শিরোনাম
বাবা-মায়ের আচরণে প্রভাবিত হয় সন্তান
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৩
বাবা-মায়ের আচরণে প্রভাবিত হয় সন্তান
মডেল: সাবিলা শারলিজ সাজ্জাদ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বাবা-মা হলেন সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। অপরদিকে ইসলাম ধর্ম মতে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। সন্তান জন্মের পর থেকে লালন পালন পর্যন্ত এই সময়টি খুবই স্পর্শকাতর। এখানে সন্তান লালনে বাবা-মায়ের ভুল সিদ্ধান্ত বা বৈরী ও নিষ্ঠুর আচরণের শিকার অনেক সন্তানই বড় হয়ে বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাই সন্তান লালন-পালনের বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করতে হবে।


সেই বাবা-মা আর সন্তানের এমন অসহিষ্ণু আচারণ সত্যিই কাম্য নয়। গত কয়েকদিনে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যা সত্যিই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। যেমন কিছুদিন আগে গত সপ্তাহের আলোচিত ঘটনা মায়ের অসুস্থতা নিয়ে বিরক্ত হয়ে মাকে ছাঁদ ফেলে দিয়ে খুন করে শিক্ষক সন্তান। তার ভাষ্যমতে, ‘মায়ের অসুস্থতা নিয়ে বিরক্ত ছিলাম৷ বাড়িতে অশান্তিও লেগে থাকত৷ উপায় না দেখে মাকে ছাঁদ থেকে ফেলে দিই !’ এ ছাড়া মায়ের মৃত্যুর পর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলেও চালিয়ে দিতে চায় এ নরপশু। এঘটনা শুনে কয়েকজন বলেছেন, এমন সন্তানের চেয়ে সন্তানহীন থাকা অনেক ভালো।


এমন আরোও অনেক ঘটনাই আছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। ঘটনাগুলো মর্মান্তিক হলেও সবগুলো ঘটনাই বাস্তব। আর এ ঘটনাগুলো ঘটছে আমাদের আশপাশেই। আর এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে জন জীবনে। যেথানে এক বন্য পশুও তার পরিবারে কাছে নিরাপদ সেখানে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের জন্য এ ধরনের ঘটনা সত্যিই লজ্জাজনক।


বাবা-মায়ের কাছে একটি শিশু মানে একটি সুন্দর অনাগত দিনের স্বপ্ন। শিশুটি বড় হবে; লেখাপড়া শিখে মানুষ হবে; চাকরি করবে; ঘর-সংসার করবে। কতকিছু! অথচ চারপাশে তাকালে আমরা দেখি এই সন্তানই মাদকাসক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাজারো সন্তান অসামাজিক কাজে লিপ্ত। অনেকেই ভালো ঘরের সন্তান; শিক্ষিত বাবা-মায়ের সন্তান। এর জন্য অনেক কারণকেই দায়ী করলে হয় না। ঐ সময়টাকে সামলে নিতে হয় অভিভাবকদেরই। তবে সবচেয়ে বড় কারণটিকে কোনোমতেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না আর তা হলো সন্তান লালন-পালনে বাবা-মায়ের ভূমিকা।


কখনো কখনো খুব দায়িত্বশীল মা-বাবাও এ ব্যাপারে ভুল করেন। তাদের ভুলের জন্য নষ্ট হতে পারে সন্তানের জীবন। আপনার শিশুর সঙ্গে আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নিচে আলোচনা করা হলো।



