বন্যা'র থিমে চমকপ্রদ শিল্পকর্মে এবারের ‘ঢাকা আর্ট সামিট’
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:২২
বন্যা'র থিমে চমকপ্রদ শিল্পকর্মে এবারের ‘ঢাকা আর্ট সামিট’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে যেসব কর্মযজ্ঞ বৈশ্বিক শিল্পের দরবারে হাজির হয়েছে- অন্যমাত্রায় তার মধ্যে অন্যতম ‘ঢাকা আর্ট সামিট’। ইতোমধ্যে এই প্রদর্শনী দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিল্পোৎসব হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছে।


প্রথম বারের মতো ‘বন্যা’কে থিম করে শুরু হয়েছে ৯ দিনের ঢাকা আর্ট সামিটের ষষ্ঠ আসর। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন দেশ-বিদেশের ১৬০ জনেরও বেশি শিল্পী। এবারের আসরে গুরুত্ব পাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, লৈঙ্গিক সম্পর্ক, বিভিন্ন প্রজন্মের বোঝাপড়া ও নানা সম্প্রদায়ের জীবনাচরণের মতো বিষয়গুলো।


ঢাকা আর্ট সামিট-২০২৩-এ এবারের প্রতিপাদ্য ‘বন্যা’কে ঘিরে প্রদর্শনীটি নানাভাবে সাজানো হয়েছে। বন্যা এ দেশের জন্য দুর্যোগ যেমন একই সঙ্গে আশীর্বাদও। কারণ বন্যার কারণেই আমাদের জমি উর্বর থাকে। আয়োজনে তাই উঠে এসেছে যে নদীমাতৃক বাংলাদেশে ‘বন্যা’ শব্দরূপটি কেবল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয় বরং এর চেয়ে বেশি কিছু। এবারে ঢাকা আর্ট সামিটে ‘বন্যা’কে উপস্থাপন করা হয়েছে ভিন্নরূপে; যে প্রশ্ন তোলে গতানুগতিক চিন্তাধারার বিরুদ্ধে—আবশ্যকতা ও অনাবশ্যকতা, পুনর্নির্মাণ ও দুর্যোগ, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক, নারী ও পুরুষ বিষয়ক ধারণা নিয়ে।


করোনা মহামারির জন্য তিন বছর পর শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্রাঙ্গণ এবং গ্যালারিতে ‘সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ঢাকা আর্ট সামিটের ষষ্ঠ আসরের উদ্বোধন হয়।


সামিটে উপস্থাপিত শিল্পকর্ম এবং চিন্তাধারা একজন ব্যক্তিকে স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি সৃজনশীল চিন্তা করতে ও সহযোগিতামূলক সমাধানের সঙ্গে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে, এমনটা মনে করছেন প্রদর্শনী সংশ্লিষ্টরা।


চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীর বিখ্যাত চরিত্র ‘টোকাই’কে গ্যালারি একটি দেয়ালে প্রদর্শন করা হয়েছে। টোকাই চরিত্রটিকে বরাবরই সমসাময়িক প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এবার শিল্পী ‘টোকাই’ চরিত্রকে দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আহ্বান জানাচ্ছেন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতার আহ্বান জানানো হচ্ছে।


প্রদর্শনীতে ‘সংকটপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলিকে’ নিয়ে ব্যঙ্গ-কৌতুক ও অঙ্গভঙ্গি করে মতামত প্রকাশ করেন ‘ওগুত’ নামে এক শিল্পী। শিল্প জগতের বাইরের লোকদের সাথে মেলামেশা করেন তিনি। সমাজের সামষ্টিক উপলব্ধিতে পরিবর্তন ঘটনোর প্রচেষ্টা করেন এই শিল্পী। শিল্পকলার সাউথ প্লাজায় এবারের ঢাকা আর্ট সামিটে এই শিল্পী বাঁশের তৈরি রণপা দিয়ে এক প্রতিবাদী পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শন করেন।


এই রণপায়ে লাগানো রয়েছে প্রতিবাদী কিছু ব্যানার, যেখানে বাংলাদেশে দুষ্প্রাপ্য কিছু পণ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। এই পণ্যগুলি হলো—চেরি ব্লসম, অ্যাভাকাডো, ব্লু-বেরি, কিউই ইত্যাদি।


শিল্পী ওগুতের মতে, এই ভারসাম্যমূলক কাজটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে, আমরা যে এই দুনিয়ায় পরিশ্রম করে নিজেদের নিঃশেষ করে চলেছি, সেই আমরা এইখান থেকে কী আহরণ করতে পারি? বাংলাদেশিদের সাথে ভারতীয়রাও প্রায় একইরকম জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের ক্রমবর্ধমান জলস্তরকে মোকাবিলার জন্য এই রণপা হতে পারে তাদের জীবন যাপনের সহায়, অস্থিতিশীল মাটিতে হাঁটার নতুন উপায়।


প্রদর্শনীতে তৃতীয় তলায় এক গ্যালারিতে বেতের তৈরি কচ্ছপ এবং তার ওপর ঝুলানো আছে বিভিন্ন জামদানির কারুশিল্প। এখানে শিল্পী শাওন আকন্দ কচ্ছপকে ধীরতার প্রতীক করে প্রদর্শন করেছেন তার এই অনন্য শিল্পকর্ম।


এই শিল্পীর মতে কিছু সাংস্কৃতিক অনুশীলনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ধীরগতি প্রয়োজন, যা যান্ত্রিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গতির বাইরে। তিনি ঐতিহ্যবাহী জামদানি তাঁতিদের সাথে কাজ করেছন, তার চিত্রকর্মে কচ্ছপের মোটিফকে একটি বোনা স্থাপনায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে। তিনি তার সৃজনশীল কাজে বাংলাদেশি কারিগরদের ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্র প্রসারিত করার বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করেছেন।


ঢাকা আর্ট সামিটের যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। এখন পর্যন্ত পাঁচবার সফলভাবে এই প্রদর্শনী হয়েছে। ৯ দিনব্যাপী এই বর্ণাঢ্য আয়োজন চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই প্রদর্শনী।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com