'ঢাকা জেলা প্রশাসন হবে ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে আইডিয়াল ও স্মার্ট'
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ১৯:১০
'ঢাকা জেলা প্রশাসন হবে ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে আইডিয়াল ও স্মার্ট'
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

আনিসুর রহমান। দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। বুধবার (২৬ জুলাই) ঢাকার বিদায়ী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের কাছ থেকে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।


এর আগে, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গাজীপুর জেলায় ১ বছর ৬ মাস সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন আনিসুর রহমান। এ ছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৎ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন আনিসুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার হতে ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস পলিসিতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

ঢাকার নবনিযুক্ত এই জেলা প্রশাসক সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বলেছেন। আলাপে তিনি ঢাকা জেলা নিয়ে তাঁর স্বপ্নসহ নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল।


বিবার্তা: গত ২৬ জুলাই (বুধবার) আপনি ঢাকা জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?


আনিসুর রহমান: অনুভূতির কথা যদি বলি, তাহলে আমি বলবো- এটি একটি দায়িত্ব মাত্র। ফলে এখানে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে কাজ করাটাই মুখ্য বিষয়। আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আর আমার চাকরিও বদলিযোগ্য চাকরি। এরআগে অন্য একটা জেলায় জেলা প্রশাসকের কাজ করছিলাম। পরে সরকার সরকারি প্রয়োজনে এখানে আমাকে বদলি করেছে। এরপর এখানে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। নিজের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে এটাই বলতে চাই, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবো।


বিবার্তা: আপনি প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে গাজীপুর জেলায় সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু ঢাকা জেলা প্রশাসকের দায়িত্বকে বাড়তি চ্যালেঞ্জ মনে করেন কি-না?


আনিসুর রহমান: দেখুন, ঢাকা জেলার দায়িত্ব কিছুটা তো বাড়তি চ্যালেঞ্জের হবে। রাজধানী শহর বলে কথা। এখানে জমিসহ অন্যান্য যে সকল বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলোর বহুমাত্রিকতা রয়েছে।


এখানে গত কয়েকদিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এখানে কাজের প্রেশার একটু বেশি। তবে আমরা চেষ্টা করবো এটাকে শৃঙ্খলার সাথে রেখে যথাযথ সময়ে যথাযথ কাজটি করতে, যাতে মানুষকে সহজেই নাগরিক সেবা প্রদান করা যায়। আর এটিই আমাদের লক্ষ্য।


তাছাড়া আপনারা জানেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমাদের তো অবশ্যই স্মার্ট অফিস প্রয়োজন। আমি গাজীপুরেও আমার কর্মকালে চেষ্টা করেছিলাম স্মার্ট বাংলাদেশের ৪ টি স্তম্ভ নিয়ে কাজ করতে। এগুলো হলো- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট। সেই জায়গায় এখনও আমরা স্মার্ট অফিস হিসেবে রূপান্তরের জন্য যে সকল কাজ করার প্রয়োজন, সেই কাজগুলোও আমি এই অফিসে করবো।


বিবার্তা: দায়িত্ব পালনকালে আপনি কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে চান?


আনিসুর রহমান: দেখুন- একজন জেলাপ্রশাসকের দায়িত্ব ও কার্যাবলিতে অসংখ্য কাজ রয়েছে। সাধারণ দায়িত্বাবলীর মধ্যে রয়েছে, রাজস্ব প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা,জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি, জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা, জেলখানা,পযটন, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয়াদি, গোপনীয় প্রতিবেদন, ট্রেজারি ও স্ট্যাম্প, দুর্নীতি দমন,জন উদ্বুদ্ধকরণ, লাইসেন্স, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, সম্পত্তি অধিগ্রহণ এবং হুকুম দখল, সংবাদ এবং প্রকাশনা, নির্বাচন, সীমান্ত বিষয়াদি, পরিসংখ্যান,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা,খাদ্য,আনসার ও ভিডিপি,সিভিল ডিফেন্স,শ্রম বিষয়ক,সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনী,পরিবার পরিকল্পনা,পেনশন ও পরিতোষিক, রাষ্ট্রাচার,পরিবহন ও যোগাযোগ,জেলা পরিবহন পুল, প্রাথমিক- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে কাজ,নাগরিক বিনোদন,ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী,আন্তঃ বিভাগীয় সমন্বয়, জেলা প্রশাসকের সংস্থাপন,মানব সম্পদ উন্নয়ন, অভিযোগ শ্রবণ এবং তদন্ত, স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া, নারী ও শিশু,কৃষি, বাজার মূল্য পরিবীক্ষণ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ,ধর্ম বিষয়ক, পাসপোর্ট, স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন, এনজিও বিষয়ক,শিল্পকলা,উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয়, জেলার সরকারি আবাসন,উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অজন, সিটিজেন চার্টার,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি,তথ্য অধিকার, জলবায়ু পরিবতন ও পরিবেশ সংরক্ষণ,বনায়ন, প্রবাসী কল্যাণসহ প্রভৃতি।


