানি ধারায় ফেরাতে এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে একুশ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছে।


তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়ায় তারই ধারইবাহিকতায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। আমি মনে করি, এই চক্র যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পরাজিত হয়ে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষা করতে এই হামলা চালিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে দেয়াও তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।


ড. মীজানুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা বিরোধীরা যখন ভাবলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করা যায় নাই, আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ শেষ করা যায় নাই। তাই নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে একুশ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সাথে ১৫ আগস্টের ঘটনার যে সম্পর্ক, এটা বোঝার জন্য যেটা দরকার সেটা হচ্ছে, হত্যাকারীরা অর্থাৎ ফারুক-রশিদ এরা ঐ সময়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। এটা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণও আছে।


তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হলো, এখানে যে গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা কিন্তু পাকিস্তান থেকে সরবরাহ করা। এক্ষেত্রে আমি বলবো, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং সেটির সাথে জঙ্গিবাদ যোগ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল সম্পৃক্ত থেকে এই হামলা চালানো হয়।


বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বিবার্তাকে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। হাওয়া ভবন বা বিএনপির মদদে হওয়া এই কাজটি উচিত হয়নি, বরং এটি ছিল নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, পাশবিকতা।


এক্ষেত্রে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই গণতন্ত্রে ভিন্ন দল, ভিন্ন মত থাকবে। কিন্তু ভিন্নমতের নামে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এদিকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড পাকিস্তান থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হয়। তদন্তের পর এই তথ্য বেরিয়ে আসে। এই দেশের জাত শত্রু পাকিস্তান আবার এই ঘটনায় ইনবলভ হওয়া খুবই নিন্দনীয় ছিল। এর মাধ্যমে দেশটি এটাই প্রমাণ করেছে- এই দেশের স্বাধীনতা মানতে না পেরে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিই যুগে যুগে তাদের টার্গেট।


তিনি বলেন, আমি মনে করি হত্যার রাজনীতি দ্বারা মূলত রাজনীতিকে হত্যা করা হয়। এগুলো খুবই নিকৃষ্ট কাজ এবং একইসাথে অগ্রহণযোগ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টও নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা হয়, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্ট ও বর্বর হত্যাকাণ্ডের একটি। স্বাধীনতা বিরোধী এই দেশীয় স্বার্থান্বেষী কিছু কুচক্রী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জঘন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাহিরে থাকায় এই হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যাদেরও টার্গেট করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনাকে ২১ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, আমি বিএনপি -জামায়াতকে বলতে চাই, আপনারা জঘন্য এই কাজগুলো থেকে নিবৃত্ত হন। সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করুন। লাশের রাজনীতি কোন সুফল বয়ে আনে না।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com