ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে টিআইবির ১৫ দফা সুপারিশ
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ২০:৫০
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে টিআইবির ১৫ দফা সুপারিশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণেই ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।


ফলে গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পূর্বের প্রণীত ১৫ দফা সুপারিশ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের নিকট পুনরায় পাঠিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্য সংকট ঘোষণা ও জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে সংস্থাটি।


৮ জুলাই, শনিবার এক বিবৃতিতে এসব জানায় টিআইবি। বলা হয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সিটি করপোরেশন গুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না।


বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে, এ জাতীয় সতর্কবার্তা ছিলো, তথাপি রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক।


উল্লিখিত গবেষণা প্রসূত পলিসি ব্রিফকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছিলো না, তা বলাই বাহুল্য, আর যেটুকু উদ্যোগ দেখা গেছে, তা পরিস্থতি বিবেচনায় যে অপ্রতুল কিংবা লোক দেখানো প্রচারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো, তা-ও না বললেই চলে। রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার যে সম্ভাবনা ছিলো, সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি বাস্তবে কতটুকু ছিলো, তা প্রশ্নবিদ্ধ।


এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত ১৫ দফা সুপারিশ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের নিকট পুনরায় প্রেরণ করে বর্তমান পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্য সংকট ঘোষণা করে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।


টিআইবির ১৫ দফা সুপারিশ হলো-


১। সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সব অংশীজনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্ট করা হবে।


২। জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে মশা নিধনে নিজস্ব পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।


৩। মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে ২ সিটি করপোরেশনকে একইসঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মশা নিধনে পরিবেশবান্ধব-পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন: মশার উৎস নির্মূল- ২টি ভবনের মধ্যবর্তী জন-চলাচলহীন অংশে জমে থাকা পরিত্যক্ত বর্জ্য, ঝোপঝাড়, ড্রেন, ডোবা, নালা এবং খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা, পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক ব্যবহার)। বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।


৪। সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ-নির্ণয় কেন্দ্রকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজের অধীনে নিয়ে আসতে হবে, যেখানে সবার অভিগম্যতা নিশ্চিত থাকবে। ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিটি করপোরেশন এবং দেশের অন্য এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।


৫। স্বাস্থ্য অধিদফতর, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ইত্যাদি দপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিবছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই (মে-আগস্ট) সব হটস্পট চিহ্নিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।


৬। সব যোগাযোগমাধ্যমে (প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) এডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে সচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বাড়াতে হবে; প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক মাইকিং, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচার কার্যক্রম চালাতে হবে।


৭। এডিস মশার জরিপ কার্যক্রম ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কীটতত্ত্ববিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।


৮। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবন ও প্রকল্প এলাকাগুলোতে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা এবং উৎস নির্মূলসহ সমন্বিত ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষ দল বা র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করা যেতে পারে।


৯। জনসংখ্যা, আয়তন, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ইত্যাদি বিবেচনা করে মাঠপর্যায়ের জনবলের চাহিদা নিরূপণ এবং চাহিদার ভিত্তিতে নিয়োগ বা আউটসোর্সিং করতে হবে; এর জন্য পর্যাপ্ত ও সুষম বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।


১০। মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে হবে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।


১১। উপযুক্ত কীটনাশক ও এর চাহিদা নির্ধারণ, ক্রয়, কার্যকরতা ও সহনশীলতা পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটি করতে হবে, তাদের কার্যক্রম নিয়মিত হতে হবে এবং সভাগুলোর কার্যবিবরণী প্রকাশ করতে হবে।


১২। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কীটনাশক ক্রয় প্রক্রিয়ায় জাতীয় ক্রয় আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে।


১৩। মশা নিধন কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়গুলো তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।


১৪। মশার কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা রোধ করার জন্য কিছুদিন পরপর যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কীটনাশক পরিবর্তন, একেক এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।


১৫। তৃতীয় পক্ষ (বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কীটতত্ত্ববিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইত্যাদি) কর্তৃক মশার কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা এবং মশা নিধন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।


স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেছে টিআইবি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com