জয়নুল উৎসবে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে চারুকলা প্রাঙ্গণ
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:২৮
জয়নুল উৎসবে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে চারুকলা প্রাঙ্গণ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাঙ্গণ শিল্পী, শিল্পানুরাগী ও নগরের সাধারণ মানুষের সমাগমে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।


দেশের আধুনিক শিল্পকলা চর্চার পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী আর তাঁরই হাতে গড়া শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠানটির ৭৫ বছরও পূর্তি হচ্ছে এবার।


সে উপলক্ষেই তিন দিন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এখানে চলছে জয়নুল উৎসব।


৩০ ডিসেম্বর, শনিবার ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে চারু ও কারুপণ্যের মেলা। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিল্পকর্মের পসরা সাজিয়েছেন বারান্দায়। এ ছাড়া জয়নুল গ্যালারির দুটি অংশে আছে শিক্ষক ও বিশিষ্ট শিল্পীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী।


জয়নুল উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কারুপণ্যের মেলা হচ্ছে। মৌলভীবাজারের শীতলপাটি, ধামরাইয়ের ধাতবশিল্প, সোনারগাঁর কাঠের পুতুল ও পাখা, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, নওগাঁর চিত্রিত সরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নকশিকাঁথা, সিলেটের মণিপুরি তাঁতবস্ত্র, কিশোরগঞ্জের মাটির পুতুল—এমন কারুপণ্যের সম্ভার রয়েছে মেলায়।


শনিবার বিকেলের পর থেকে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল প্রচুর। কেনাকাটাও জমেছিল বেশ। আগামীকাল রোববারও সারা দিন মেলা চলবে।


জয়নুল স্মারক বক্তৃতা ছিল আজ বেলা ১১টায় চারুকলার ওসমান জামাল মিলনায়তনে। ‘আমাদের দৃশ্যকলায় আধুনিকতা বিনির্মাণ প্রক্রিয়া: উপনিবেশ-জাতিভাবনা-বিশ্বায়নের অভিঘাত ও আত্মপরিচয়ের যাত্রাপথ’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দিয়েছেন শিল্পী ও শিল্পসমালোচক অধ্যাপক আবুল মনসুর।


স্মারক বক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল বার্‌ক্‌ আলভী। তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক লালারুখ সেলিম। সঞ্চালনা করেন নাসিমা হক।


অধ্যাপক আবুল মনসুর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার সঙ্গে উপনিবেশবাদ, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন, সৃজনে চিন্তনে উপনিবেশের প্রভাব, চারুকলার চর্চা এসব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। বক্তব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত মানচিত্র, বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিকৃতি, বই, শিল্প উপকরণ, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য এমন হরেক রকম ছবি দেখিয়েছেন মঞ্চের বড় পর্দায়। ফলে তথ্যবহুল উপস্থাপনা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল।


ভারতের আধুনিক শিল্পকলা চর্চার ও বাংলাদেশে শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের অবদান তুলে ধরে অধ্যাপক আবুল মনসুর বলেন, জয়নুল আবেদিন তাঁর নিজের শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে সমাজ সচেতনতামূলক শিল্পকর্মে ব্রতী হয়েছেন। একটা নতুন অনুভূতিকে তিনি শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছিলেন। জয়নুল আবেদিনের আগে নন্দলাল বসু বা রামকিংকর বেজ তাঁদের শিল্পকলায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা শিল্পকর্মে তুলে এনেছেন। কিন্তু শিল্পাচার্য সমকালীন বাস্তব ঘটনা ও মানুষের অস্তিত্বের সংকট, তাদের প্রতিবাদী ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর কাজে।


আবুল মনসুর বলেন, বিপন্ন ও নিগৃহীত মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা ছিল শিল্পাচার্যের মনে। তাঁদের তিনি অনন্য শৈল্পিক রীতিতে তুলে ধরেছেন। অপর দিকে বাংলার লোকঐতিহ্য, প্রকৃতি এসবের প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। এগুলোও বিশেষভাবে এসেছে তাঁর কাজে। সর্বোপরি তিনি তাঁর সহযোগী কামরুল হাসান, সফিউদ্দীন আহমেদ, এস এম সুলতানদের নিয়ে এখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চারুকলা শিক্ষার উদ্যোগ নেন।


চারুকলার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী সেমিনারমালা শুরু হয়েছে শনিবার। বিকেলে ওসমান জামাল মিলনায়তনে ‘শিল্পশিক্ষা: বৈচিত্র্যের প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গবেষক সম্পূর্ণা চক্রবর্তী। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।


অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, আগামী এক বছর শিল্পকলার বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার হবে। অন্তত তিন মাস অন্তর একটি করে সেমিনার করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com