শিরোনাম
কৃপণতার ফল
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২৯
কৃপণতার ফল
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
প্রিন্ট অ-অ+

ফজর আলী একজন ব্যবসায়ী। গ্রামে তার একটি দোকানও আছে। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে তার দোকানে নেই, এমন কিছুই নেই। দোকানে একজন কর্মচারীও আছে। কর্মচারীর বেতনও খুব কম দেন তিনি। এতে কর্মচারীও খুব অখুশি। অন্য কোথাও কাজ না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তার দোকানেই কাজ করে যাচ্ছে সে।


এলাকার একমাত্র দোকান হওয়ায় ফজর আলীর দোকানে বেচা-বিক্রি ভালো। এ দোকানের আয় দিয়ে খুব অল্প দিনেই তিনি এলাকার ধনী লোকে পরিণত হয়েছেন।


তবে খুবই কৃপণ ফজর আলী। কৃপণতার কারণে বিপুল অর্থ সম্পদ থাকা সত্বেও তার পরিবারের সদস্যরা খুবই নিন্মামনের জীবনযাপন করেন। ভালো পোশাক, পুষ্টিকর খাবার থেকেও তারা বঞ্চিত। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তাদের দু’জনকে তিনি খুব ধনী পরিবার দেখে বিয়ে দিয়েছেন।


তার উদ্দেশ্য হলো- আত্মীয় স্বজন ধনী থাকলে নিজের তেমন টাকা পয়সা খরচ হয় না। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি থেকেও অনেক উপহার আসে। সেগুলো দিয়েই কোনোরকম পরিবারের প্রয়োজন মিটে যায়।


ছেলে মেয়েদের জন্যও খরচ করতে চান না ফজর আলী। ছেলের বিয়ের সময়ও তার শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক নিয়েছেন তিনি। মাঝে মাঝে ছেলের প্রয়োজনীয় খরচের টাকাও তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে এনে খরচ করার জন্য বলেন। এজন্য তার পরিবারের সদস্যরাও তার উপর খুবই অসন্তুষ্ট।


এমনকি নিজের জন্যও কোনো খরচ করতে চান না ফজর আলী। তার একটি জামার মধ্যে দশ বছরে ১৪টি সেলাই করতে হয়েছে। তবুও তিনি নতুন জামা কিনতে নারাজ। দশ বছরের পুরোনো জুতাকেও আবার জোড়া তালি দিয়ে পরার চেষ্টা করেন।


কৃপণতা করতে করতে তিনি প্রায় বুড়ো হয়ে গেছেন। চুলগুলোও একদম সাদা হয়ে গেছে। কিন্তু টাকা খরচের ভয়ে তিনি চুলার কয়লা গুড়ো করে সঙ্গে পানি মিশিয়ে চুল কালো করেন। তারপরও চুলের কলম কেনেন না। অথচ চুলের কলম তিনি তার দোকানেই বিক্রি করেন। সেখান থেকেও একটি নিজের জন্য নেন না।


একবার সোনা রূপাসহ অনেকগুলো টাকা তিনি ঘরের সিন্দুকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। প্রতিদিন তিনি সকাল বিকেল দু’বার করে তার সোনা রূপা ও টাকাগুলো দেখে রাখতেন। কিছুদিন পর তার সব সোনারূপা ও টাকা চুরি হয়ে যায়। দীর্ঘ দিনের সঞ্চয় চুরি হয়ে যাবার কারণে তিনি খুব দুঃখ পেলেন। দু’চার দিন কান্নাকাটিও করেছেন খুব। কিন্তু তার কৃপণতা থামেনি।


সেসব হারানোর গ্লানি ভুলে আবার সোনারূপা ও টাকা জমাতে শুরু করলেন। কিছুদিন পর আবারও অনেকগুলো টাকা ও সোনারূপা জমে গেল। সেগুলোও তিনি সিন্দুকে জমা রেখে দেন। আবার আগের মতো দিনে দু’বার করে সেগুলো দেখে রাখেন। কিন্তু সেগুলোও কিছুদিন পর চোর চুরি করে নিয়ে যায়। এভাবে বহুবার তার জমাকরা ধন-সম্পদ চুরি হয়ে যায়। তবুও তিনি পরিবার বা নিজের জন্য একটি কড়িও খরচ করেন না।


একদিন ফজর আলী খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ছেলে মেয়ে আত্মীয়, স্বজন ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তার জন্য ওষুধ ও ভালো পুষ্টিকর খাবার আনতে লাগলেন। তখনও তিনি তার জমাকৃত টাকা থেকে খরচ করার জন্য বার বার নিষেধ করেন। তবুও তার পরিবারের সদস্যরা তার চিকিৎসায় কোনো ত্রুটি করেননি। তাদের নিজ নিজ অর্থে তার চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ চালিয়ে যান। ফজর আলীর টাকা থেকে তারা একটি কড়িও খরচ করেননি।


একদিন ফজর আলী মারা যান। থেকে যায় তার জমাকৃত অনেক সম্পদও। অঢেল ধন সম্পদের মালিক হওয়া সত্বেও তিনি জীবনে কোনো দিন ভালো কোনো খাবার খাননি। কোনো দিন ভালো পোশাক পরেননি। তার উপার্জিত কোনো সম্পদ তার কোনো কাজে আসেনি। তার পরিবারের কারও কাজে লাগেনি এসব ধন সম্পদ। বরং কয়েকবার তার সীমাহীন পরিশ্রমে অর্জিত সম্পদ চোর তার কাজে লাগিয়েছে।


ফজর আলী প্রমাণ করে দিলেন- কৃপণের জমাকৃত সম্পদ তার নিজের এবং তার কোনো আপনজনেরও কাজে লাগে না। শুধু কৃপণতা করে সম্পদের স্তুপ করে তা রেখে যায়। আর সারা জীবন ধরে শুধু মানুষের অভিশাপ লাভ করে।


বিবার্তা/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com