স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ১০ সুন্নাহ
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ১০:২৯
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ১০ সুন্নাহ
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশে পরিপূর্ণভাবে স্ত্রীদের অধিকার আদায় করতে দেখা যায় খুব কম। দেনমোহর পরিশোধ বা মাসিক ভিত্তিতে ভোরণপোষণ দেওয়া এগুলোর চর্চা নেই বললেই চলে। শুধু স্ত্রী কর্তৃক মামলা দিলে এসব অধিকার আদায়ের বিষয়টা সামনে আসে।


স্ত্রীদের এসব মৌলিক অধিকার যেখানে ক্ষুণ্ন সেখানে অন্যান্য সুন্নাহ তো মানুষ একদমই ভুলে গেছে। চলুন স্ত্রীদের প্রতি স্বামীর ১০টি সুন্নাহ সম্পর্কে জেনে নেই যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার স্ত্রীদের সাথে করতে দেখা যেত।


১. স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করা


আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন তা জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, ‘তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময় হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন’। (বুখারি ৬০৩৯)


২. নিজের কাজ নিজেই করা


অনেকে নিজের কাজগুলো সর্বদা স্ত্রীদের দ্বারা করিয়ে থাকেন অথচ সেগুলো রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই করতেন।


এক লোক আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলো, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কী কাজ করতেন? উত্তরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘হ্যাঁ, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং পুরুষরা ঘরে যা করে তিনি তা করতেন’। (মুসনাদে আহমদ ২৪৭৪৯)


৩. যেকোনো কাজে স্ত্রীদের পরামর্শ নেওয়া


নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের নানা সমস্যা তাঁর স্ত্রীদের কাছে জানাতেন। তাঁরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরামর্শ দিতেন। হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের সাথে চুক্তি শেষ করে সাহাবাদেরকে হাদির পশু যবাই করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁরা রসুলের হিকমত বুঝতে না পেরে জবাই করতে বিলম্ব করেন, এতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে উম্মে সালামাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট প্রবেশ করে এ ঘটনা জানান।


উম্মে সালামাহ্‌ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ সমস্যা সমাধানে বলেন, আপনি নিজে পশু জবাই করুন ও মাথা মুণ্ডান তাহলে তারা তাই করবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করার পর সাহাবায়ে কেরাম তা খুব দ্রত করে ফেলেন। (বুখারি ২৭৩১)


৪. স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার করা


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা করতেন, তাদের সাথে ভালোবাসা ও বদান্যতার সাথে আচরণ করতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইমানদার সেই ব্যক্তি যে উত্তম চরিত্রের ও তার পরিবারের সাথে সদ্ব্যবহার করে’। (তিরমিজি)


৫. স্ত্রীদের সঙ্গে অযথা রাগ না করা


আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।’ আমি বললাম, কি করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, ‘তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রবের কসম। কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, ইবরাহিম আলাইহিস সালামের রবের কসম।’ শুনে আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর্ কসম, ইয়া রসুলাল্লাহ্! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি।


৬. ভালোবাসা ও আনন্দ দেওয়া


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। সফরে গেলে স্ত্রীদের সাথে নিয়ে যেতেন। স্ত্রী পাত্রের যেখানে মুখ লাগাতেন সেখানে তিনিও মুখ লাগিয়ে খেতেন। (মুসলিম ৩০০, নাসায়ি ৮৮৯৪)


৭. সন্তানের প্রতি যত্ন নেয়া


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্তানদের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল ছিলেন। তা শুধু স্ত্রীদের ওপর ন্যস্ত করে রাখতেন না। (সহিহ ইবনে হিব্বান ৫৯৫০)


৮. বয়স্ক মেয়েকে বিবাহ করা


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে যখন বিয়ে করেছিলেন তখন তার বয়স ছিলো ২৫ ও খাদিজা (রা.)-এর বয়স ছিলো ৪০। এ ব্যাপারে আরও অন্যান্য বর্ণনা পাওয়া গেলেও সব বর্ণনায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বয়স কমই পাওয়া যায়।


৯. তালাকপ্রাপ্তাকে বিবাহ করা


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশসহ কয়েকজনকে বিয়ে করেছিলেন যারা তালাক প্রাপ্তা ছিলেন।


১০. বিধবাকে বিবাহ করা


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হাবিবা (রা.)-কে বিয়ে করেছিলেন যিনি বিধবা ছিলেন।


সর্বদা একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, স্ত্রীদের সাথে কোনো প্রকার খারাপ আচরণ করা যাবে না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি। (তিরমিজি ৩৮৯৫)


রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে।’ (বুখারি ৫২০৪)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com