মডেল: ইয়াকিন সাজ্জাদ ও সাবিলা শারলিজ সাজ্জাদ


প্রশংসা সময় বুঝে কম বা বেশি করুন


‘তুমি তোমার ময়লা কাপড়-চোপড় বালতিতে রেখেছ? বাহ কী সুন্দর! তুমি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছেলে।’ কোন কাজে কী ধরনের উৎসাহ দিতে হবে তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। অনেক সময় বাবা-মা এসব খেয়াল করেন না। এতে একটি ভালো কাজ করে শিশুটি যদি সামান্য ধন্যবাদ পর্যন্ত না পায়, মানসিকভাবে সে দুর্বল হয়ে পড়ে। আপনার শিশু কোনো ভুল করলে তার সমালোচনা না করে বরং সুন্দরভাবে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। আপনি যদি শিশুর খুঁত ধরে বেড়ান তাহলে ভবিষ্যতে নিজেকে দাঁড় করাতে সে ব্যর্থ হবে। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত প্রশংসাও শিশুর জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত প্রশংসা শিশুকে ভুল পথে চালিত করে। যতটুকু প্রশংসার প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই করবেন, বেশি কিংবা কম। কোনোটাই নয়।


মাঝেমধ্যে শিক্ষকের মতো আচরণ করুন


স্যাটেলাইটের যুগে আপনার শিশু এমন কোনো ছবি দেখতে চাইতে পারে, যা তার দেখা উচিত নয়। সে বলতে পারে তার বন্ধুরাও এসব দেখছে, তবে সে কেন দেখতে পারবে না? আপনি সরাসরি তাকে গাইড করুন। প্রথমেই যদি আপনি নতি স্বীকার করেন তার চাহিদা আরো বেড়ে যাবে এবং শিগগিরই সে নষ্ট হয়ে যাবে। যদি আপনার শিশুর বোঝার মতো বয়স হয় এবং রীতিনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করার বুদ্ধি জন্মায় তবেই তাকে যুক্তি প্রদর্শন করুন।


কখনোই উত্তেজিত হবেন না
শিশুর সঙ্গে কথা বলার সময় কখনো চিৎকার করে কথা বলবেন না। তারা যদি নিজেদের মধ্যে মারামারি করে, আপনি শান্ত অথচ দৃঢ় স্বরে তাকে বুঝিয়ে বলুন। আপনার শিশু যদি কান্না করে তাকে ধমক দেবেন না। আপনার আচরণ তার নরম মনে গেঁথে থাকে। মনে রাখবেন শিশুদের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা বললে শিশুর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।


শিশুকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলুন
আপনি নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে আপনার শিশুর মধ্যে ব্যক্তিত্ব আনুন। মুখ গোমরা করে রাখা, অন্যের সঙ্গে ঝগড়া করা, অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো প্রভৃতি বাজে অভ্যাস থেকে তাকে বিরত রাখুন। সে কোনো কাজে ভুল করলে তা ধরিয়ে দিয়ে কিভাবে সংশোধন করতে পারে তা শেখান। সমবয়সীদের সঙ্গে ‘হ্যালো’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময়, বয়স্কদের সালাম দেওয়া, ভুল করলে ‘দুঃখিত’ বলে দুঃখ প্রকাশ করা প্রভৃতি আদবকায়দা তাকে শিখিয়ে দিন। পোশাকের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে তাকে সচেতন করুন। তার শোয়া, ওঠাবসা কেমন হবে তাকে তা শেখান।


যেকোনো পছন্দনীয় কৌশল বেছে নিন
শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা যদি কিছু শেখে, দেখেই শেখে। আপনি যা করবেন আপনার শিশুও তা করার চেষ্টা করবে। আপনার শৃঙ্খলাবোধ দেখে তারাও শৃঙ্খলাপ্রিয় হয়ে উঠবে। আপনি যদি মেজাজ গরম করেন, আপনার শিশুও চেষ্টা করবে আপনার মতো হতে। তাই আপনি নিজে এমন একটি কৌশল বেছে নিন, যা থেকে আপনার শিশু নিজেকে আপনার মতো করে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে।


