শিরোনাম
কম খরচে সুখ কিনতে চান? তার ১৪ উপায়
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৩
কম খরচে সুখ কিনতে চান? তার ১৪ উপায়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গায়ক গেয়েছেন - ''সবাই তো সুখী হতে চায়...''। কিন্তু সবাই কি সুখী হতে পারে? কেন পারে না - তার অনেক কারণের একটি হলো, তারা সুখী হওয়ার পথটিই চেনে না।


তাহলে কি সুখেরও ঠিকানা আছে? আসুন না, একটুখানি খুঁজে দেখা যাক! এমনও তো হতে পারে যে লাখ টাকা খরচ করেও যা মেলে না, তা-ই হয়তো মিলবে বাজেটের ভেতরে থেকেই।
শরীর ও মনের সুখ-শান্তির জন্য বহু টাকা খরচ করে ইয়োগা ক্লাস, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট, ব্যয়বহুল স্পা অথবা স্বপ্নের দেশে লম্বা অবকাশ-যাপন - কোনোটাই কার্যকর না-ও হতে পারে। আবার নিত্যদিনকার এমন কিছু সাদাসিধে ব্যাপার আছে যা হয়তো একজন মানুষের জীবনকে সুখী, স্বস্তিকর ও সুন্দর করে তুলতে পারে।


ঘরকে সবুজময় করে তোলা


ঘরের ভেতর গাছপালা স্ট্রেস কমিয়ে দেয় এবং সুখকে বাড়িয়ে দেয়। কিভাবে? মৌলিক যে বিষয়টি সবাই জানেন যে, গাছ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ছাড়ে, যা আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি। কিছু কিছু গাছ বায়ুকে বিশুদ্ধ করে। কারণ তারা বায়ু থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিককে টেনে নেয়।


শরীরের পানির মাত্রা ঠিক রাখা


শরীর ও মনের সু্স্থতার জন্য দারুণ কিছু করতে চাইলে দিনে বেলা প্রচুর পানি পান করতে হবে।


মানুষের শরীরের প্রধান উপাদান পানি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারীর শরীরে ৫৫ শতাংশ এবং পুরুষের শরীরে ৬০ শতাংশ কার্যক্ষমতার জন্য পানি প্রয়োজন।


সেকারণে শরীরে পর্যাপ্ত জলীয় থাকলে সুস্বাস্থ্য, শক্তির মাত্রা বাড়া এবং মনোযোগের শক্তি বাড়ে।


যদি প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে বিস্বাদ মনে হয় তাহলে তার সাথে লেবু বা শসা কিংবা আদার টুকরো মেশানো যেতে পারে।


এমনকি পানি খাওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারলে তাদের জন্য ইন্টারনেট অ্যাপসও আছে যার মাধ্যমে পানি পানের জন্য রিমাইন্ডার পাঠানো হবে।


নিজের কক্ষের নতুন সজ্জা


আমরা আমাদের ঘর-বাড়ি কিভাবে সাজাই, সেটা আমাদের মেজাজের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে, সেইসাথে কতটা ঘুমাই এবং আমাদের এনার্জি লেভেল কেমন তাতেও প্রভাব ফেলে।


যদি আপনি সেখানে নতুন রূপ দিতে চান তাহলে শোবার ঘর থেকে শুরু করুন।


মুক্ত বাতাসের জন্য জানালা খুলে দিন, যতটা সম্ভব দিনের আলো ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন।


পরিষ্কার রাখুন কাপবার্ডের সবকিছু এবং বিছানার তলা পরিচ্ছন্ন রাখুন।


বাড়িতে তুলির আঁচড়


বাড়ির দেয়ালের রং মানুষের মুড বা মন-মেজাজের ওপর দারুণভাবে প্রভাব রাখে।


সবুজ রঙ প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। এই রং ঘরের ভেতর ভারসাম্য, সমন্বয় এবং শিথিলতা এনে দিতে পারে।


নীল একটি নান্দনিক গুণসম্পন্ন রং। এটি প্রশান্তির এক অনুভূতি তৈরি করে এবং বিশ্রাম এনে দেয়। এ কারণে এই রং শোবার ঘরের জন্য শ্রেষ্ঠ। তবে লাল রং এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ তা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসকে দ্রুত করে যা হার্ট-রেট ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দয়।


পাখিদের গান


লন্ডনের বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, পাখিদের গান বা কিচির-মিচির শব্দ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।


স্বেচ্ছাসেবকদের একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের মুড রেকর্ড করে রাখতে বলা হয়েছিল। দেখা যায়, পাখির গান, গাছপালা এবং আকাশ তাদের যে মানসিক প্রশান্তি এনে দিয়েছিল কয়েক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার রেশ ছিল।


যদি আপনার পক্ষে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পড়া এবং প্রকৃতির মাঝে ডুব দেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে উপায়?


বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে সেটাও অসম্ভব নয়। পাখির কিছু গান বা শব্দ ডাউনলোড করে ফোনে সেভ করে নিয়ে হেড-ফোন দিয়ে শুনুন। আর চোখ বন্ধ করে ভাবুন প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।


পোষা বিড়াল


গবেষণা বলছে, বিড়াল পোষার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।


চার হাজারের বেশি আমেরিকান নাগরিকের ওপর দশ বছর ধরে চালানো গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার স্ট্রোক ইন্সটিটিউট ইন মিনেপলিস-এর গবেষকরা দেখেছেন যে, বিড়াল পুষেছেন এমন ব্যক্তিদের অন্যদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকে কিংবা স্ট্রোকে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ কম ছিল।


হাসতে থাকুন


নির্মল হাসি আমাদের পেশীগুলোকে আলগা করে, রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে, নাইট্রিক অক্সাইড বের করে দেয়, যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।


হাসি স্ট্রেস হরমোন কমায় এবং শরীরের এন্ডোরফিন শিথিল করে, যার ফলে আমাদের শরীর আরাম পায় এবং এটা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।


এটা ঠিক যে, হাসি সত্যিকারভাবেই শ্রেষ্ঠ ওষুধ।


যেসব বন্ধুদের সঙ্গ আনন্দ দেয় তাদের সাথে সময় কাটানো, কমেডি দেখা ইত্যাদি হতে পারে সুন্দর সময় কাটানোর উৎস। আর ততটা সামাজিক না হলে ভিডিও দেখা যেতে পারে।


কাজের ক্ষেত্রে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি


স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ যেমন- সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও আইসল্যান্ড - বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর অন্যতম।


কাজের ক্ষেত্রে সুখ ও উন্নতির জন্য বেশকিছু কৌশল অনুসরণ করে থাকে সেখানকার মানুষেরা।


সুইডেনে একটি রীতি প্রচলিত আছে যা ফিকা নামে পরিচিত, যার ফলে প্রতিদিন কফি ও কেক খাওয়ার জন্য বিরতি নিতে হয় যখন কলিগরা একত্র হন। তারা হয়তো কফির পাত্র নিয়ে বসে এবং সাথে থাকে কিছু ঘরে বানানো খাবার। কর্মক্ষেত্রে ফিকা একধরনের অবশ্য পালনীয় রীতি।


পর্যাপ্ত ঘুম


সুস্থ এবং ভালো থাকার জন্য খাবার ও ব্যায়ামের মতো মানসিক ও শারীরিক বিশ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ।


ঘুম কম হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। স্ট্রেস হরমোন লেভেল বেড়ে যায়, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দেখা যায়।


আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের শরীরের ভেতর নানা কাজ চলে।


ভালো ঘুমের জন্য পরিশ্রম দরকার। শোবার ঘরকে পরিষ্কার ও নীরব রাখা দরকার, রাতে দেরি করে খাওয়াও বন্ধ করতে হবে। সেইসাথে সব ধরনের ডিভাইসের আলো যাতে না থাকতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ফোন বা ট্যাবলেট দিয়ে বেরনো সামান্য নীল আলোও আপনার ঘুম চোখ থেকে কেড়ে নিতে পারে।


দিনের শেষভাগে ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় বাদ দিতে হবে-এটাই তার সময়।


এক বিজ্ঞানীর সাজেশন


বিজ্ঞানে এটা প্রমাণ হয়েছে যে সুখী হতে হলে সচেতন প্রচেষ্টার প্রয়োজন - বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান এবং কগনিটিভ বিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক লরি স্যান্টোস।
তিনি হয়তো জানেন যে সুখী হতে হলে কি করতে হবে। কারণ, তিনি পড়ান 'মনোবিজ্ঞান ও সুন্দর জীবন' বিষয়ে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১৬ বছরের ইতিহাসে তার ক্লাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১২,০০। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।


তিনি বলেন, ''সুখী হওয়া বিষয়টি এমন নয় যে এটা আপনাআপনি হয়ে যায়। সুখী হওয়ার জন্যে আপনাকে এটা চর্চ্চা করতে হবে। এটা অনেকটা ভালো সঙ্গীতশিল্পী বা ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠার মতোই, সাফল্যের জন্যে তাদেরকে যেমন চর্চ্চা করতে হয় সুখী হওয়ার জন্যও আপনাকে সেটা করতে হবে।"