এছাড়া তাকে আরও নানা ইস্যুতে নানা দায়িত্ব পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে আমি বলবো, আমার উপর অর্পিত দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করবো। বিশেষ করে জনসম্পৃক্ত কাজগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে।


বিবার্তা: প্রভাবশালীদের কাছে বেদখল হয়ে থাকা জমি উদ্ধার করা খুবই চ্যালেঞ্জিং কাজ। এক্ষেত্রে আপনাদের জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে কি না?


আনিসুর রহমান: হ্যাঁ, অবশ্যই ! এই বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। ইতোপূর্বেও দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসক মহোদয় জমি উদ্ধার করেছেন। আমাদের জবর দখলি জমি উদ্ধার করা জেলা প্রশাসনের নিয়মিত কাজ। কাজেই এই কাজ অবশ্যই অব্যাহত তো থাকবে, বরং এটিকে আরও জোরদার করার চেষ্টা করা হবে। অনেক সময় দেখা যায়, উদ্ধার করা জমিও আবার বেদখল হয়ে যায়। এই বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেষ্টা করতেছি। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। আর এর জন্য একটা বাজেটও বরাদ্দ করেছি অর্থাৎ জমিকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, সেই চেষ্টাই চলছে। এক্ষেত্রে বাউন্ডারি দেওয়া যায় কিনা কিংবা কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায় কিনা এই বিষয়গুলো আমরা পরীক্ষা করে দেখতেছি। মোটকথা, উদ্ধার করা জমিগুলো যাতে পুনরায় জবর দখল না হয়, সেই চেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।


বিবার্তা: দায়িত্ব পালনকালে ঢাকা জেলা প্রশাসন নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?


আনিসুর রহমান: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই ঢাকা জেলা প্রশাসন নিয়ে আমার স্বপ্ন হচ্ছে,এই জেলা প্রশাসন হবে ৬৪ জেলার ভিতরে সবচেয়ে আইডিয়াল এবং স্মার্ট জেলা প্রশাসন। একটা সময় আমরা নাগরিকদের টিভিসি বলতাম। পরবর্তীতে এই টাইম, ভিজিট ও কস্ট কমানোর জন্য এটুআই চালু করা হয়েছে। আর এখন এটাকে আপডেট করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা সব সেবা পাচ্ছি। অর্থাৎ এটা দিয়ে একজন নাগরিক ঘরে বসে স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে আবেদনটি করবেন। আর সেবাটি তার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কাজ করবে।


সব সরকারি সেবাকে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রদানের জন্য ‘মাইগভ’ যাত্রা শুরু করে ২০২০ সালে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারি সেবাগুলোকে ই-সেবায় রূপান্তর করতে এটুআই প্রোগ্রামের উদ্যোগে ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ‘মাইগভ’ একটি সমন্বিত সেবা প্ল্যাটফর্ম। ১৭২টি সেবা নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্ল্যাটফর্মটিতে এখন দুই হাজার সরকারি সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


মাইগভে নাগরিকরা একটি মাত্র ওয়েব ঠিকানায় একবার নিবন্ধন করেই অনলাইনে সব সরকারি সেবার অনলাইনে আবেদন ও সেবা গ্রহণ করতে পারছে। এর ফলে নাগরিক যেমনভাবে কম সময়, কম খরচে ভ্রমণ করে সর্বোচ্চ মানের সেবা পাচ্ছে, তেমনি নাগরিকরা প্রাপ্ত সেবার কোয়ালিটি সম্পর্কে মতামত প্রদান করতে পারছে।


আমি গাজীপুরের জেলা প্রশাসক থাকাকালে এটুআই এর ৬ টি সেবাকে পাইলট আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমি ঢাকায় আসার পরেও এটুআই থেকে ওয়ার্কশপ করা হয়েছে। আমরা আশা করতেছি যে, আমাদের পর্যায়ক্রমে যে নাগরিক সেবাগুলো দেওয়া হয়, সেগুলোকে মাইগভ প্ল্যাটফর্মে নিয়ে স্মার্টলি আমরা ডেলিভারি দিবো অর্থাৎ একজন নাগরিকের ডিসি অফিসে এসে ডিসির সাথে সাক্ষাৎ করার প্রয়োজন হবে না। নির্দিষ্ট ব্যক্তি অনলাইন ডিভাইসের মাধ্যমে তার সেবাটির যাবতীয় প্রক্রিয়া দেখতে পারবে৷ সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।


বিবার্তা: বিবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


আনিসুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ। বিবার্তার জন্য শুভকামনা রইল।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com