বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ওই দিন ভোর রাতে বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক ক্ষমতালিপ্সু বিপথগামী সদস্য। ঘাতকরা শুধু সেদিন বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাঁর হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনাকেই হত্যা করা হয়েছিল।
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল, রোজি জামাল, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিসহ পরিবারের ২৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া নৃশংস এ ঘটনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত বাংলাদেশের। মানুষকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এবং সেই স্বপ্নের বাস্তাবায়নও করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুর্নগঠন করে বঙ্গবন্ধু যখন বাঙালিকে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করছিলেন, ঠিক সেই সময়ে বাঙালি জাতির মহান নেতাকে সপরিবার হত্যা করে ঘাতক দল ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম ঘটনা ঘটিয়েছিল। যা পুরো বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল।
তারা বলছেন, শোষিত, নিপীড়িত জনগণের মুক্তির প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকের দল বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক মিনি পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যেই চরম দরিদ্র দেশ থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন, অগ্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এখনও ষড়যন্ত্র করছে। রক্তে অর্জিত বাংলাদেশকে খুনিরা আর যেনো পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পিছনের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে তদন্ত কমিশন করা দরকার।
বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সুদূর পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবার হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের বর্বরোচিত ঘটনা। জাতির পিতাকে ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। ১৫ আগস্ট আমাদের জন্য চরম বেদনার, কষ্টের এবং লজ্জার দিন।
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু আদর্শ ও চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরের ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো তৎপর রয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের বংশধররা এখনো এদেশে রয়েছে। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রকারীদের উৎখাত করে কিন্তু তারা আবার নতুন করে তৈরি হয়। জঙ্গিরা তো শেষ হয় না। ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে আমাদেরকে আরো সতর্ক হতে হবে।
ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই আমরা বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু ভিশনারি লিডার ছিলেন। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশ পুনর্গঠন করেছিলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
আগস্ট মাসে কারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল? তারা ছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান ও তাদের পশ্চিমা মিত্র আগস্ট মাসে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার মূল চেতনাকে হত্যা করা হয়েছিল। বিশ্বের অনেক দেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কথা আমরা জানি। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নিষ্ঠুর, পৈশাচিক ও জঘন্য হত্যাকাণ্ড আর কোথাও হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পিছনের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে তদন্ত কমিশন করা দরকার।
পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছিল আগস্ট মাসে। এজন্য তারা আগস্ট মাসকে বেছে নিয়েছিল। পাকিস্তানের দোসর, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আগস্ট মাস এলেই অপকর্ম করার চেষ্টা করে। এ মাসেই তাদের ষড়যন্ত্রের ডালপালার বিস্তার ঘটে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছিল, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা করে বাংলাদেশ উন্নয়ন, অগ্রগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো তৎপর রয়েছে। আমাদের বাড়তি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
মাহবুবউল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবার যেভাবে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে, পৃথিবীতে এমন নৃশংসতা আর হয়েছে কি-না জানা নেই। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় মেনে নিতে পারেনি তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। ঘাতকের দল বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক মিনি পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। বাঙালি জাতির মহান নেতাকে সপরিবার হত্যা করে ঘাতকরা ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম ঘটনা ঘটিয়েছিল। এ ঘটনা পুরো বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল।
বিএনপি-জামায়াত খুনির দল। খুনিরা এখনো তাদের চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাদের কোনো নীতি, আদর্শ নেই। সেই খুনিদের দোসররা এখনো টিকে আছে, বেঁচে আছে। তারা আগেও গণতন্ত্র হত্যা করেছে আবারও গণতন্ত্র হত্যা করে দেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চায়। তাদের চরিত্র পাল্টায়নি- তাই এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তারা এখনো দেশে খুনের রাজনীতি কায়েম করতে চায়। আগস্ট মাস আসলে তারা উন্মাদ হয়ে যায়। খুনিদের ভাষায় তারা কথা বলে। এটা তাদের স্বভাবজাত ও এটাই তাদের আদর্শ। স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাংলাদেশের মানুষ খুনিদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এক এবং অভিন্ন। জাতির পিতার হাত ধরেই আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছিল। একটি বাদ দিয়ে আরেকটির কোনো ইতিহাস নেই। সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের কারণে বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ যখন উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। দেশিয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে হত্যা করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে শুধু কর্নেল ফারুক ও রশিদ জড়িত ছিল না। বরং পনের আগস্ট হত্যাকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছেনে চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচনে তদন্ত কমিশন গঠন করা যেতে পারে।
এস এম কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]