শিরোনাম
হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী মঙ্গলবার
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ২২:০৯
হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী মঙ্গলবার
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী মঙ্গলবার আজ। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।


হুমায়ূন আহমেদের পিতার নাম ফয়েজুর রহমান। একাত্তরে পাক হানাদাররা তাকে হত্যা করে। মা আয়েশা ফয়েজ। স্কুল জীবনে হুমায়ূন আহমেদকে পিতার চাকরিস্থল কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া ও পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতে হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।


ছাত্র জীবনেই তার লেখালেখি শুরু। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শংখনীল কারাগার’। এই দুটি বই প্রকাশের পর হুমায়ূন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হন। সেই থেকে জীবিতকালে তার দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয়।


দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক ধরে তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং রসাত্বক ও বিজ্ঞানস্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গল্প বলায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল এবং বর্ণনায় লোকজধারাকে প্রাধান্য দেন। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তার প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। মানুষের মানচিত্রও উঠে এসেছে। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাকে পথিকৃৎ বলেছেন সমোলোচকেরা।


হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক। তিনি সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তার প্রতিভা দেখিয়েছেন আপন মনে। একাধারে তিনি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। সেজন্যই তাকে বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরক দিয়েই বাংলা কথাসাহিত্যে পালাবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। এর পর শঙ্খনীল কারাগার, লীলাবতী, জোছনা ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, বাদশাহ নামদারসহ দু’শোর বেশি উপন্যাস রচনা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার উপন্যাসের চরিত্র হিমু, মিসির আলী, শুভ্র বইয়ের পাতা থেকে টেলিভিশনের পর্দা কিংবা সেলুলয়েডে তরুণ-তরুণীদের আপনজন হয়ে ওঠে। ১৯৮০ সালে নাটক রচনা শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ।


তার লেখা নাটক এই সব দিনরাত্রির জনপ্রিয়তার পর তিনি তৈরি করেন বহুব্রীহি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, উড়ে যায় বকপক্ষীসহ বহু নাটক।


সিনেমা পরিচালক হিসেবেও তার ছিলো প্রচুর সুনাম। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’। এই সিনেমার জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে জাতীয় ‍পুরস্কার পেয়েছিলেন। একই বছর তিনি একুশে পদক অর্জন করেন। এরপর তিনিও নির্মাণ করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’ এবং আমার আছে জলসহ বহু চলচ্চিত্র। তার নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।


তিনি উপন্যাস, গল্প, জীবনী, নাটক ও চলচ্চিত্র নিয়ে করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা কয়েকটি উপন্যাস, নাটক আর চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে তিনি অবসর নেন।


শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে হুমায়ূন আহমেদ গাজিপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নুহাশ পল্লী’। এই প্রতিষ্ঠানই ছিল তার সকল কাজের আঙ্গিনা। ২০১০ সালে সরকার হুমায়ুন আহমেদকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করে।


তার প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে ‘জ্যোৎ​স্না ও জননীর গল্প’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘হিমুর আছে জল’, ‘লীলাবতী’, ‘হরতন ইস্কাপন’, ‘হিমুর বাবার কথামালা’, ‘আমিও মিসির আলী’, ‘হিমু রিমান্ডে’, ‘মিসির আলীর চশমা’, ‘দিঘির জলে কার ছায়া গো’, ‘আজ হিমুর বিয়ে’, ‘লিলুয়া বাতাস’, ‘কিছু শৈশব’, ‘হুমায়ুন আহমেদের ভৌতিক অমনানিবাস’, ‘আগুনের পরশমনি’, ‘পাপ ৭১’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। তার নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘শংখনীল কারাগার’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’ প্রভৃতি।


সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।


বাংলা শিল্প সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখা গুণী এ মানুষটি ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।



চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হুমায়ূন মেলা


হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সপ্তমবারের মতো হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ‘ হুমায়ূন মেলা’।


এদিন বেলা ১১টায় হিমুপ্রেমিরা হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে হলুদ বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করবেন। উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্য-সহ বিভিন্ন অঙ্গণের হুমায়ূন ভক্ত ও বিশিষ্টজনরা।


উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে পরিবেশিত হবে হুমায়ুন আহমেদের লেখা গান। হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে স্মৃতিকথা বলবেন অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা। নৃত্য পরিবেশন করবে চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে ও অন্যান্য নৃত্যশিল্পীরা। আরো থাকবে হুমায়ূন আহমেদের লেখা থেকে আবৃত্তি পরিবেশনা।


মেলার স্টুলগুলোতে থাকবে হুমায়ুন আহমেদের বই, হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্র ও নাটকের ভিডিও সিডি। স্টুলগুলোতে আরো থাকবে দেশীয় নানান পণ্যসামগ্রী। হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে চিত্রাংকন করবে বিভিন্ন বয়সী শিশুশিল্পীরা। মেলা সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই ও রেডিও ভুমি।


হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ৭.৩০ মিনিটে ‘গানে গানে সকাল শুরু’ প্রচারের মধ্য দিয়ে। এ অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের লেখা চলচ্চিত্র ও নাটকের গানগুলো সরাসরি গাইবে সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন মোস্তাফিজুর রহমান নান্টু। বিকেল ৩.০৫ মিনিটে দেখানো হবে হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।


বিবার্তা/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com