
বাঙালীর প্রিয় মাছ ইলিশ। ভরা বর্ষায় ইলিশ কেনেননি, এমন বাঙালী বিরল। কিন্তু কখনো-কখনো এমনও হয় যে বেছেবুছে মাছটা কিনলাম, কিন্তু বাড়িতে এসে রান্না করার পর সেই স্বাদটা পাওয়া গেল না। ''কেমন যেন, কি একটা নেই'' এমন মনে হতে থাকল। হাতে যেন খাবার পর তেল লেগে নেই, ঝোল বা ঝালটার স্বাদ তেমন করে খুলল না তো।
কেন এমন হয়? আসুন, জেনে নিই।
বর্ষাকালে যখন পূবালী হাওয়া বয় আর প্রচুর বৃষ্টির জল নদী হয়ে সমুদ্রের মোহনার দিকে যায়, তখন ইলিশ মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে নদীর মোহনা বেয়ে উজানপথে চলতে থাকে।
ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। স্যামন বংশের। সারাবছর সমুদ্রে থাকে আর এইসময়, নদীতে যখন মিষ্টি জলের আধিক্য, তখন বংশবিস্তার করার জন্য নদীতে চলে আসে। নদীর উজানে অর্থাৎ স্রোতের বিপরীত দিকে চলতে থাকে মাছগুলো। এইসময় এদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা হয় এই স্রোতের বিরুদ্ধে যাওয়ার শক্তির যোগান দেয়ার জন্য আর সর্বোপরি প্রজনন ও বংশবিস্তারের তাগিদে। এই ফ্যাট বা তেলের জন্যই ইলিশের স্বাদ হয়। এই তেলের বাড়া-কমাতেই স্বাদেরও হেরফের হয়। এই চর্বি আবার হার্টের জন্য উপকারী।
ইলিশ মাছ যখন গভীর সাগরে থাকে তখন সেই মাছ খেতে স্বাদু হয় না। কারণ, তখন সেই মাছে এই তেলটাই থাকে না।
গৌরচন্দ্রিকা তো অনেক হলো। এবার আসল প্রশ্ন, ভালো জাতের ইলিশ মাছ চিনবেন কি করে?
১. বাজারে গিয়ে মাছের ঝুড়িটার দিকে ভালো করে তাকান। প্রতিটা মাছ ভালো করে দেখুন। সম্ভব হলে হাত দিয়ে ওপর-নিচ করে বরফ সরিয়ে ভালো করে তাকান প্রতিটা মাছের দিকে।
২. মাছকে হতে হবে নিটোল, নিঁখুত।
৩. মাছের আকার হবে মাকু বা পটলের মতো অর্থাৎ মাথা আর লেজ সরু আর পেটটা মোটা হতে হবে।
৪. মাথাটা হবে ছোট্ট আর মুখটা হবে ছুঁচালো।
৫. লেজের একটু উপর থেকেই মাছটা গোল হতে শুরু করবে।
৬. রূপোর মত ঝকঝক করবে গায়ের রঙ। কানকোর কাছে সোনালি আভা দেখা যাবে।
৭. চোখগুলো চকচক করবে, ঘোলাটে হবে না।
৮. পেটের দিকটা ধনুকের মতো বাঁকা হতে হবে।
৯. পেটে ডিম থাকলে ফুলে থাকবে পেটটা। পেট টিপলেই পায়ুছিদ্র দিয়ে ডিম বেরিয়ে আসবে। (মাছের পেটে ডিমটাও উপাদেয় খাবার কিন্তু ডিম হলে মাছের স্বাদ একটু কমে যায়।)
১০. মাছটা তুলে দেখুন, ঘাড়টা মোটা কিনা? হাতে তুললেই বুঝতে পারবেন একই সাইজের একই ওজনের কোন মাছটার ঘাড় সরু, কোনটার মোটা। মোটা ঘাড় দেখে কিনুন।
১১. ভালো জাতের ইলিশ রূপার মতো ঝকঝক করবে।
১২. কখনই ছোট ইলিশ বা জাটকা কিনবেন না। ওগুলোর স্বাদ হয় না। আর ইলিশ ছোট অবস্থাতেই ধরে ফেললে, বড় হওয়ার সুযোগ না দিলে, তারা বংশবিস্তার করবে কি করে? তাই ছোট ইলিশ এড়িয়ে যান।
এবারে জেনে নিন কি কিভাবে মাছওয়ালা আপনাকে ঠকাতে পারে।
১. মাছটা কোল্ডস্টোর থেকে আনা, বরফে থেকে থেকে শক্ত হয়ে গেছে। মনে হবে টাটকা। কিন্তু গায়ের রঙের ওই জৌলুস কিছুতেই থাকবে না। চোখটাও ঘোলাটে হয়ে যাবে।
২. কয়েকদিনের বাসি মাছ। একটু নরম হয়ে গেছে। কিন্তু আপনাকে মাছওয়ালা বোঝাবে, তেলের জন্য এই নরম ভাব। দারুণ স্বাদ হবে। বিশ্বাস করেছেন কি মরেছেন।
৩. উপরের চেনার উপায় আর এই ঠকে যাওয়ার উপায় শুনেও যদি বুঝতে না পারেন তাহলে মাছটা কাটতে বলুন। টাটকা মাছ কাটলে ভেতরের মাংসটা সাদা ধপধপ করবে। আর বাসি হলে ভেতরটা লালচে রঙের হয়ে যাবে। কাটানোর আগে বলে নিন। ভেতরটা লাল হলে নেবেন না। দেখবেন ঠিকঠাক মাছ বেছে কেটে দেবে ওরাই। বুঝে যাবে, আপনি হীরে চেনা মানুষ।
ইলিশের মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। এই মাছ খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে, মস্তিস্কের গঠন ভালো হয়, রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাক, বাত বা আর্থারাইটিস কম হয়। ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারও কম হয়। ত্বক টানটান থাকে, ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা কম হয়। চোখের দৃষ্টি উন্নত হয়।
একই অঙ্গে কত রূপ ভেবেছেন একবার? ভাবুন আর জমিয়ে ইলিশ খান। তবে যে পরিমাণ দূষণ আজকালকার নদীগুলোতে, ইলিশ মাছ আর নদীতে তেমন কোথায়? খুব বেশি ইলিশ খেলে তাই পেটখারাপ অনিবার্য।
অথঃ ইলিশ বৃত্তান্ত সমাপ্ত।
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]