শিরোনাম
সন্তানের মেধা বিকাশ নিয়ে শঙ্কায় থাকেন বাবা-মা
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৮, ০৪:০৮
সন্তানের মেধা বিকাশ নিয়ে শঙ্কায় থাকেন বাবা-মা
মডেল: সাবিলা সারলিজ সাজ্জাদ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

এই পৃথিবিতে সন্তানকে নিয়ে যারা সব চেয়ে বেশি চিন্তা করেন, তারা হলেন বাবা-মা। আর বাবা-মার এই চিন্তা লেগে থাকে কিভাবে তার শিশুর মেধা ও বিকাশ বৃদ্ধি হবে। শিশুর কিছু নিয়মিত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে থাকে।


সঠিক খাবার শিশুর মস্তিষ্ক ভালোভাবে বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। তবে এর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য জরুরি। জানেন কি শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি। অনেক বাবা-মা হয় তো জানেন না শিশুর মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে কোনো তিনটি জিনিস জানা জরুরি।
আপনি হয় তো জানেন শিশুর শারীরিক বিকাশের জন্য ঠিক কতটা পুষ্টির প্রয়োজন। কিন্তু আপনি কি এটি জানেন যে, কোন শিশুর প্রাথমিক বছরগুলোতে, তার মস্তিষ্কের সব থেকে দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং সেই বিকাশের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পুষ্টির।


মস্তিষ্কের যে অংশটুকু শারীরিক নড়াচড়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেটাই সবচেয়ে দ্রুত বাড়ে। আর স্মৃতির সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অংশ বাড়ে ধীরে ধীরে। এছাড়া ছেলে শিশুর মস্তিষ্ক মেয়ে শিশুর মস্তিষ্কের তুলনায় দ্রুতগতিতে বাড়ে।


এদিকে, গর্ভবতী অবস্থায় হালকা ব্যায়াম সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশে ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী অবস্থায় সপ্তাহে তিনবার ২০ মিনিটের হালকা ব্যায়াম সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারপরও রয়েছে আরো কিছু করণীয়।


গর্ভাবস্থায় ধূমপান করবেন না। কেননা এটি শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত করে।


শিশুকে অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়ান। বুকের দুধ নবজাতকের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তেমনি মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ভালো করতে সাহায্য করে।


শিশুকে সংগীতের সঙ্গে পরিচিত করুন। এতে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ভালো হয়, শেখার ক্ষমতা বাড়ে।


টিভি দেখার সময় কমিয়ে দিন। বেশি টিভি দেখলে সৃজনশীল কাজ করার পরিমাণ কমে যায়। মস্তিষ্কের উন্নতি হয় না।


শিশুদের মজার মজার গল্পের বই পড়ে শোনান।


শিশুকে ক্যাফেইন (চা, কফি) জাতীয় খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। বেশি মাত্রায় এসব খাওয়া মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত করে।


শিশুকে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করান। এতে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের সঞ্চালন ভালো হবে।


সৃজনশীল খেলনা দিয়ে শিশুকে খেলতে দিন।


শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ান। আপেল, তরমুজ, কমলা, কালো চকোলেট, ব্রকলি ইত্যাদি।


শিশুর মস্তিষ্ক ভালো রাখতে ব্যায়াম করান।


প্রাথমিক বছরগুলোতে মস্তিষ্কের বিকাশ


২-৬ বছর বয়সের মধ্যে শিশুদের মস্তিষ্কের বহুল মাত্রায় বিকাশ ঘটে। পুষ্টিবিজ্ঞান বলেছে, মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে যায় ৯০ শতাংশ।


এই সময়ের মধ্যে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০ লাখ নিউরাল সংযোগ হয়। দক্ষ কার্যকারিতার জন্য, একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সংযোগকারিতা হ্রাস পায়, যার নাম প্রাণিং।


এটিই হল সেই সময়, যখন মস্তিষ্ক তার ভেতরের জটিল নেটওয়ার্ক সংযোগগুলোকে পুনর্বিন্যাস করে, যা পরবর্তী জীবনে কোনো মানুষের উপলব্ধি, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং সামাজিক দক্ষতা ইত্যাদি তৈরি হওয়ার নেপথ্যে বিশেষভাবে সাহায্য করে।


এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট আকর্ষণীয়ও বটে। প্রথমে দেখা ও শোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলোর জন্য সংযোগ এবং সংবেদনশীল উপায়গুলো বিকশিত হয়। এর পরবর্তী ধাপে শিশুদের ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানের বিকাশ ঘটে।


এই সময়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথাবার্তা এবং তাদের শিশুদের যত্ন নেয়াটা ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি শিশুদের মস্তিষ্কের সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি সুনিশ্চিত করা


শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য শিশুর ঠিক কতটা পুষ্টি প্রয়োজন, তার দিকে সর্বদাই খেয়াল রাখতে চান বাবা-মায়েরা। কিন্তু কীভাবে তারা বাচ্চাদের মস্তিষ্কের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রদান করতে পারেন?


নিচে এমন কিছু অপরিহার্য পুষ্টির কথা বলা হল, যা বাচ্চাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে...


ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড


মূল নার্ভাস সিস্টেমের অন্তর্বর্তী ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা কুঠুরিগুলোর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এ ধরনের পুষ্টিগ্রহণ যে কোনো শিশুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য।


ডিএইচএ


ডিএইচএর অভাবের ফলে শিশুদের বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন মানসিক চাপ, আবেগপ্রবণতা ইত্যাদি। কিন্তু শিশুদের রোজকার ডায়েটে খুব কম পরিমাণেই ডিএইচএ পাওয়া যায়।


ক্লোরিন


স্মৃতিশক্তি তৈরি এবং তা ধারণ প্রক্রিয়ায় সহায়তার মাধ্যমে ক্লোরিন বিশেষভাবে শিশুদের মস্তিষ্কের সামগ্রিক বিকাশে সাহায্য করে।


আয়রন


রক্তে অক্সিজেনের বাহক হিসেবে আয়রন যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সবারই জানা। শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় আয়রনের অভাব নার্ভাস সিস্টেমের মধ্যে প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। শিশুদের শেখার বা শিখতে চাওয়ার অভ্যাসকে ধরে রাখার জন্য আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


ভিটামিন-বি


ভিটামিন-বি কমপ্লেক্সের মধ্যে ৮টি ভিটামিন রয়েছে। এ ভিটামিনগুলো মস্তিষ্কের নিউরো ট্রান্সমিটার এবং শিশুদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


আয়োডিন ও জিংক নার্ভাস সিস্টেম ও সাধারণ মস্তিষ্ক বিকাশের ক্ষেত্রে আয়োডিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে স্বাদ-গন্ধের মতো সংবেদনশীল প্রক্রিয়াগুলোর বিকাশের নেপথ্যে রয়েছে জিংক।


প্রাথমিক বছরগুলোতে কোনো শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য এ পুষ্টিগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু অনেক বাবা-মায়েই জানেন না যে বাচ্চাদের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ঠিক কতটা পরিমাণে পুষ্টিগ্রহণ প্রয়োজন।


পাশাপাশি খিদে কম পাওয়ার দরুন বাচ্চারা খায়ও কম। বলাবাহুল্য, কোনো প্রাপ্তবয়স্কোর তুলনায় বাচ্চাদের তিন ভাগের এক ভাগ খিদে পায়। ফলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুলো গ্রহণ করা হয়ে পড়ে আরও কঠিন।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com