কিভাবে সুখী হতে হবে তার কিছু কলাকৌশল অধ্যাপক লরি স্যান্টোস শিক্ষার্থীদের শেখান সপ্তাহে দুদিন।


আপনিও সুখী হতে চান, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি তো আর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক লরি স্যান্টোসের ক্লাসে ভর্তি হতে পারছেন ন! তাই আপনার জন্য এখান তার দেওয়া পাঁচটি টিপস তুলে ধরা হলো। চেষ্টা করে দেখতে পারেন।


১. কৃতজ্ঞতার একটি তালিকা তৈরি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস তার শিক্ষার্থীদের বলেন, প্রত্যেক রাতে তারা যাদের কাছে বা যেসব জিনিসের কাছে কৃতজ্ঞ তার একটি তালিকা তৈরি করতে। তিনি বলেন, "এটা শুনতে খুব সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা দেখেছি যেসব শিক্ষার্থী নিয়মিত এটা চর্চ্চা করেন তাদের সুখী মনে হয়।''


২. আরো বেশি করে ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চেষ্টা করুন
অধ্যাপক লরি স্যান্টোসের মতে,এই কাজটা করা সবচেয়ে সহজ বলে মনে হয় কিন্তু আসলে এই কাজটা করা খুব কঠিন।


এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রতি রাতে আট ঘন্টা করে ঘুমানো। এবং এই কাজটা করতে হবে এক সপ্তাহ ধরে।


অধ্যাপক স্যান্টোস বলেন, "আমরা সবাই জানি যে বেশি ঘুমাতে পারলে এবং নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারলে বিষণ্নতায় ভোগার সম্ভাবনা কম থাকে। এর ফলে ইতিবাচক মনোভাবও তৈরি হয়।"


৩. ধ্যান করুন
আপনার কাজ হবে প্রত্যেকদিন ১০ মিনিট করে মেডিটেশন বা ধ্যান করা।


অধ্যাপক স্যান্টোস নিজেও যখন ছাত্রী ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত ধ্যান করতেন এবং দেখেছেন সেটা করলে মন ভালো থাকে।


এখন তিনি একজন অধ্যাপক, এখন তিনি তার শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন কিভাবে ধ্যান করতে হয়। তিনি বলেন, এধরনের কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হয় যা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।


৪. পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আরো সময় কাটান
অধ্যাপক স্যান্টোস বলেছেন, গবেষণায় পরিষ্কার একটি বিষয় দেখা গেছে, পরিবার ও বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটালে আপনি সুখী হবেন।


আপনার যদি ভালো বন্ধুত্ব থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগ থাকে এবং তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয় তখন তারা উল্লেখযোগ্য রকমের ভালো বোধ করেন। এজন্যে যে খুব বেশি কিছু করতে হবে তা নয়, স্যান্টোস বলেন, "শুধু এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি এই সময়ে বেঁচে আছে, মনে করুন যে আপনারা একসাথে বর্তমান সময় কাটাচ্ছেন এবং আপনি কিভাবে আপনার সময় কাটাচ্ছেন সেবিষয়ে একটু সচেতন থাকুন।"


তিনি বলেন, আপনার সুখী হওয়ার জন্যে সময় সম্পর্কে আপনার ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কতো অর্থ আছে সেটা দিয়ে আমরা প্রায়শই আমাদের সম্পদের হিসাব করি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পদ হচ্ছে আসলে আমাদের হাতে কতো সময় আছে সেটার সাথে সম্পর্কিত।


৫. সোশাল মিডিয়ার পরিবর্তে বাস্তবে যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন
অধ্যাপক স্যান্টোস মনে করেন, সোশাল মিডিয়া থেকে সুখের বিষয়ে মিথ্যা যেসব ধারণা পাওয়া যায় সেসবে ভেসে যাওয়া উচিত নয়।


তিনি বলেন, সর্বশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা, যারা এটা খুব বেশি ব্যবহার করেন না তাদের চাইতে কম সুখী।


তো, এখন তো সব জানা হয়ে গেলো।


আপনি যদি সত্যিই জীবনে সুখী হতে চান, তাহলে কৃতজ্ঞ হতে শুরু করুন, পরিবারের সাথে আরো বেশি সময় কাটান, বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করুন, দিনের একটা সময়ে কিছুক্ষণের জন্যে নিজেকে সবকিছু থেকে সরিয়ে ধ্যানে মগ্ন হোন, সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে সরে এসে আরো একট বেশি ঘুমাতে চেষ্টা করুন।


ইয়েলের শিক্ষার্থীদের জন্যে যদি এটা কাজ করে, তাহলে আপনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয় কাজ করবে।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com