শিরোনাম
গ্যাজেট থেকে শিশুদের সরিয়ে রাখতে...
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:০৬
গ্যাজেট থেকে শিশুদের সরিয়ে রাখতে...
বিবার্তা প্রযুক্তি
প্রিন্ট অ-অ+

বর্তমানে মা-বাবাদের বড় দুশ্চিন্তা হলো, তাদের ছেলেমেয়েরা খুব বেশি মোবাইল ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটার ব্যবহারে আসক্ত। সন্তানের প্রযুক্তি ব্যবহারের অভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনার ক্ষেত্রে মা-বাবাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলে এক সাম্প্রতিক জরিপ উঠে এসেছে।


ইউরোপের সাত হাজার মা-বাবার ওপর জরিপ করে দেখা গেছে, তাদের অন্তত ৪৩ শতাংশ মনে করেন এসব ব্যবহারের কারণে তাদের সন্তানদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে।


আবার শতকরা ৩৮ ভাগের আশংকা, এসব ফোন বা ট্যাবলেট শিশুদের সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতায় প্রভাব ফেলছে। আর ৩২ শতাংশ শঙ্কিত এসব কারণে বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে।


কিন্তু অনেকেই এটাও বলছেন, মা-বাবা নিজেরাই অনেক ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্তানদের জন্যে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।


ইন্টারনেট ভিত্তিক নিরাপত্তা সংস্থা নর্টনের চালানো এই জরিপে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, পাঁচ থেকে ১৬ বছরের ছেলে-মেয়ে ও তাদের মা-বাবা গ্যাজেটের ব্যবহার কতটা করে এবং কতটা সময় কাটায় গ্যাজেট নিয়ে।


গবেষণার ওপর ভিত্তি করে পাওয়া ফলাফলে দেখা গেছে, শিশুরা মিষ্টির চাইতেও এইসব গ্যাজেটের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করে। ব্রিটিশ শিশুরা বাইরে খেলাধুলার চাইতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করে।


দেশটির প্রায় এক চতুর্থাংশ শিশু অর্থাৎ ২৩ শিশু ইন্টারনেটে অনলাইনে থাকে, যা কিনা তাদের মা-বাবাদের চাইতে বেশি।


অভিভাবকরা কি করতে পারেন


- বাসায় নিয়ম চালু করে সময় বেধে দিতে হবে যে, শিশুরা কতটা সময় মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার দেখতে পারবে।


- অনলাইন বা ইন্টারনেটে শিশুরা কি কি দেখতে পারবে সে বিষয় সম্পর্কে তাদেরকে বোঝাতে হবে।


- অনলাইন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে তাদের উৎসাহ দিতে হবে।


- শিশুদের শেখাতে হবে কোনো কিছুতে ক্লিক করার আগে যেন তারা ভেবে দেখে যে সে কী দেখতে যাচ্ছে।


- অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত বিষয় দেখায় সীমাবদ্ধতা আনতে প্রযুক্তিগত কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।


- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ও ভিডিও পোস্ট করার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা। আর সন্তানের জন্যে এ ব্যাপারে ভালো নিজেকে ভালো উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।


গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ব্রিটিশ শিশু দিনে গড়ে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় কাটায় এসব স্ক্রিনে।


নর্টন ইউরোপের জেনারেল ম্যানেজার সিক স বলেন, আধুনিক সময়ে সন্তান লালন-পালন এত সহজ নয়। শিশুরা ঠিক মতো শাকসবজি খেল কিনা, সময়মতো ঘুমতে গেল কিনা কিংবা ঠিকঠাক স্কুলের পড়া তৈরি করলো কিনা এসব দেখাই ছিল এক সময়ে মা-বাবার কাজ। আর এখন প্রযুক্তিগত দিকে তদারকিটা হয়েছে এ সময়ের পিতামাতাদের কাজের অতিরিক্ত একটি বিষয়।


তিনি বলেন, কিছু কিছু মা-বাবার ধারণা অবশ্য ভিন্ন। প্রযুক্তি কিভাবে তাদের সন্তানদের উপকার করছে সে বিষয়গুলোকেই তারা বড় করে দেখতে চায়। যেমন, প্রায় ৬০ শতাংশের মত যে প্রযুক্তি তাদের ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন বিষয় শিখতে সহায়তা করেছে। আবার শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগের ধারনা এটি তাদের সন্তানদের আনন্দে রাখছে।


জরিপে দেখা গেছে, নয় শতাংশ মা-বাবা এসব প্রযুক্তিনির্ভর গ্যাজেট ব্যবহারে সন্তানদের জন্যে কোনো নিয়মকানুন নির্ধারণ করেনি এবং ৬৫ শতাংশ শিশুদের তাদের শোবার ঘরে এসব ব্যবহার করতে দেয়।


শতকরা ৪৯ জন প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা জানতো না যে সেটি কিভাবে করতে হয়। জরিপে অংশ নেয়া মা-বাবা ৪৩ শতাংশ দুঃখ করে বলেন, শিশুদের জন্যে তারা যে নিয়ম করেছে তা থেকে তারা দূরে থাকে।


সিক স বলেন, আমরা নিজেরা কতটা সময় অনলাইনে কাটাই এবং কতটা সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি, এটা বিবেচনা করেই সন্তানদের জন্যে উদাহরণ নিজেদেরই সৃষ্টি করতে হবে। জরিপে অংশ নেয়া অন্তত ৫৮ শতাংশ মা-বাবা এখন ‘টেক ফ্রি’ সময় বা দিন কাটায় যখন পরিবারের সবাই তাদের গ্যাজেটস দূরে সরিয়ে রাখে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com