শাস্তি দেওয়ার কথা ভুলে যান
প্রকৃত অর্থে নিয়মানুবর্তিতা হলো শেখার বিষয়। কঠোর আচরণ বা শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে তা আদায় করা যায় না। অনেক বাবা-মা তাদের শিশুকে শাস্তি দিয়ে থাকেন, এটা মোটেই উচিত নয়। শিশুরা বুঝতে পারে না কোন কাজটি ঠিক, কোন কাজটি ঠিক নয়। আপনি তাদের শেখান। শিশুদের শাস্তি প্রদান করলে হিতে বিপরীত হয়। শিশুকে মারধর করবেন না। বিশিষ্ট মনোচিকিৎসা বিশেষজ্ঞ জেমস উইনডেল বলেন, ‘এমন কোনো ভুল নেই যার জন্য শিশুদের শাস্তি দেওয়া চলে না। কিন্তু আপনি সর্বদা আপনার শিশুর সঙ্গে সুন্দর, মানবিক ও ক্ষমাসুন্দর আচরণ করুন।’


শিশুকে যদি শাস্তি দিতেই হয়, তাকে মারধর না করে অন্যভাবে শাস্তি দিন। যেমন : আপনার শিশু যদি স্কুলে যাওয়ার সময় গাড়ি মিস করে, তাহলে সন্ধ্যায় তাকে বেশি করে হোমওয়ার্ক দিন। দেখবেন বেশি পড়াশোনার ভয়ে সে ঠিকই পরের দিন থেকে চেষ্টা করবে তাড়াতাড়ি স্কুলের বাস ধরতে।


শিশুকে খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করুন
খেলাধুলায় শরীর সতেজ থাকে। শিশুকে খেলাধুলা করতে বলুন, এতে তার আলস্য কেটে যাবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম প্রয়োজন। খেলাধুলা করা চমৎকার ব্যায়াম।


ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দিন
আপনার শিশু যদি কোনো ভালো কাজ করে, তার জন্য তাকে পুরস্কার দিন। তাকে একটি সুন্দর বই, আইসক্রিম কিংবা একটি সুন্দর পোশাক কিনে দিতে পারেন। এতে তার ভেতর উৎসাহ সৃষ্টি হবে। সে অনুপ্রেরণা পাবে কাজ করতে।


পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখান
আপনার শিশুকে কখন গোসল করতে হবে, কখন হাত-পা ধুতে হবে তা বলুন। সকালে ও রাতে দুবার তাকে দাঁত ব্রাশ করতে বলুন। নখ কাটতে বলুন, নখে যাতে ময়লা না জমে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিন। তার বাথরুমটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলুন। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা বাথরুম তৈরি করুন।


শিশুকে সহনশীল হতে সাহায্য করুন
আপনার স্কুলপড়ুয়া ছেলে আপনাকে এসে বলল, তার বন্ধু তাকে মেরেছে। আপনি সে ক্ষেত্রে বলতে পারেন, ‘তুমি নিশ্চয়ই এমন কিছু করছ যা তাকে প্ররোচিত করে তুলেছিল তোমাকে মারতে।’ আপনার শিশুকে আপনি সহনশীল হতে শেখান। সে যদি কারো সঙ্গে অসদাচরণ করে তাকে তা বোঝান। তাকে সব সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে বলুন। তার কাছ থেকে যেন অন্যরা শিখতে পারে সে ব্যাপারে তাকে জ্ঞান দিন। আপনার সমর্থন আপনার সন্তানদের শান্ত রাখবে। যখন তারা জানবে আপনি তাদের পাশেই আছেন, তারা চমৎকার অনুভূতি অনুভব করবে। প্রত্যেক বাবা-মায়েরই উচিত তাদের সন্তানের দিকে লক্ষ রাখা।


একটি শিশুকে পূর্ণভাবে গড়ে তোলার জন্য মা-বাবার ভূমিকাই প্রধান। তার হাঁটাচলা থেকে শুরু করে কথা বলা, নিয়মানুবর্তিতা, পড়াশোনা, ঘরের টুকিটাকি কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের উৎসাহ তাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। শিশুর সঙ্গে আপনি কেমন ব্যবহার করবেন? মনে রাখবেন, আপনার আচরণের ওপর নির্ভর করে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com