বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার নির্জন পাহাড়ে স্থায়ী জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র শীর্ষ নেতারা। সেই উদ্দেশ্যে তারা দুবাই প্রবাসী রাশিদ আলীর কাছ থেকে সাত লাখ টাকায় ৫০ শতক জমি কিনেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ আরো কয়েকটি দেশে অবস্থানকারী জঙ্গিরা হুন্ডির মাধ্যমে এই অর্থের যোগান দিচ্ছিল।
বিস্ফোরক সরঞ্জামসহ ওই আস্তানায় নেয়া হয়েছিল অস্ত্র ও গোলাবারুদ। পাঁচ শতাধিক টুথপেস্ট, আড়াই শতাধিক ব্রাশ, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও শুকনা খাবারের মজুদ পাওয়া গেছে ওই আস্তানায়।
কথিত ইমাম মাহমুদের প্ররোচনায় সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহণ এবং প্রশিক্ষণ শেষে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর বড় ধরনের হামলা চালাতে সেখানে সংগঠিত হয় তারা। কথিত হিজরতের নামে বাড়ি ছেড়ে সপরিবারে কিংবা একা পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে তারা। সম্প্রতি পৃথক ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, গ্রেফতার জঙ্গিরা সাংগঠনিক নির্দেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে ক্যাম্প নির্মাণসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেখানে তারা কমান্ডো ধরনের প্রশিক্ষণও নিচ্ছিল। সিটিটিসির অভিযানে প্রশিক্ষণের জন্য আনা কমান্ডো বুট, বিস্ফোরক দ্রব্য ও ডেটোনেটরও জব্দ করা হয়।
সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইমাম মাহমুদের কাফেলাকে অর্থের যোগান দেয়া হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।
সংগঠনটির অন্যতম সদস্য জামিল একসময় ওমানে থাকত। ওই সময় তার সঙ্গে কাতার প্রবাসী রাশিদ আলীর পরিচয় হয়। সেই সূত্রেই রাশিদের কাছ থেকে ৫০ শতক (সরকারি খাসজমি) জমি কিনে সেখানে জঙ্গি আস্তানা করা হয়।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, শুরুতে ওই জঙ্গি আস্তানায় বসবাসের জন্য তিনটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়। স্থানীয়রা সন্দেহ করলে তারা বলে, নদীগর্ভে নিজেদের বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে বলে তারা ওখানে জমি কিনে ঘর বানাচ্ছে।সেখানে সবজি চাষ ও সামাজিক বনায়নের কথাও তারা বলত।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে নাটোরের জুয়েল মাহমুদ (৩০) কথিত ইমাম মাহমুদের কাফেলার দলনেতা বলে দাবি করেছেন। সাত মাস আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সেই সময় জেলে বসে পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা গড়ার পরিকল্পনা নেন জুয়েল। এরপর জামিনে বের হয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উগ্রপন্থীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় চিকিৎসক সোহেল তানজীমের। চিকিৎসক সোহেলও এর আগে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিন নিয়ে তারা একত্রিত হয়ে অন্যদের সংগঠনে ভেড়াতে যোগাযোগ শুরু করেন।
এরই অংশ হিসেবে চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক রাহাত মণ্ডল ও মেহেদী হাসানকে তাদের সংগঠনে ভেড়ান। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে রাহাত ও মেহেদী চীন থেকে দেশে ফিরে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা জঙ্গি আস্তানায় চলে যান। এই পরিকল্পনায় তারা নটরডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীকেও তাদের সঙ্গে নেন।
সিটিটিসি বলছে, সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের চিকিৎসক সোহেল তানজীম রানা, যশোর থেকে ঢাকার নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম, জামালপুর থেকে এরশাদুজ্জামান শাহিনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী লোকদের পরিবারসহ কিংবা একা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করে সিটিটিসি। গত ৭ আগস্ট ঢাকার গাবতলী এলাকা থেকে ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও দেশের অন্য স্থান থেকে কথিত ইমাম মাহমুদের প্ররোচনায় সপরিবারে হিজরত করা ছয়জন নারী ও চারজন পুরুষসহ ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মেলে নতুন জঙ্গি সংগঠনের তথ্য।
এরপর গত ১২ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামের নির্জন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]